কফি কি ক্যানসার নির্মূল করতে পারে?
ডা. অজ বেশ কিছুদিন ধরেই খুব জোরালোভাবে বলে যাচ্ছেন যে, কফি আসলেই একটি অলৌকিক ওষুধ। আসুন কিছু সময়ের জন্য ভুলে যাই অজ যা বলেছেন সেটাকে।
কফি আমাদের সতেজতা দান করে, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মাত্রা বাড়ায় এবং হয়তো বা ক্যানসার সারাতে পারে? কিংবা ক্যানসার রোগের কারণ হতেও পারে?- এই প্রশ্নের উত্তর কে জানে। বিজ্ঞান নিশ্চিতভাবেই না।
কফি ত্বকে মেলানোমা ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
গত মাসের একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কফি ২০% পর্যন্ত মেলানোমার ঝুঁকি কমাতে পারে। গবেষকরা ১০ বছর ধরে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫৭ জন বয়োজ্যেষ্ঠ শ্বেতাঙ্গ মানুষের (আপনি জানেন তারা তাদের কফি খেতে খুব ভালোবাসে) স্বাস্থ্য ও ডায়েটিং তথ্য পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে, অধিক মাত্রায় কফি পান করার সঙ্গে ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যাওয়ার বিষয়টি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত।
কফি কি কোলন ক্যানসার (মলাশয়ে ক্যানসার) দমন করতে পারে?
সম্ভবত, কফি সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে কোলন ক্যানসারের জন্য। ২০১৪ সালে প্রায় ৮ হাজার ৫০০ ইসরায়েলির ওপর গবেষণা করে জানা গেছে যে, প্রতিদিন কমপক্ষে দুই কাপের কাছাকাছি কফি গ্রহণ করলে কোলন ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৩০% কমে যায়।
কফি পানে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমে
কফি স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতেও দারুণ কার্যকরী। সুইডিশ গবেষকরা ৬ হাজারের বেশি পোস্টমেনোপজাল নারীর স্বাস্থ্য ও ডায়েট তথ্য নিয়ে সমীক্ষা করেছেন। তারা দেখেছেন যে, যেসব নারী দিনে কমপক্ষে ৫ কাপ করে কফি পান করেন তাদের ৫৭% ঝুঁকি কমে যায় হরমোন-রিসেপটর-নেগেটিভ ব্রেস্ট ক্যানসারের। জার্মান গবেষকরা একই ধরনের একটি সমীক্ষায় পেয়েছেন কফি ৩৩% পর্যন্ত ঝুঁকি কমাতে পারে। তাই কোন তথ্যটা ঠিক, এটাই জানা এখন জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কফি প্রোস্টেট ক্যানসারের (মূত্রথলির ক্যানসার) অগ্রগতি প্রতিরোধ করে
প্রোস্টেট ক্যানসারের ক্ষেত্রেও কফির উপকারিতা প্রযোজ্য। ২০১৩ সালের একটি গবেষণাতে দেখা যায় যে, যারা দিনে চার কাপের বেশি কফি খান তাদের প্রোস্টেট ক্যানসারের পুনরাবৃত্তি এবং অগ্রগতি ঝুঁকি কমে ৫৯%। এই গবেষণা করা হয়েছিল সেসব পরিবারের ওপর যাদের ক্যানসার থেকে লড়াই করে বাঁচার ইতিহাস রয়েছে।
কফি কি তাহলে সব নিরাময় করতে পারে?
সাধারণত বিজ্ঞানীরা ভাবেন কফি একটি অসাধারণ পানীয়। সাম্প্রতিক ২ হাজারের বেশি বায়োমেডিকেল গবেষণা এটা প্রমাণ করেছে যে, কফি ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় এবং সেই সঙ্গে ডায়াবেটিস ও আলঝেইমার প্রতিরোধ করে। কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যায় যে, কফি যদি এত রোগ নিরাময়ে কাজ করে, তাহলে ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট কেন এখনো কোনো পরিকল্পনা নিচ্ছে না এই কফি উৎপাদন বৃদ্ধি করার ব্যাপারে?
