কিশোরগঞ্জে অসহনীয় বিদ্যুতের লোড শেডিং ॥ ভ্যাপসা গরমে জন জীবন অতিষ্ঠ

কিশোরগঞ্জে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫-২০বার করে বিদ্যুতের অসহনীয় লোড শেডিং ও মিস্ড কল অব্যাহত রয়েছে। ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ট হয়ে পড়েছে। ফলে উপজেলা শহরের ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গত এক সপ্তাহ থেকে কিশোরগঞ্জ উপজেলার পাওয়ার ডেভলোপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) বিদ্যুৎ সকাল ৯টা হতে ভোর ৫টা পর্যন্ত প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫-২০বার করে আসা যাওয়া করে।

এতে করে উপজেলার বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের বৈদ্যুতিক পাখা (ফ্যান), রাইস  কুকার, কারী কুকার, মেজিক চুলা, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার ও ব্যবসায়ীদের ফটোষ্ট্যাট মেশিনসহ বৈদ্যুতিক নানান ধরণের যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ছে।

আর এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ উপজেলা পাওয়ার ডেভলোপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) আবাসিক কর্মকর্তার নেই কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে যে, উপজেলার শহরের আলহাজ্ব আবেদ আলীর ছেলে জিকরুল হকের আইসক্রিমের কারখানায় প্রতিদিন ৬-৭জন করে কর্মচারী কাজ করছে।

কিন্তু বিদ্যুতের লোড শেডিং ও বারবার বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার ফলে মেশিন চালু করতে পারছে না। ফলে প্রতিদিন ব্যবসায় লাভে পরিবর্তে লোকমান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। সদর ইউনিয়নের কেশবা গ্রামের শাহীন হোসেন জানান,প্রতিদিন বিদ্যুতের ভয়াবহ লোড শেডিংয়ের কারণে আমার বাড়ীর ব্যবহৃত রাইস কুকার’র কয়ে কেটে গেছে।

উপজেলার দৈনিক মানব বার্তা পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি মিজানুর রহমান জানান, বিদ্যুতের অতিরিক্ত লোড শেডিং ও লো-ভোল্টেজের কারণে আমার ব্যবহৃত কম্পিউটারের মাদার বোর্ড নষ্ট হয়ে গেছে। পরে ৩ হাজার টাকা দিয়ে কম্পিউটারের মাদার বোর্ড কিনে নিয়েছি। কিশোরগঞ্জ বানিয়াপাড়া এক ব্যক্তি জানান,বিদ্যুতের লো ভোল্টেজের কারণে আমার বাড়ীর ব্যবহৃত ২টি ফ্যান একেবারে বিকল হয়ে পড়েছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের ভ্যাপসা গরমে উপজেলা বহির্বিভাগ থেকে কমপক্ষে ৩০০-৪০০জন লোক জ্বর,মাথা ব্যথা ও ডায়রিয়া রোগের চিকিৎসা নিয়ে বাড়ী ফিরছেন। উপজেলা ব্যবসায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেনেট বাবু জানান,প্রতিদিন বিদ্যুতের ভয়াবহ লোড শেডিংয়ের ফলে ব্যবসায়ীরা সন্ধ্যার পরে দোকান বন্ধ করে বাড়ী ফিরে যাচ্ছে।

অপর দিকে প্রতিরাত ১২টার পর বিদ্যুতের লোড শেডিংয়ের কারণে বয়স্ক,শিশু ও সকল বয়সের মানুষ গরমের জন্য ঘুমাতে না পেয়ে বাড়ীর বাহিরে হেঁটে হেঁটে চলাফেরা করে রাত পার করছেন । আর এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ উপজেলা বিদ্যুতের আবাসিক প্রকৌশলী কখন বিদ্যুৎ আসে কখন বিদ্যুৎ যায় তা তিনি নিজে জানেন না। তিনি কিশোরগঞ্জ পিডিবি’র আবাসিক ষ্টেশনে থাকেন না। তিনি প্রতিদিন অফিস শেষে কিশোরগঞ্জ সৈয়দপুরে চলে যান।

এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জ আবাসিক প্রকৌশলী তারেকুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল করলে তিনি সাংবাদিককে বলেন বিদ্যুৎ গেছে নাকি? সাংবাদিক লোড শেডিংয়ের কথা বললে তিনি জানান,আমরা তো বিদ্যুতের লোড শেডিং দেই না আর আমাদের তো সাব ষ্টেশন নেই। কিশোরগঞ্জের বিদ্যুতের কন্টোলরুম জলঢাকায়।

এ ব্যাপারে জলঢাকা আবাসিক প্রকৌশলী মাজেদুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের ভূয়া তথ্য দিয়ে বলেন ভাই জলঢাকায়ও বিদ্যুৎ নেই। পরে সাংবাদিক জলঢাকার এক স্থানীয় লোককে ফোন দিয়ে বিদ্যুতের কথা জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে জানান,ভাই জলঢাকায় বিদ্যুৎ আছে।

পরে আবার জলঢাকা আবাসিক প্রকৌশলী মাজেদুর রহমানকে আবার ফোন দিলে তিনি হেঁসে বলেন ভাই ৪টা ফিডারের মধ্যে ২টা ফিডার চালু আছে। কতক্ষন পর কিশোরগঞ্জে বিদ্যুৎ আসবে বললে তিনি বলেন আজ রাতে বিদ্যুৎ নাও আসতে পারে।

কিশোরগঞ্জ উপজেলা বিশিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন,কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী কিশোরগঞ্জের ষ্টেশনে না থাকায় প্রতিদিন লোড শেডিংয়ের ঘটনা ঘটছে। তিনি কিশোরগঞ্জের ষ্টেশনে থাকলে এবং আন্তরিক ভাবে এলাকার উন্নয়নে কাজ করলে বিদ্যুতের এমন সমস্যা হতো না।



মন্তব্য চালু নেই