কেমন আছেন মঈন ফখরুদ্দীন মাসুদরা?

সরাসরি রাজনীতি না করেও দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে আলোচিত তারা। এক সময় ছিলেন দেশের হর্তাকর্তা। রাজনীতির টানাপোড়েনে সরকার বদলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ভেঙে নিজেদের মতো ব্যতিক্রমী এক সরকার পরিচালনা করেছেন তারা কয়েকজন। যদিও ওই ক্রীড়নকদের তালিকায় বেশ কয়েকজনের নাম থাকলেও মূল আলোচনায় আসে তিন জনের নাম।খবর পরিবর্তনের।

২০০৭-২০০৮ সালের ওয়ান ইলেভেনখ্যাত সময়ের আলোচিত সেই তিনজন হলেন তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মঈন উ আহমদ, সে প্রক্রিয়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়া ড. ফখরুদ্দীন আহমদ এবং তৎকালীন প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তা জেনারেল মাসুদউদ্দিন চৌধুরী।

এখন কোথায়, কেমন আছেন তারা?

মঈন উ আহমদ
রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে এক রকম নীরব বিদ্রোহে হটানোর পেছনে মূলশক্তি এবং নেতা ছিলেন সে সময়ের সেনাপ্রধান মঈন উ আহমদ, যাকে ইয়াজউদ্দিন আহমেদ সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলন। মঈন উ শুধু ইয়াজউদ্দিন সরকারেক হটাননি, পরবর্তী দুই বছর তার ইশারাতেই চলেছে দেশ।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও জেনারেল মইন উ আহমেদ সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আমলেই ঘটেছিল আলোচিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড। পরে অবসর নিয়ে অনেকটা নীরবে ২০০৯ সালের জুন মাসে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে নিউইয়র্কের জ্যামাইকার একটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় সাধারণ জীবনযাপন করছেন মঈন উ আহমেদ। প্রথমে ফ্লোরিডায় ছোটভাই ও ছেলের কাছে থাকা অবস্থায় তার ‘থ্রোট ক্যানসার’ ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসার জন্য তিনি নিউইয়র্কে চলে যান। গত এক সপ্তাহে নিউইয়র্কে বসবাসকারী একাধিক বাঙালি সাংবাদিক জানিয়েছেন, জ্যামাইকার একটি বেজমেন্টে বসবাস করছেন মঈন উ আহমদ।

তারা জানান, ক্যান্সারের চিকিৎসায় দীর্ঘ সময় কেমোথেরাপি ও বোনম্যারো অস্ত্রোপচারের পর এখন আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ মঈন উ আহমদ। কিন্তু ক্যান্সার থেকে কিছুটা সুস্থ হলেও এবার তার কিডনিতে জটিলতা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার বাঙালি সূত্রগুলো।

গত ২৫, ২৬ ও ২৭ মার্চ রাতে নিউইয়র্কে যোগাযোগ করলে মঈন উ আহমদের সঙ্গে এক সময় যোগাযোগ রেখেছেন এখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন দেশের প্রথম সারির এমন একাধিক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মঈন উ নিজেকে গত ছয় মাসে নিউইয়র্কে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানেও তাকে দেখা যায়নি।

ফখরুদ্দীন আহমদ
ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপেদষ্টা হিসেবে অনেকটাই গ্রহণযোগ্য এবং বিতর্কহীন সময় সরকার প্রধান হিসেবে কাটিয়েছেন বাংলাদেশ বাংকের সাবেক গভর্নর এবং বিশ্বব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা ফখরুদ্দীন আহমদ। একটি ভিন্ন বলয়ের ইমেজও তৈরি করেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতার পালাবদলের পর ফখরুদ্দীন আহমদ বেশ কিছুদিন সরকারি বিশেষ নিরাপত্তায় দেশেই ছিলেন। এরপর ১/১১ কর্মকাণ্ডের কিছু বিষয় খতিয়ে দেখতে গঠিত সংসদীয় কমিটি ফখরুদ্দীনকে জেরার জন্য তলব করছে মর্মে খবর প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যে সপরিবার তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। আগে থেকেই মার্কিন নাগরিক ফখরুদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড স্টেটের পটোম্যাকে যে দুটি বাড়ির মালিক। তার একটিতে এখন তিনি স্ত্রীসহ থাকছেন। অন্য বাড়িতে থাকে তার মেয়ের পরিবার।

ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ায় ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ বিষয়ে গবেষণা ও খণ্ডকালীন শিক্ষকতা করছেন তিনি। তবে সেখানে বাংলাদেশি কমিউনিটির একটি অংশ বিশেষ করে বিএনপি সমর্থকদের ক্ষোভের কারণে তিনি নিজেকে একটু দূরে সরিয়ে রাখেন। ২০০৯ সাল থেকে সেখানে অবস্থান করলেও তিনি সাধারণত বাংলাদেশি কমিউনিটির সামনে আসেন না বলে জানা গেছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুধু একবার সৌদি আরবে হজ করতে গিয়েছিলেন।

মাসুদউদ্দিন চৌধুরী
ওয়ান-ইলেভেনের সময় সাভারের নবম ডিভিশনের জিওসি ছিলেন লে. জেনারেল মাসুদউদ্দিন চৌধুরী। ১/১১-এর পটপরিবর্তন এবং পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর ছিল তার একচ্ছত্র প্রভাব। ২০০৮ সালের ২ জুন তৎকালীন প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার পদ থেকে ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট পদে তাকে বদলি করা হয়। এর মাত্র ছয় দিন পর ৮ জুন তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত হয়। পরে ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর তাকে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার নিয়োগের আদেশ জারি করা হয়। নভেম্বরে তিনি ঢাকা ছেড়ে যান। এরপর ২০১১ সালের ২৯ জুন লে. জেনারেল মাসুদউদ্দিনের সেনাবাহিনীর চাকরির বয়সসীমা শেষ হওয়ার পর প্রথমে তিন মাস করে দু’বার এবং পরে এক বছর করে আরও দুই দফায় চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

বর্তমানে তেজগাঁও বাণিজ্যিক এলাকার লিঙ্ক রোডের ১৯১/২ ভবনের ১২, ১৩ ও ১৪ তলায় তিনটি ফ্লোরে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর চালু করেন পিকাসো নামে একটি বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট।

গত সপ্তাহে সরজমিন পিকাসোতে গিয়ে দেখা যায়, রেস্টুরেন্টের স্লোগান- ‘খাবার এখানে শিল্প’। সমকালীন সময়ে সর্বোচ্চ মানের খাবার পরিবেশনের লক্ষ্য নিয়েই এ রেস্টুরেন্টের যাত্রা শুরু। ১৩ তলার ওপরে খোলা আকাশ সুইমিংপুল। খাবারের পাশাপাশি পাওয়া যাবে সুইমিংপুলের আবহ। সেই সঙ্গে পাশেই রাখা হয়েছে হেলিপ্যাড। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিষ্ঠান পাপারোমার তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে এ রেস্টুরেন্ট।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, একসঙ্গে ৫০০ ক্রেতার বসার জায়গা ও খাবার সরবরাহে সক্ষম পিকাসোয় চারপাশে স্বচ্ছ কাচের দেয়াল। একেক ফ্লোরে একেক ধরনের আবহ। চারদিকে আলোছায়ার খেলা। ব্রিটিশ বনেদি সাজে তৈরি হয়েছে রেস্টুরেন্টের আসবাবপত্র।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেস্টুরেন্টের এক কর্মচারী বলেন, ‘জেনারেল স্যার প্রায় নিয়মিতই রেস্টেুরেন্টে আসেন। হুটহাট চলে আসেন। আগে থেকে কাউকে কিছু জানান না। সকাল দুপুর সন্ধ্যা রাত যখন তখন আসেন। রেস্টুরেরেন্টর বিষয়ে সব ধরনের খোঁজখবর নেন।’

ওই কর্মচারী আরও জানান, মাসুদউদ্দিন চৌধুরী মাঝেমধ্যেই তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লাতেও যান।



মন্তব্য চালু নেই