বিএনপির তৃণমূলে জ্বলছে আগুন

খালেদার দৃষ্টি আকর্ষণ করে পোস্টারিং

সিলেট বিএনপিতে অনেক দিন থেকে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলে আসছে। দলের বর্ষিয়ান নেতা সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমান ও সাবেক সংসদ সদস্য নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিভক্তির এ রেখা মুছে দিতে কেন্দ্র থেকে বার বার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কখনো সাময়িক সুফল মিলেছে, আবার কখনো হিতে বিপরীত হয়ে হয়েছে।

সর্বশেষ জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দলের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা করা হয় কেন্দ্র থেকে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সেই ঐক্য আর হয়নি। উল্টো দলের ভেতরের ছাই চাপা আগুন অগ্নিশিখায় রূপ নিয়েছে।

সিলেট জেলা বিএনপির খোদ আহ্বায়ক কমিটিই এখন পুড়ছে ঘর ও বাইরের আগুনে।

তবে গত ১৫ এপ্রিল স্বয়ং খালেদা জিয়া সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নাম ঘোষণা করার পর দ্বন্দ্ব অবসানের কিছুটা আভাস পাওয়া গিয়েছিল। এমনকি কমিটি ঘটনের পর কয়েকটি দলীয় সভায় সব নেতাই উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু সভা-সমাবেশে উপস্থিত থাকলেও সিনিয়ন ও ত্যাগী নেতারে মধ্যে মনে ক্ষোভের আগুন জ্বলছিল। সে আগুন এতো দিন ঘরের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন তা প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।

তাই বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির হাত থেকে দলকে বাঁচাতে বেগম খালেদা জিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিশেষ আবেদন ও গণ আবেদন সম্বলিত পোস্টার নগরীর বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে লাগানো হয়েছে।

তৃণমূলের দাবি, জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি বিএনপির তৃণমূলকে পুনঃগঠনের নামে আরো ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

তারা আরো দাবি করছেন নির্বাচন বা কমিটি গঠনের সুযোগে ষড়যন্ত্রকারীরা দলে স্থান করে নেয়। এতে মাঠ কর্মীরা উপেক্ষিত হয়। বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের স্থান হয়নি বলেও ওই পোস্টারে ‍উল্লেখ করা হয়।

গত কয়েকদিন আগে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খালেদার ‍দৃষ্টিআকর্ষণ করে বিশেষ আবেদন জানালেও এখন গণ আবেদন শিরোনামে একটি পোস্টার সাঁটানো হয়েছে।

খালেদার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিশেষ আবেদন সম্বলিক পোস্টারটি ছেপেছিলেন সিলেট বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা। আর গণ আবেদনটি প্রচার করা হয়েছে- বিএনপি প্রেমিক সিলেটবাসীর নামে। ওই পোস্টারেই বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া পোস্টারে ওই কমিটি বাতিলের দাবিও জানানো হয়েছে।

আর তা বাতিল করে নতুন কমিটি না করা হলে ওই কমিটিকে রুখে দেয়ার হুমকিও দেয়া হয়েছে।

এদিকে, বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘটনের পর ওই কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট সামছুজ্জামান। তবে এখন সামছুজ্জামানের সঙ্গে দলীয় সিনিয়র ও ত্যাগী নেতারাও যোগ দিয়েছেন। তাদের দাবি- বর্তমান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কোনো ত্যাগী নেতা নন। উনি অতীতের আন্দোলন-সংগ্রামে রাজ পথে ছিলেন না। দলে অনেক ত্যাগী ও সিনিয়র নেতা থাকার পরও কেন্দ্রী বিএনপির কি কারণে তাকে আহ্বায়ক করেছে, তাদের মনে এমন প্রশ্নই ঘোরপাক খাচ্ছে।

সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল গফ্ফার বলেন, ‘তৃণমূল নেতাকর্মীরা বর্তমান কমিটির ওপর ক্ষোব্ধ।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান জেলা বিএনপির যে আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে সেটা কোনোভাবেই তৃণমূলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এ কমিটির ওপর আমি নিজেও ক্ষোব্ধ। কারণ এ কমিটি দলের জন্য কিছুই করতে পারে না।’

গফ্ফার বলেন, ‘নতুন কমিটি হওয়ার পর থেকে আমি দলের কার্যক্রমে হাল ছেড়ে দিয়েছি। কোনো কাজ-কর্ম করতে ভালো লাগে না। আমার মধ্যে আর কোনো উৎসাহ-উদ্দিনপনা নাই।’

তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি বিএনপি না করলেও ভাত খাইতে পারব।’

তবে দেয়ালে পোস্টার সাঁটানোর ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যে বা যারা নগরীতে পোস্টার সাঁটিয়েছে তারা কাজটি ঠিক করেনি।’

প্রসঙ্গত, গত ১৫ এপ্রিল স্বয়ং খালেদা জিয়া সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেছেন। এ কমিটিতে সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট নূরুল হককে আহ্বায়ক করে আটজন যুগ্ম আহ্বায়ক রাখা হয়। আহ্বায়ক কমিটিকে ৪৫ দিনের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার নির্দেশ দেন খালেদা জিয়া।



মন্তব্য চালু নেই