এসপির স্ত্রী খুন: ফের বিশ্ব গণমাধ্যমে বাংলাদেশ

চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকে (৩২) গুলি চালিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে নগরীর জিইসি মোড়ের ওয়েল ফুডের সামনে তাকে হত্যা করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

শীর্ষ এই পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী খুনের পরপরই বিশ্বের প্রভাবশালী বিভিন্ন গণমাধ্যম বেশ গুরুত্বের সঙ্গে সংবাদ প্রকাশ করেছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ‘বাংলাদেশের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী খুন’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলছে, বাংলাদেশ পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা; যিনি ইসলামি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে খুনের তদন্তে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন, সন্দেহভাজন জঙ্গিরা তার স্ত্রীকে হত্যা করেছে।

ছয় বছর বয়সী ছেলের সামনে মাহমুদা আক্তারের মাথায় গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। নিহতের স্বামী এসপি বাবুল আক্তার নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছিলেন। পুলিশের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, মাহমুদা আক্তারকে তার স্বামীর কাজের কারণে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা ‘বাংলাদেশ : ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলছে, ধর্মীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া ঊর্ধ্বতন বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা হত্যা করেছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমশিনার মোক্তার হোসাইনের বরাত দিয়ে এতে আরো বলা হয়েছে, ছেলেকে স্কুলে দেয়ার পথে উপকূলীয় শহর চট্টগ্রামে তার বাড়ির কাছে তিনজন অজ্ঞাত দুর্বৃত্ত ছুরিকাঘাতের পর মাথায় গুলি চালিয়ে মাহমুদাকে হত্যা করেছে।

হামলার পর তদন্ত শুরু করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জঙ্গিবিরোধী বেশ কিছু অভিযান পরিচালনাকারী শীর্ষস্থানীয় এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ছোট ছেলের সামনে তিন মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্ত আজ ছুরিকাঘাত ও গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে। পুলিশ বলছে, সর্বশেষ এই হামলা সন্দেহভাজন জঙ্গিরা চালিয়েছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, এপ্রিলে পদোন্নতি পাওয়া বাবুল আক্তার দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জেলায় শীর্ষ জঙ্গিদের আটক ও তাদের গোপন আস্তানা ধ্বংসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশে কৌশলে হামলার ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু, ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগার, বুদ্ধিজীবী এবং বিদেশিদের লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হচ্ছে।

গত এপ্রিলে রাজশাহী শহরে উদারপন্থী এক অধ্যাপককে তার বাড়ির কাছে চাপাতির আঘাতে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করে আইএস।

বার্তাসংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে বলছে, সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ের কারণে পরিচিত বাংলাদেশি জ্যেষ্ঠ এক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী রোববার গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন। এছাড়া পৃথক ঘটনায় চাপাতির আঘাতে এক খ্রিষ্টান মুদি দোকানিকে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায় সুনিল গোমেজ নামের ওই খ্রিষ্টান ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠি ইসলামিক স্টেট (আইএস)। আইএস নিয়ন্ত্রিত সংবাদসংস্থা আমাক নিউজ অ্যাজেন্সির বরাত দিয়ে রোববার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী গ্রুপ সাইট ইনটেলিজেন্স এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

রয়টার্স বলছে, গত মাসে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ইসলামিক স্টেট (আইএস) মিথ্যা দাবি করে ধর্মীয় মৌলবাদের বিস্তারের চেষ্টা করছে। এসব ঘটনায় স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠী জড়িত বলে স্পষ্ট প্রমাণ আছে।

এছাড়াও পাকিস্তানের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন, ভারতের দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস, এনডিটিভি ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান, অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজ, চ্যানেল নিউজ এশিয়া, আরব নিউজ, ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী হত্যার খবর প্রকাশ করা হয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই