এ কেমন বিচার? হারল ভারত, দায় চাপল অনুষ্কার ঘাড়ে!
হারল ভারত। আর তার জন্য গালাগালির তীরে পুরো এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গেলেন অনুষ্কা শর্মা! ফেসবুক, টুইটার সহ সব সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের পাতা ভরে উঠেছে অনুষ্কার প্রতি হাজারো অভিযোগে। তাঁর ‘অপরাধ’, ভারতের খেলা দেখতে তিনি এদিন সিডনি স্টেডিয়ামে ছিলেন।
কিন্তু কেন?
ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব বিভাগেই অস্ট্রেলিয়ার থেকে পিছিয়ে থেকে বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ করল ভারত। সেমিফাইনালে হারল লজ্জাজনক ৯৪ রানে। কিন্তু তার সঙ্গে গ্যালারিতে অনুষ্কার থাকা-না থাকার সম্পর্ক কী? আজ অনুষ্কা মাঠে না গেলেই বিরাট একেবারে ফাটাফাটি খেলতেন, এরকম মনে করার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে কি? তাহলে ভারত হারার যাবতীয় ক্ষোভ অনুষ্কার প্রতি উগরনো হচ্ছে কেন?
বিরাট কোহলি ও অনুষ্কা শর্মার মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে, সেটা কারোরই অজানা নয়। বিভিন্ন সময় তাঁদের একসঙ্গে দেখা গিয়েছে, চলতি বছরের শেষের দিকে তাঁরা বিয়ে করবেন বলেও সূত্রের খবর। বয়ফ্রেন্ডের খেলা দেখতে মাঠে যেতেই পারেন অনুষ্কা। কোন যুক্তিতে হারের যাবতীয় দায় তাঁর উপর চাপানো হচ্ছে, সেটা কিন্তু স্পষ্ট নয়। অনুষ্কার সিনেমা ফ্লপ করলে কেউ বিরাট কোহলিকে দোষারোপ করবেন কি?
এই প্রবণতা অবশ্য নতুন নয়। অতীতেও ক্রিকেটাররা খারাপ খেললে গ্যালারিতে উপস্থিত তাঁদের স্ত্রী বা গার্লফেন্ডকে আক্রমনের নিশানা হতে হয়েছে। ইডেনে নবাব পতৌদি জলদি আউট হয়ে যাওয়ায় এমনকি পচা ডিমও খেতে হয়েছিল শর্মিলা ঠাকুরকে। কিন্তু শর্মিলার ফ্লপ ছবির দায়িত্ব কোনওদিনও পতৌদির উপর বর্তায়নি। পতৌদির দিন অনেকযুগ আগেই শেষ হয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটারের খারাপ পারফরমেন্সের দায় তাঁর বান্ধবী বা স্ত্রীর উপর আশ্চর্যজনক ভাবে চাপানোর রেওয়াজ একই রয়েছে।
আসলে আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার শিকড় যে কতদূর ডালপালা মেলেছে, তা আমরা নিজেও জানি না। নারী যে কোনও সময়ই সহজ ‘টার্গেট’। যে কোনও কারণে, যে কোনও পরিস্থিতিতে তাঁর দিকে আঙুল তোলা সবথেকে সহজ। আজও, এই ফেসবুক-টুইটারের রমরমার যুগেও। তাই এখন আমরা ফেসবুকের ওয়ালে পোস্ট করে বা টুইট করে অনুষ্কাকে গালাগাল দিচ্ছি।
আমরা আধুনিক, শিক্ষিত, নতুন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছি। তাই মহিলাদের নিশানা করার পদ্ধতিও বদলে গিয়েছে। কিন্তু মানসিকতা আজও সেই আস্তাকুঁড়েই।
মন্তব্য চালু নেই