খালেদার আত্মসমর্পণ ঘিরে কোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার

নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আত্মসমর্পণকে কেন্দ্র করে সোমবার পুরান ঢাকার জজ কোর্ট এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনী।
সকাল থেকেই জজ কোর্ট ও এর আশপাশ এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ। আদালত এলাকার প্রবেশ ও বহির্গমন পথসহ বাহদুর শাহ পার্ক মোড়, রায়ের সাহেব বাজার মোড়, ইংলিশ রোডের মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, জজ কোর্ট এলাকার চারদিকে প্রতিবন্ধকতা (ব্যারিকেড) দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পুলিশ তল্লাশি করে সবাইকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছে। সামনের রাস্তায় পুলিশে সজোয়াযান (এপিসি) আদালত এলাকার পাশে রাখা হয়েছে।
আদালতের ভেতরে মোটরসাইকেল বা গাড়িসহ কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে এলাকার আশপাশে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন জানান, সকালে আদালতে হাজির হয়ে খালেদা জিয়ার আত্মসমর্পণের কথা রয়েছে। এ কারণে ওই এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৮ জুন খালেদার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা নাইকো দুর্নীতি মামলা স্থগিত করে দেওয়া আদালতের আদেশ বাতিল করে দেন বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ ছাড়া রায় পাওয়ার দুই মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়াকে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন আদালত।
জামিনের বিষয়ে আদালত বলেন, নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর আদালত খালেদাকে পরবর্তী সময়ের জন্য জামিন দেওয়ার বিষয়ে অবশ্যই বিবেচনা করবেন।
২০১৫ সালের ৩০ জুন হাইকোর্ট থেকে মামলার নথি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯ আসে। আদালত হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে ৩০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, সম্পুন্ন বেআইনীভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার মাধ্যমে বাংলাদেশের নিজস্ব দুইটি আবিস্কৃত গ্যাস ফিল্ডকে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন উল্লেখ্য করে পরিত্যক্ত গ্যাস ফিল্ড হিসেবে ঘোষণা করেন তৎকালী সরকার। নাইকো রিসোর্সেস বাংলাদেশ লি. নামীয় একটি অদক্ষ বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে্ অবৈধ পন্থায় বিনা টেন্ডারে সরকারি নিয়মনীতি বহির্ভূত পন্থায় ছাতক ও ফেনী গ্যাস ক্ষেত্রের মজুদ ২৭৬২ বিসিএফ গ্যাসের মধ্য থেকে উত্তোলনযোগ্য ১৭৪৪ বিসিএফ গ্যাস উত্তোলনের অবৈধ সুযোগ দিয়ে রাষ্ট্রের নুন্যতম ১০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি সাধন করেন।
এ ঘটনায় ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তৎকালীন দুদকের সহকারী পরিচালক (বর্তমানে উপ-পরিচালক) মাহবুবুল আলম বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহম্মেদ, সাবেক জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহিদুল ইসলাম ও নাইকো রিসোর্সেস বাংলাদেশের দক্ষিণ এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
২০০৮ সালের ৫ মে তৎকালীন দুদকের সহকারী পরিচালক সাহিদুর রহমান খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ ধারা এবং দুদকের ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রের অপর আসামিরা হলেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহম্মেদ, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সাবেক সচিব খন্দকার শাহিদুল ইসলাম, নাইকো রিসোর্সেস লি. দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সাবেক সিনিয়ার সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসেন, বাপেক্সের সাবেক ঊর্ধ্বতন মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক কোম্পানি সচিব মো. শফিউর রহমান, ওয়ানগ্রুফের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর সেলিম ভুইয়া।
অভিযোগপত্র দাখিলের পর এ মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন খালেদা জিয়া। ২০০৮ সালের ১৫ জুলাই নাইকো দুর্নীতি মামলার কার্যক্রম দুই মাসের জন্য স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে স্থগিতাদেশের মেয়াদ কয়েক দফায় বাড়ানো হয়।
মন্তব্য চালু নেই