তাহলে কি তেমন কাজ করে না, যেমনটা আমরা ভাবছি
এখন পর্যন্ত কেউ জোর গলায় বলেননি যে, কফি ক্যানসার নিরাময় করে, কারণ প্রতিটি গবেষণায় যেটা দেখা গেছে সবাই কফিকে একটি অলৌকিক ওষুধ হিসেবে প্রশংসা করে গেছে। আবার অনেকে বলেছেন এটা উপকারের চেয়ে ক্ষতি করে বেশি। উদাহরণস্বরূপ ২০১৩ সালে একটি মায়ো ক্লিনিকের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে যে, বেশি কফি পানে আয়ু কমে যায়। আবার ঠিক উল্টো একটা গবেষণাপত্র প্রকাশ পেয়েছে নিউ ইংল্যান্ড জার্নালে, সেখানে দেখা গেছে কফি গ্রহণ করলে জীবনী শক্তি বৃদ্ধি পায়।
কফি কি ক্যানসার হওয়ার কারণ হতে পারে?
আসলে কিছু গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, কফির কারণে ক্যানসার হতে পারে। স্তন ক্যানসারের সঙ্গে এর যোগসূত্র রয়েছে এবং পৃথক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, স্তন টিউমার আর বৃদ্ধি পায় না যখন আক্রান্ত নারী ক্যাফেইন খাওয়া বন্ধ রাখেন। সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যানসার বিষয়ক গবেষণার আন্তর্জাতিক এজেন্সি কফিকে ‘গ্রুপ ২বি’ তালিকায় স্থান দিয়েছে ক্যানসার ঝুঁকির রাসায়নিক সবজি, মোবাইল এবং গ্যাসোলিন এর সঙ্গে।
অ্যাসিডিটি
কফি যদি ক্ষতিকারক কিছু হয় তাহলে সেটা সম্ভবত অ্যাসিডিটির সঙ্গে জড়িত হতে পারে। প্রতিদিন সকালে এক কাপ কফি খেলে মানুষের পিএইচ লেভেল নেমে গিয়ে ক্যানসার কোষগুলোকে ত্বরান্বিত করে, যার ফলে শরীরে অ্যাসিডিক পরিবেশ তৈরি হয়।
মূল সমস্যা
কফি সম্পর্কে বিভিন্ন গবেষণায় ভিন্ন ভিন্ন অনেক কিছু বলা হলেও, এর ভেতরে থাকা বিভিন্ন পৃথক উপাদানগুলোর কাজ নিয়ে তেমন ধারণা দেওয়া হয়নি। কফিতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ফাইটোক্যামিকেলস এবং কার্সিনোজেনস (ক্যানসার উৎপাদক), যেমন বেনজোপাইরিন। যেহেতু কফি বহুমুখী পানীয়, এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস হয়তো বা ক্যানসার নিরাময়ে কাজ করতে পারে, আর বাকি অন্য উপাদানগুলো হয়তো বা নেতিবাচক ফলাফল দিয়েছে অন্য গবেষণাগুলোতে।
যেকোনো কিছুর দ্বারা ক্যানসার হতে পারে
আপনি শুনে থাকবেন যে, যেকোনো কিছু থেকেই ক্যানসার হতে পারে। ২০১২ সালে হার্ভার্ড রেডিয়েশন অনকোলজি প্রোগ্রামের দুজন গবেষক নিউট্রেশনাল এপিডেমিওলোজির অধীনে জিহ্বা এবং মুখের একটি গবেষণা করেন, ক্যানসারের উর্বরতার ক্ষেত্রে খাবার-দাবারের প্রভাব কতটুকু তা জানার জন্য। তারা ৫০টি কমন উপাদান নিয়ে কাজ করেছিলেন যেগুলো বেশির ভাগ খাবারে পাওয়া যায় এবং তারা সেগুলো ডাক্তারি গবেষণার সঙ্গে একত্র করেন। তারা দেখেন যে, ৮০ শতাংশ উপাদানগুলো ক্যানসারের কারণ হিসেবে আগে প্রকাশিত গবেষণার সঙ্গে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক হয়েছে। তার মানে সবকিছুই ক্যানসারের কারণ নয় এবং অবশ্যই বিষয়টি সত্যি কিন্তু কফির ওপর পরিচালিত এত বেশি গবেষণা আরো অনেক কিছুর তুলনায় তুচ্ছ।
মন্তব্য চালু নেই