এরশাদের আপিলের রায় ও সাঈদীর রিভিউ শুনানি এ সপ্তাহেই

জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা দুটি রিভিউসহ বেশ কয়েকটি আলোচিত মামলার শুনানি এবং রায় ঘোষণার দিন আগে থেকেই নির্ধারিত রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকার্টে।

১৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অবকাশ শেষে সপ্তাহের প্রথম দিন (৭ মে) রোববার থেকে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের পদচারণায় সরব হতে যাচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট।

কোর্ট খোলার পর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মামলার সঙ্গে আমৃত্যুকারাদণ্ড প্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে সাঈদীর এবং দণ্ড বাড়িয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা রিভিউ শুনানি, এরশাদের সাজার বিরুদ্ধে করা আপিলের রায়, নিম্ন আদালতে বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা বিধিমালা প্রণয়ন নিয়ে আপিল, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে আপিল, ঐশী রহমানের আপিলের রায়, রমনায় বোমা হামলার মতো আলোচিত মামলাগুলো নিয়ে সপ্তাহজুড়ে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে দেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণ।

রাষ্ট্র ও আসামি উভয়পক্ষের করা সাঈদীর পূর্নবিবেচনা
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ড চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা রিভিউ আবেদন ও খালাস চেয়ে আসামি সাঈদীর রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য আগামী ১৪ মে দিন ধার্য রেখেছেন আপিল আদালত। গত ৬ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার(এসকে) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এই দিন ধার্য করে আদেশ দেন।

২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের রিভিউতে দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে রিভিউ আবেদন করেন সাঈদীর আইনজীবীরা। মোট ৯০ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে আমৃত্যু কারাদণ্ড থেকে খালাস পেতে ১৬টি যুক্তি দেখানো হয়েছে। একই বছরের ১২ জানুয়ারি সাঈদীর অপরাধের জন্য তার শাস্তি আমৃত্যু কারাদণ্ড থেকে বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ আবেদন করে। রাষ্ট্রপক্ষের ৩০ পৃষ্ঠার মূল আবেদনে ৫টি গ্রাউন্ড দেখানো হয়।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। তার আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

উপঢৌকনের অর্থ কেলেঙ্কারি নিয়ে এরশাদের আপিলের রায়:
বিভিন্ন উপহার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দেয়ার অভিযোগের মামলায় ৩ বছরের সাজার বিরুদ্ধে সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের করা আপিলের রায় আগামী ৯ মে ঘোষণার জন্য দিন নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট। গত ১২ এপ্রিল বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ২৪ বছর পর দুনীর্তি মামলায় সাজার বিরুদ্ধে এরশাদের আপিল শুনানি শুরু হয়।

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষা বিধিমালা নিয়ে রায়:
প্লে গ্রুপ থেকে এ লেভেল পর্যন্ত দেশের সকল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, পুনঃভর্তি ফি ও সেশন চার্জ বিষয়ে শিক্ষা বিধিমালা গঠনে জারি করা রুলের রায় ১১ মে ঘোষণা করবেন হাইকোর্ট।গত ৫ এপ্রিল হাইকোর্টে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রায় ঘোষণার জন্য এই দিন ধার্য করেন। জানা যায়, ২০১৪ সালে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জাভেদ ফারুক শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি, পুনঃভর্তি ফি ও সেশন চার্জ বিষয়ে শিক্ষা বিধিমালা গঠনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকুরিবিধি প্রণয়ন:
নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করতে সরকারকে আগামী ৮ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ওই দিন এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। গত ৪ এপ্রিল গেজেট প্রকাশে রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন। ওই দিন আদালতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সময় আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে বলেন, ‘এরপর আর কোন অজুহাত দেখাবেন না।’এর আগেও গেজেট প্রকাশে কয়েক দফা সময় নেয় সরকার।

বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের আপিল:
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানির জন্য ৮ মে দিন ধার্য রয়েছে। একইসঙ্গে নিয়োগ দেয়া ১২ অ্যামিকাস কিউরিকে (আদালতের বন্ধু) এই সময়ের মধ্যে লিখিত বক্তব্য দাখিল করতে বলা হয়েছে। গত ৭ মার্চ প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের বিচারপতির বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

রমনায় বোমা হামলা:
রমনায় বোমা হামলার ঘটনায় করা হত্যা মামলার আপিলের পরবর্তী শুনানি আগামী ১৪ মে অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিনই শুনানি শেষ হবে বলে জানিয়েছেন এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোরশেদ। চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল শুনানি শুরু হয়। ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনাস্থলেই মারা যান ৯ জন।

ঐশীর আপিল শুনানি:
পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমানের আপিলের চূড়ান্ত শুনানি কোর্ট খোলার পরই শুরু হবে। এর আগে গত ১০ এপ্রিল ঐশী রহমানের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন হাইকোর্ট। গত ৩ এপ্রিল মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশী রহমানের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য তাকে আদালতে হাজিরের জন্য ডিআইজি প্রিজনকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গত ১২ মার্চ পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত ঐশীর ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়।



মন্তব্য চালু নেই