এমপিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেব : প্রধানমন্ত্রী

গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এমপিদের নিরাপত্তা যেন নিশ্চিত হয় সে ব্যবস্থা করব। লিটনের হত্যার সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই ধরব এবং শাস্তি নিশ্চিত করব। এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে এটাই আমরা চাই।

রোববার জাতীয় সংসদে মনজুরুল ইসলাম লিটনের মৃত্যুতে আনা শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের পর শোকপ্রস্তাবটি পাস হয়। এরপর মরহুমের সম্মানে সংসদের বৈঠক কিছুক্ষণের জন্য মুলতবি রাখা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে বিএনপি-জামায়াত কত মানুষকে যে হত্যা করেছে তার কোনো হিসাব নেই। এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সে রুখে দাঁড়িয়েছিল। এটাই বুঝি তার কাল হয়ে গেল। সেখানকার মানুষের জীবনে লিটন শান্তি ফিরিয়ে এনেছিল। এলাকার মানুষের জীবনে স্বস্তি এনেছিল। এটিই তার কাল হয়েছে।

সৌরভকে গুলি করেনি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি কেন একজন শিশুকে গুলি করতে যাবেন? লিটনের বাবা তো আওয়ামী লীগ করত। কিন্তু এ কারণে তার গুলি সিজ করে নেয়া হয়।

আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। এর প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। এজন্য লিটনকে হত্যা করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেরই খুব কষ্ট লাগছে। লিটন এমন একটি এলাকা থেকে নির্বাচিত যে এলাকা সন্ত্রাসীদের আখড়া, জামায়াত-শিবিরের আখড়া। ২০১৩ সালে ওই এলাকায় ব্যাপক সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট পুড়িয়ে তাণ্ডব চালায়। উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান একজন মহিলা, তার বাড়িতে হামলা চালায়। এরপরই দুজন পুলিশ হত্যা করা হয়। এরপর ২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াত মিলে শত শত স্কুল পুড়িয়ে দেয়। জামায়াত সেখানে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় ছিল।

একই জেলার এমপি ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, স্বাভাবিক মৃত্যু তার হয়নি। তাকে গুলি করে পাখির মত হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, লিটন কোনো শিশুকে গুলি করেনি। কিন্তু আমরা মিডিয়ার কাছে হেরে গিয়েছিলাম। কারণ লিটন সেই সময় আত্মরক্ষার জন্য গুলি করেছিলেন। কিন্তু শিশু সৌরভের পায়ে লাগে। কী পরিকল্পনায় তাকে হত্যা করা হয়েছিল আমরা তার সঠিক তদন্ত চাই।

প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, যাকে নিয়ে আলোচনা করছি তাকে কিন্তু এই সংসদে অনেকেই চেনেন না। কারণ তিনি নীরবে সংসদে আসতেন, নীরবে বাসায় চলে যেতেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরও কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। তার বাসায় পুলিশি পাহারা ছিল। কিন্তু নির্বাচনের কথা বলে পুলিশ তুলে নেয়া হলো। তার অস্ত্র ছিল। কিন্তু সেটাও সিজ করে নেয়া হয়েছে। তাই এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্র। সংসদ সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য সরকারকে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

একই জেলার এমপি হুইপ মাহবুব আরা গিনি বলেন, তাকে আমরা কোনো সাহায্য সহযোগিতা করতে পারিনি। একজন এমপি হওয়া সত্ত্বেও শিশুকে গুলি করার অপরাধে তাকে অন্তর্বর্তীনকালীন জামিন নিতে হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সেদিন আমরা সবাই হতবাক হয়েছিলাম। সংসদ সদস্যরা স্তম্ভিত হয়েছিলাম। লিটন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ছিলেন। বিএনপি-জামায়াত অধ্যুষিত এলাকায় তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কাজ করেছেন। জামায়াতের নেতাকে মিটিং করার জন্য তিনি ওই এলাকায় ঢুকতে দেননি। এজন্য তাকে হত্যা করা হতে পারে। আমাদের চৌকস পুলিশ বাহিনী সেখানে কাজ করছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই ধরে বিচার করব।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, এ হত্যার মূল নায়ক জামায়াত-শিবির আর বিএনপি। আর এক নম্বর আসামি বেগম খালেদা জিয়া। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, অবিলম্বে চিরুনি অভিযান চালান। হত্যাকারীদের ধরুন।

এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, শামীম ওসমান ও কাজী ফিরোজ রশীদ।



মন্তব্য চালু নেই