ক্ষতিপূরণের অর্থ লুটপাট তদন্তে দুদক

কক্সবাজারের মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। আর এ অভিযোগ তদন্তে মাঠে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ২৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১৯ নভেম্বর মামলা দায়ের করা হয়েছে। মাতারবাড়ীর বাসিন্দা এ কে এম কায়সারুল ইসলাম বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে ওই মামলা দায়ের করেন।

দুদকের কাছে চলতি মাসে ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দুদকের সহকারী পরিচালক আবদুস সালাম অভিযোগটি তদন্ত করছেন।

ওই মামলার আসামিরা হলেন কক্সবাজারের তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিন, প্রাক্তন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. জাফর আলম, জেলা ভূমি অধিগ্রহণের প্রাক্তন কর্মকর্তা আরেফিন আক্তার নুর, মহেশখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোং বাংলাদেশ লিমিটেডের পিডি ইঞ্জিনিয়ার মো. ইলিয়াছ, জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখার প্রাক্তন প্রধান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, প্রাক্তন কাননগো আবদুল কাদের, প্রাক্তন সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম ও বাদশা মিয়া, মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, মহিবুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, মোহাম্মদ হারুন, জমির উদ্দিন, এরফান, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, মো. সেলিম, জি এ ছমি উদ্দিন, নুর আহমদ, মো. নুরুল ইসলাম, আবুল বশর, আশরাফ আলী, দানু মিয়া, মির কাশেম, মো. সেলিম উদ্দিন, রিদুয়ান, আনিছুর রহমান ও ছকি আলম।

যদিও পরবর্তী সময়ে সদ্য প্রাক্তন জেলা প্রশাসক ও বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনের উপসচিব রুহুল আমিনকে আসামির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

জানা গেছে, সরকার ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে মাতারবাড়ী দ্বীপে দেশের সর্ববৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ৩৬ হাজার কোটি টাকা (৪৮০ কোটি মার্কিন ডলার)। এর মধ্যে ৩৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। প্রকল্প এলাকা থেকে বিদ্যুত সঞ্চালনের জন্য পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) ৮০০ কিলোভোল্ট ডাবল সার্কিট ট্রান্সমিশন নির্মাণ করবে। পিজিসিবি এ জন্য কাজও শুরু করেছে। এ ছাড়া সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় প্রকল্প এলাকায় যাতায়াতের জন্য সড়ক প্রশস্তকরণ ও নতুন সড়ক নির্মাণের কাজ করবে, আমদানি করা কয়লার জাহাজের চলাচল সহজ করতে সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কাজ করবে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, প্রকল্প এলাকায় বিদ্যুতায়নের কাজ করবে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মাতাবাড়ী ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষতিপূরণের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ইতিমধ্যে একাধিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে কক্সবাজারের বাসিন্দাদের পক্ষ থেকে আদালতে একটি এবং কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একটি সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, দুদকে মামলার তদন্তভার আসার পর ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে নথিপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। খুব শিগগির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হবে।

অভিযোগের বিষয়ে মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির জন্য ১ হাজার ৪১৪ একর জমি হুকুমদখল করা হয়। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পটির জমি হুকুমদখলের পর মাতারবাড়ীর কিছু লোক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিরোধিতা শুরু করে। পরবর্তী সময়ে প্রকল্পের ক্ষতিপূরণের টাকা মূল্যায়ন করতে গিয়েই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা জোট বেঁধে জালিয়াতির কাজে নেমে পড়ার অভিযোগ ওঠে। দ্বীপের চিংড়ি প্রকল্পের মালিকদের নানাভাবে প্রলোভন দিয়ে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে মৎস্য কর্মকর্তাদের দিয়ে ‘অবাস্তব রিপোর্ট’ তৈরি করে হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। চিংড়ি প্রকল্পের প্রতি কেজি চিংড়ির মূল্য ৮০০ টাকা হিসাবে প্রতিটি প্রকল্পে চিংড়ির মজুত দেখানো হয় অস্বাভাবিক হারে।

মহেশখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অবাস্তব প্রতিবেদন দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। আর এ রকম অবাস্তব প্রতিবেদনের ফলে একটি চিংড়ি প্রকল্পে যেখানে এক কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ হওয়ার কথা সেখানে তারও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। মাতারবাড়ীর জালিয়াত চক্রটি নিজেদের কোনো জমি এবং চিংড়ি প্রকল্প না থাকা সত্বেও সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমেই এই বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, মহেশখালীর মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ হাজার ৪১৪ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তার মধ্যে ৪০ কোটি টাকার চেকও বিতরণ করা হয়। কিন্তু প্রাথমিক অনুসন্ধানে ২৩ কোটি টাকার জালিয়াতি ধরা পড়েছে। আর এ টাকা আদায়ে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ২১ জনের বিরুদ্ধে একটি সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই