কাঁঠালবিচি ফেলনা নয়! জানুন তার বিস্ময়কর পুষ্টিমান ও ব্যবহার
আমাদের দেশে কাঁঠালের বিচি খুবি জনপ্রিয় খাবার। সবুজ চিচিঙার সাথে কাঁঠালের বিচি মিশিয়ে ছোট মাছ দিয়ে রাঁধা তরকারি, শুটকি মাছের সাথে কাঁঠালের বিচি আর ডাঁটার তরকারি, মুরগি দিয়ে কাঁঠালের বিচি কিংবা কাঁঠালের বিচি ভর্তা এ রকম অসাধারণ সব স্বাদের খাবার তৈরিতে কাঁঠালবিচির ব্যবহার নিশ্চয়ই আপনার অজানা নয়। আলুর বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা এই খাদ্য উপকরণটির পুষ্টিমান সম্পর্কে আমরা কতোটুকু জানি! যদি না জানা থাকে, আসুন আজ কিছুটা জেনে নেয়া যাক:
পুষ্টি:
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁঠালের বিচিতে শক্তি পাওয়া যায় ৯৮ ক্যালরি। এতে কার্বোহাইড্রেট ৩৮.৪ গ্রাম, প্রোটিন ৬.৬ গ্রাম, ফাইবার ১.৫ গ্রাম, চর্বি ০.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ০.০৫ থেকে ০.৫৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.১৩ থেকে ০.২৩ মিলিগ্রাম, আয়রন ১.২ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৪.০৭ মিলিগ্রাম রয়েছে। কাঁঠালের বিচি ভিটামিন বি-১ ও ভিটামিন বি-১২ এর ভালো উৎস। এছাড়াও আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, থায়ামিন, নায়াসিন, লিগন্যান, আইসোফ্ল্যাভোন এবং স্যাপোনিনের মতো ফাইটো ক্যামিক্যালস।
স্বাস্থ্য গুরুত্ব:
খাবার হিসেবে যেমন সুস্বাদু ও পুষ্টিমানে ভরপুর তেমনই এর রয়েছে স্বাস্থ্যগত গুরুত্ব।
১. কাঁঠালের বিচিতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্টগুলো ক্যান্সার প্রতিরোধী এবং বার্ধক্যের প্রভাব সৃষ্টিকারি উপাদানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে।
২. ফাইবার ও কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট এর কারণে এর গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স কম। ফলে এটি ওজন কম বাড়িয়েই জুগাতে পারে অনেক এনার্জি।
৩. কাঁঠালবিচির প্রোটিন অত্যন্ত উপকারি। মাছ, মাংস যাদের কম খাওয়া হয় তাদের জন্য আমিষের চাহিদা মেটাতে কাঁঠাল বিচি উৎকৃষ্ট খাবার।
৪. কাঁঠালবিচির জীবানুনাশক গুনও রয়েছে। এটি Escherichia coli ও Bacillus megaterium ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর এবং এতে থাকা বিশেষ উপাদান (Jacalin) এইডস রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নয়নে সফল বলে প্রমাণিত হয়েছে।
৫. এতে থাকা পটাশিয়াম ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রনে রাখে।
আয়ুর্বেদিকগুণ:
বহু বছর ধরে আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র নানা অসুখের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে কাঁঠালের বিচি।
১। কাঁঠালের বিচি বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
২। এটি হজম শক্তি বাড়ায়।
৩। কাঠালের বিচি হলো aphrodisiac অর্থাৎ এটি যৌন আনন্দ বাড়ায়।
৪। ধারণা করা হয় কাঁঠালের বিচি টেনশন ও নার্ভাসনেস কাটাতে উপকারি।
৫। এ্যালকোহল জাতীয় মাদকের প্রভাব দূর করার জন্যও এর ব্যবহার রয়েছে।
আমাদের মতো দেশের যেখানে একটা বড় গোষ্ঠী পুষ্টিচাহিদা মেটাতে অক্ষম সেখানে পুষ্টি চাহিদা মেটাতে কাঁঠালের বিচি অত্যন্ত প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখতে পারে। সংরক্ষণযোগ্য বলে সারাবছরই এই পুষ্টি গ্রহণ করা সম্ভব। তাই কাঁঠাল খাওয়ার পর বিচিগুলোকেও সংরক্ষণ করুন আর গ্রহণ করুন এর পুষ্টিমান। প্রিয়, স্বাস্থ্যকর খাবার খান, সুস্থ থাকুন।
মন্তব্য চালু নেই