কাঁটা সরিয়ে ধীরে হাঁটছে বিএনপি!

এক দশক ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির স্বপ্ন এখন যেকোনো ভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া। পরিস্থিতি স্বাভাবিক কিংবা অনুকূলে থাকলে সরকারও গঠন করতে পারে বলেও মনে করছে নীতিনির্ধারকরা। এ জন্য পথের কাঁটা সরিয়ে ধীর পদক্ষেপে হাঁটছে তারা।

সর্বশেষ পুনর্গঠিত নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়ে দলটির প্রবল কোনো প্রতিক্রিয়া নেই- একমাত্র সিইসি ছাড়া। ‘না’-এর মধ্যে সিংহভাগ ‘হ্যাঁ’ রেখে এ ব্যাপারে কৌশলে বক্তব্য পেশ করছেন নেতারা।

দলেরই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, যে ইসিতে ‘জনতার মঞ্চে’র সংগঠক প্রধান হিসেবে থাকছেন তা দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কি সম্ভব? আবার নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, এই ইসির অধীনেই নির্বাচনে যাবে- তবে সিইসিকে বদলাতে হবে।

অন্যদিকে, ইসি বা সিইসির প্রসঙ্গ চলমান রেখেই নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনায় ‘সহায়ক সরকার’ বিষয়টি সামনে আনছে। এ নিয়ে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন চেয়ারপারসন। রাষ্ট্রপতি যে সিইসির নাম ঘোষণা করেছেন, তা নিয়ে আপত্তি থাকায় এবার ভিন্ন পরিকল্পনা করছে তারা। রাষ্ট্রপতি নয়, সহায়ক সরকারের প্রস্তাব তারা দেবেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে।

সরকারকে চাপা রাখা আর নিজেদের সরবতা প্রমাণ করার জন্যই এমন প্রস্তাব সামনে আনা হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কেননা, এর মধ্যেই নেতাকর্মীদের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদও দিয়েছেন দলীয় প্রধান। সমালোচনা আর বিতর্কের কাঁটা বিছানো পথে হাঁটতে এ ছাড়া আর কোনো কৌশল সামনে পাচ্ছে না নীতি নির্ধারকরা।

এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ যে বিতর্ক তুলেছিলেন জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করা নিয়ে- সেটা এখন তলানীতে চলে গেছে। তবে স্পর্শকাতর এ ইস্যু নিয়ে বিএনপি নীরবতা পালন করলেও এখন আবার মুখ খুলছে তারা। দুই দলের সম্পর্কের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেলেও দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে আপাতত ছাড়তে চাচ্ছে না বিএনপি। এমনটা মনে করছেন একাধিক নেতা।

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ তো সাফ বলেই দিয়েছেন, জামায়াতসহ ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক অটুট রয়েছে। ‘বিএনপি-জামায়াত’ সম্পর্কের শীতলতা নিয়ে বাইরে যে কথাবার্তা রয়েছে, তা সঠিক নয়। রিজভীর এ বক্তব্য এমন সময় দিলেন যখন গণমাধ্যমে এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া কিংবা সমালোচনার ঝড় উঠলোই না।

এদিকে, জিয়া অরফানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কয়েক মাসের মধ্যে চেয়ারপারসনের সাজা হতে পারে বলে ধারণা করছেন বেগম জিয়ার আইনজীবী ও শীর্ষস্থানীয় নেতারা। তাই এ ধাক্কা সামাল দিতে তারা ইতোমধ্যে পাঁচজন নেতাকে আপদকালীন পরিস্থিতি জন্য প্রস্তুত রাখার পরিকল্পনা করছেন। পাঁচজনের এ তালিকায় যাদের সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন- স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ।

এখানে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম কৌশলগত কারণে রাখা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, সরকারের ‘রোষানলে’ থাকা ফখরুল বিভিন্ন মামলায় জামিনে আছেন। তাকে দায়িত্ব দেয়া হলে কোনো মামলার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হতে পারে।

ইতোমধ্যে দলীয় কোন্দল আর অন্তর্দ্বন্দ্ব নিরসনে গোপনে কাজ চলছে দলের ভেতরে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে চলমান কোন্দলকে তারা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। দলীয় বিরোধ আর কোন্দল মিটিয়ে আগামী নির্বাচনে বিজয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তৃণমূলের শীর্ষ নেতারাও সতর্কভাবে পথ চলছে।



মন্তব্য চালু নেই