কায়সারের ফাঁসির আদেশ

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলের কৃষি প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম।

মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৫ মিনিটে রায় পড়া শুরু করেন চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তিনি একাই মোট ৪৮৪ পৃষ্ঠার রায়ের মূল অংশ আদালতে পড়ে শোনান।

দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। কায়সারের বিরুদ্ধে মোট ১৬টি অভিযোগের মধ্যে প্রমাণিত হওয়ায় সাতটিতে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়। এ অভিযোগগুলো হলো- ৩, ৫, ৬,৮, ১০, ১২, ১৬ নং অভিযোগ।

কায়সারকে চারটি (১, ৯, ১৩, ১৪ নং) অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২ নং অভিযোগে ১০ বছরের কারাদণ্ড, ৭ নং অভিযোগে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ১১ নং অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। তার বিরুদ্ধে আনীত ৪ ও ১৫ নং অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

বেলা ১১টায় বিচারপতিরা এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। ১০টা ৫৫ মিনিটে কায়সারকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানা থেকে এজলাসে আনা হয়। রায় পাঠকালীন কায়সার এজলাসের আসামির কাঠগড়ায় বসে ছিলেন। তার পরনে ছিল সাদা প্যান্ট, ছাই রঙের ব্লেজার।

এর আগে সকাল সাড়ে ৮টায় কায়সারকে পুলিশি নিরাপত্তায় ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, হায়দার আলী, রানা দাশগুপ্ত, জেয়াদ-আল-মালুম, তুরিন আফরোজ, মোখলেসুর রহমান বাদল, সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নি উপস্থিত ছিলেন। কায়সারের পক্ষে অ্যাডভোকেট আবদুস সোবহান তরফদার ও তার দুই ছেলে উপস্থিত ছিলেন।

সোমবার কায়সারের মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজ মঙ্গলবার দিন ধার্য করা হয়।

গত ২০ আগস্ট উভয় পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। একই সঙ্গে ওই দিন কায়সারের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়। এর আগে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে কায়সার জামিনে ছিলেন।

ট্রাইব্যুনালে কায়সারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত।

গত ৭ আগস্ট থেকে কায়সারের পক্ষে অ্যাডভোকেট আবদুস সোবহান তরফদার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। একই দিনে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ ষষ্ঠ কার্যদিবসে কায়সারের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে।

গত ২৩ জুলাই প্রসিকিউশনের ৩২তম সাক্ষী ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মনোয়ারা বেগমের জেরা শেষে আদালতের নির্দেশে প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত কায়সারের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন। ওই দিন থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত মোট ছয় কার্যদিবস আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন তিনি।

এর আগে এ মামলায় ৩১ জন সাক্ষী কায়সারের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন। আসামিপক্ষ তাদের জেরাও করে। এই মামলায় একজন যুদ্ধশিশু ও দুজন বীরাঙ্গনা কায়সারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তবে ট্রাইব্যুনালে কায়সারের পক্ষে কোনো সাফাই সাক্ষ্য দেওয়া হয়নি।

গত ২ ফেব্রুয়ারি সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল-২। ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন আদালত।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামিনপ্রাপ্ত প্রাক্তন কৃষি প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মো. কায়সারের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর ১৮টি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে অবশ্য ট্রাইব্যুনাল ১৮টি অভিযোগ ১৬টিতে রূপান্তরিত করেন।

গত বছরের ৩০ জুলাই কায়সারকে শর্ত সাপেক্ষে জামিন দেন ট্রাইব্যুনাল-২। মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারাধীন আসামিদের মধ্যে কায়সার দ্বিতীয় আসামি, যাকে জামিনে রেখে বিচারকাজ পরিচালিত হয়েছে।

২০১২ সালের ১৫ মে বুধবার কায়সারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২১ মে মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৪টায় কায়সারকে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতাল থেকে গ্রেফতারের করে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

তদন্ত সংস্থার নথিতে সৈয়দ মো. কায়সারের পরিচয়ে বলা হয়েছে, তার পিতা সৈয়দ সঈদউদ্দিন ১৯৬২ সালে সিলেট-৭ আসন থেকে কনভেনশন মুসলিম লীগের এমএনএ নির্বাচিত হয়। সৈয়দ কায়সার ১৯৭১ সালে দখলদার পাকিস্তান আর্মির দোসর হিসেবে তাদের পক্ষে অবস্থান নেন। স্বাধীনতার ঊষালগ্নে তিনি আত্মগোপন করেন বলে অভিযোগে বলা হয়।



মন্তব্য চালু নেই