কামারুজ্জামানের যে অপরাধে যে সাজা

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মোট সাতটি অভিযোগ আনে রাষ্ট্রপক্ষ। সাতটির মধ্যে পাঁচটি অভিযোগই ট্রাইব্যুনালে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।

ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত এ ৫ টি অভিযোগের ভিত্তিতেই কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় বহাল রাখা হয়।

যে অভিযাগে ফাঁসি বহাল

অভিযোগ-৩
সোহাগপুরে গণহত্যা : একাত্তরের ২৫ জুলাই আলবদর ও রাজাকাররা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে শেরপুরের সোহাগপুর গ্রামে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং নারীদের ধর্ষণ করে। এটি কামারুজ্জামানের পরামর্শে পরিকল্পিতভাবে করা হয়। সেদিন ওই গ্রামে ১২০ জন পুরুষকে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনার দিন থেকে সোহাগপুর গ্রাম ‘বিধবা পল্লী’ নামে পরিচিত। এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

আপিল বিভাগের রায়েও সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতামতের ভিত্তিতে এই অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে ফাঁসি আপিলে যাবজ্জীবন
অভিযোগ-৪
গোলাম মোস্তফাকে হত্যা : একাত্তরের ২৩ আগস্ট কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা গোলাম মোস্তফাকে ধরে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে স্থাপিত আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে কামারুজামান ও আলবদররা তাকে গুলি করে হত্যা করে।এ অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় । কিন্তু আপিলের রায়ে মৃত্যদণ্ড কমিয়ে এই অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল যে সব অভিযোগে
অভিযোগ-২
অধ্যক্ষ আবদুল হান্নানকে নির্যাতন : কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা শেরপুর কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আবদুল হান্নানকে নগ্ন অবস্থায় শহরের রাস্তায় হাটাতে হাটাতে চাবুকপেটা করেন। এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল তাকে ১০ বছরের সাজা দেয় ।

আপিলেও এ আদেশ বহাল রাখা হয়েছে।

অভিযোগ-৭
দারাসহ ৬ হত্যা : মুক্তিযুদ্ধকালে ২৭ রমজান কামারুজ্জামান আলবদর সদস্যদের নিয়ে ময়মনসিংহের গোলাপজান রোডের টেপা মিয়া ও তার বড় ছেলে জহুরুল ইসলাম দারাকে ধরে জেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। পর দিন সকালে আলবদররা ওই দুইজনসহ সাতজনকে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে নিয়ে হাত বেঁধে সারিতে দাঁড় করান। প্রথমে টেপা মিয়াকে বেয়নেট দিয়ে খোঁচাতে গেলে তিনি নদীতে লাফ দেন। আলবদররা গুলি করলে তার পায়ে লাগে। তবে তিনি পালাতে সক্ষম হন। কিন্তু অন্য ছয়জনকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। এ অভিযোগে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় ট্রাইব্যুনাল। আপিল বিভাগও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন।

যে অভিযোগে খালাস
অভিযোগ-১
বদিউজ্জামান হত্যা : একাত্তরের ২৯ জুন সকালে কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে আলবদররা শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার রামনগর গ্রামের আহম্মেদ মেম্বারের বাড়ি থেকে বদিউজ্জামানকে অপহরণ করে আহম্মেদনগরে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে সারা রাত নির্যাতন করে পর দিন হত্যা করে লাশ পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ট্রাইব্যুনালের রায়ে কামারুজ্জামানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু আপিলের রায়ে এই অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়নি যে দুই অভিযোগ
অভিযোগ-৫ : মুক্তিযুদ্ধের সময় রমজান মাসের মাঝামাঝি কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা শেরপুরের চকবাজার থেকে লিয়াকত আলী ও মুজিবুর রহমানকে অপহরণ করে বাঁথিয়া ভবনের রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে তাদের নির্যাতনের পর থানায় ৪ দিন আটকে রাখা হয়। পরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে ওই দুইজনসহ ১৩ জনকে ঝিনাইগাতীর আহম্মেদনগর সেনা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। পরে লিয়াকত, মুজিবুরসহ আটজনকে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ের কাছে সারিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। কামারুজ্জামান ও তার সহযোগী কামরান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।এই অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়নি।

অভিযোগ-৬
টুনু হত্যা : একাত্তরের নভেম্বরে কামারুজ্জামানের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা টুনু ও জাহাঙ্গীরকে ময়মনসিংহের জেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে আলবদর ক্যাম্পে নিয়ে যান। টুনুকে সেখানে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। জাহাঙ্গীরকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।এ অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি।



মন্তব্য চালু নেই