কেন্দ্রে আস্থা নেই, তৃণমূলই খালেদার ভরসা

গত নির্বাচনের আগের মতো এবারো টানা কঠোর কর্মসূচিতে মাঠে নেই বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে আগের চেয়ে সংখ্যায় কম হলেও মাঠে আছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। আর সে কারণেই অবরুদ্ধ হওয়ার পর থেকে খালেদা জিয়া জেলা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন বলে জানা গেছে।

যদিও আন্দোলনের ‘ওয়ার্ম আপের’ সময় খালেদা জিয়ার কাছে মাঠে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কথা রাখেননি বলে অভিযোগ মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। এ বিষয়ে কথা বলতে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে অনেকের ব্যক্তিগত মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তবে যাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়েছে তারা এই অভিযোগ উড়িয়ে দেন। তাদের দাবি, সরাসরি মাঠে না থাকতে পারলেও তৃণমূলের নেতাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন।

এদিকে গত ৫ জানুয়ারি ঘোষণার পর থেকে চলমান অবরোধে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের ভূমিকায় বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া সন্তুষ্ট বলে দলীয় সূ্ত্রে জানা যায়। অন্যদিকে এবারও মাঠে না থাকায় সাবেক ছাত্র নেতাদের ওপর তিনি ক্ষুব্ধ। কারণ আন্দোলনে নামার আগে এসব নেতারা মাঠে থাকবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাতে বিএনপি প্রধানও অনেকটা ভরসাও পেয়েছিলেন। সবশেষ গত ১৮ ডিসেম্বর রাজধানীতে সাবেক ছাত্রনেতাদের কনভেনশনে নেতারা এবার বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে মাঠে থাকার কথা বলেছিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ৫ জানুয়ারিকে ঘিরে আন্দোলন কর্মসূচিতে সাবেক কোনো ছাত্রনেতাকে মাঠে দেখা যায়নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক ছাত্রনেতার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “রাস্তায় নামলে পুলিশ গুলি করে। প্রতিদিন বাসায় পুলিশ তল্লাশি করে, এই অবস্থায় কিভাবে রাজপথে নামবো। তবে আমরা চেষ্টা করছি। সরাসরি মাঠে না থাকলেও কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে।”

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের অবরোধ পুরো মাসজুড়ে চলতে পারে। নির্বাচনের আগের টানা আন্দোলনের মতো এবারও নানামুখি চাপ উপেক্ষা করে তৃণমূলের নেতাকর্মী মাঠে আছেন। তবে অবরোধে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হওয়া অনেকে আবার গা ঢাকা দিয়েছেন।

বিশেষ করে ৫ জানুয়ারি বিএনপি ও জোটের নেতাকর্মীদের সবচেয়ে বড় জমায়েত হয় চট্টগ্রাম। কিন্তু ওইদিন সমাবেশ চলাকালে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় খালেদার উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হলে তাদের আর মাঠে দেখা যাচ্ছে না।

তবে রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মিজানুর রহমান মিনু ও সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে নেতাকর্মীদের নিয়ে মাঠে দেখা গেছে। খুলনায় সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে প্রতিনিয়ত মিছিল-মিটিং করতে দেখা গেছে।

এদিকে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে মির্জা আব্বাস ও হাবিব উন নবী খান সোহেলকে ঢাকা মহানগর বিএনপির দায়িত্ব দেন খালেদা জিয়া। অবরোধ শুরুর দিকে মির্জা আব্বাস মিছিলের চেষ্টা করলে পুলিশ গুলি করার তা পণ্ড হয়। আর সোহেল হাতেগোনা কয়েকজন কর্মী নিয়ে একদিন বিজয়নগরে মিছিল করেন। সবশেষ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বেইলী রোডের গলিতে মিছিল করেন বলে জানা গেছে।

দলীয় সূত্রমতে, বেগম জিয়ার আত্মবিশ্বাস-এবারের আন্দোলনে যেকোনো মূল্যে তিনি সফল হবেন। সেজন্য অন্তত একটি অর্থবহ সংলাপ সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন কর্মসূচি থেকে পিছু হটবেন না তিনি।এ পর্যন্ত তার সঙ্গে যারা দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন তাদের এমনটাই বলেছেন বেগম জিয়া।

নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হওয়ার পর থেকেই খালেদা জিয়া তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন বলে জানা গেছে। নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে অবরোধে সহিংসতার ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি ও মানুষের প্রানহানির ঘটনায় প্রতিনিয়ত বিএনপি পক্ষ থেকে শোক ও সমবেদনা জানানো হচ্ছে। সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এক বিবৃতিতে বলা হয়, অবরোধ-আন্দোলনে মানুষের কষ্ট, দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে তারা সহানুভূতিশীল ও সজাগ। তবে সরকারের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড অবসানের জন্য ধৈর্য ধরে সাময়িক কষ্ট স্বীকারের জন্যও অনুরোধ জানান তারা।

একই সঙ্গে অভিযোগ করা হয়, সরকার তার এজেন্টদের দিয়ে অবরোধে নাশকতা করাচ্ছে।

এদিকে আন্দোলনে থাকলেও চলমান সংকট সমাধানে সংলাপের পথটি খোলা রাখছে বিএনপি। গত রোববার খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করে বের হয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা মনে করি আলোচনার মাধ্যমে চলমান সংকটর সমাধান সম্ভব। সরকার উদ্যোগ নিলে কর্মসূচি নিয়ে চিন্তা করা যাবে।”

আন্দোলন প্রসঙ্গ সম্পর্কে দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এমকে আনোয়ার নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “এই আন্দোলনে দেশের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা দেশের ক্ষতি চাই না। সরকারের সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না। আলোচনার দরজা সবসমই খোলা আছে। আমরা চাই সরকার আলোচনা করে এ সমস্যার সমাধান করুক।”

সরকার দাবি না মানলে আন্দোলন আরো জোরদার হবে বলেও জানান তিনি।



মন্তব্য চালু নেই