কাসেমের সামনে কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ

মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদন নাকচ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। এখন কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার সুযোগ রয়েছে এই মানবতাবিরোধী অপরাধীর। সে আবেদন নাকচ হলে রাষ্ট্রপক্ষ যে কোনো সময় দণ্ড কার্যকরের উদ্যোগ নিতে পারবে।

কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ও মতিউর রহমান নিজামীর পর কাসেম আলী পঞ্চম ব্যক্তি যিনি সর্বোচ্চ আদালত থেকে প্রাণদণ্ড পেলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কাসেম আলী। এই সংগঠনের নেতা-কর্মীরাই গড়ে তুলেছিল খুনি বাহিনী আলবদর। বুদ্ধিজীবী হত্যায় তাদেরকেই প্রধানভাবে অভিযুক্ত করা হয়। এই হত্যার দায়ে আলবদর বাহিনীর দুই প্রধান নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। কাসেম আলী নিজেও ছিলেন চট্টগ্রাম অঞ্চলে আলবদরের অন্যতম সংগঠক।

মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে ডালিম হোটেলে নির্যাতনকেন্দ্র খুলে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হতো। কাসেম আলীর নির্দেশেই এই নির্যাতন করা হতো বলে প্রমাণ হয়েছে আদালতে। কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিমউদ্দিনকে তার নির্দেশেই হত্যা করা হয় ওই হোটেলে। আর এই অপরাধের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে জামায়াত নেতাকে।

মুক্তিযুদ্ধের পর আত্মগোপনে থাকলেও ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর প্রকাশ্যে আসেন মীর কাসেম আলী। গড়ে ‍তুলেন জামায়াতের স্বাধীনতাউত্তর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির। পরে মতভিন্নতার কারণে জামায়াত ছাড়লেও আবার ফিরে আসেন দলে। জামায়াতের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গুরু বলা হয় এই মানবতাবিরোধী অপরাধীকে। আর তিনি বিচার থেকে বাঁচতে বিপুল পরিমাণ টাকা (২৫ মিলিয়ন ডলার) লবিংয়ে ব্যয় করেন বলে অভিযোগ আছে।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতার রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছিল গত রবিবার। আর সেদিনই মঙ্গলবার রায় ঘোষণার কথা জানিয়েছিল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ। আর জামায়াত নেতার আইনজীবীও এই অপরাধীর বিপুল পরিমাণ অর্থবিত্তের কথা তুলেছিলেন।

আপিল শুনানির পাশাপাশি রিভিউ শুনানিতেও এই মামলায় ট্রাইব্যুনালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশস বিভাগের দুর্বলতার প্রসঙ্গ উঠে আসে। রিভিউ শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এমনও মন্তব্য করেন যে, এই প্রসিকিউশনের দায়িত্বে থাকার অধিকার নেই। প্রধান বিচারপতির এই মন্তব্যের পর রায় ঘোষণার আগের দিন রাজধানীতে এক আলোচনায় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের একটি মন্তব্যের পর কাসেম আলীর রায় নিয়ে গুঞ্জন দেখা দেয়। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা নিজে বলেছিলেন এই রায় কী হয় তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তবে শেষ পর্যন্ত আপিল বিভাগ এই মানবতাবিরোধী অপরাধীর ফাঁসির রায় বহাল রেখেছে।

অ্যাটর্নি জেনারেলের ব্রিফিং

রিভিউয়ের রায় ঘোষণার পর নিজ কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কাসেম আলীর সামনে এখন কেবল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার সুযোগ আছে। রাষ্ট্রপতি যতদিন এই আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন, ততদিন রায় কার্যকরের প্রক্রিয়া থেমে থাকবে। আর তিনি যদি ক্ষমা না চান তাহলে রাষ্ট্রপক্ষ যে কোনো সময় দণ্ড কার্যকরে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

মাহবুবে আলম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের পর আপিল বিভাগ আগেই তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছিল। এরপর এই রায় রিভিউয়ের আবেদন করেন তিনি, সেটিও খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ। এরপর এই রায়ের সম্পর্কে তাকে অবহিত করা হবে। তিনি যদি মেন করেন তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করবেন তাহলে তিনি তা করবেন। আর যদি সিদ্ধান্ত নেন সে আবেদন করবেন না, তাহলে দণ্ড কার্যকর হবে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তে দণ্ড কার্যকর হবে।’

এই মামলার রায় নিয়ে নিজের উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘যে আশা নিয়ে আমি এবং সমগ্র জাতি অপেক্ষা করেছিলাম, সেটা পূরণ হয়েছে।’



মন্তব্য চালু নেই