এবার পুলিশকে কামড়ে দিয়েছে তরুণী
“একদম কেউ সামনে আসবে না। এলেই ঘ্যাঁক!”
রবিবার সন্ধ্যা থেকে রাত। প্রথমে একটি পানশালায় এবং পরে বাইরের রাস্তায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এক তরুণী। পরনে জিনস্, হাই নেক গেঞ্জি ও ব্লেজার। দোসর তার সঙ্গী যুবক। উদ্দাম ওই তরুণী কখনও নাচছেন, কখনও গাইছেন, কখনও চিৎকার করছেন। ত্রস্ত অবস্থায় তাঁদের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এক অফিসার-সহ দুই পুলিশকর্মী। ভিতরে তখন দু’জন নিরাপত্তারক্ষী নিজেদের হাত চেপে কাতরাচ্ছেন। ধস্তাধস্তিতে জ্যাকেটের পুলিশি তারা লাগানো ‘স্ট্র্যাপ’ ছিঁড়ে গিয়েছে। তরুণী বারবার তাঁর জামা টেনে বলছেন, “এই পুলিশ, এই পুলিশ, আমায় ধরবি?” কথা বলতে বলতে আচমকাই এক পুলিশকর্মীর হাতে কামড় বসালেন ওই তরুণী। রাজপথে রাতের ওই দৃশ্য রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছেন একদল উৎসুক জনতা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তখন ক্রমশ মহিলার থেকে দূরে সরার চেষ্টা করছেন ওই পুলিশকর্মীরা। থানা-লালবাজারের কন্ট্রোল রুমে ফোন করে সাহায্য চাইছেন তাঁরা। কিন্তু ব্যাপারটা কী?
পুলিশের অভিযোগ, রবিবার রাতে ফুলবাগানের নারকেলডাঙা মেন রোডে কাদাপাড়ার কাছে একটি পানশালায় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় কর্মীদের মারধর শুরু করেন ঋতুপর্ণা সেন নামে বছর একুশের ওই তরুণী। সঙ্গে যোগ দেন তাঁর সঙ্গী যুবক অশোক সারোগী। পানশালার দু’জন নিরাপত্তারক্ষীর হাতে কামড় বসিয়ে দেন তাঁরা।
অবস্থা বেগতিক দেখে পানশালা কর্তৃপক্ষ স্থানীয় ফুলবাগান থানায় খবর দেন। ফুলবাগান থানার টহলদার তিন পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই তরুণীকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। অভিযোগ, তখনই পুলিশকর্মীদের আক্রমণ করে হাতে কামড়ে দেন ঋতুপর্ণা। আরও অভিযোগ, ওই যুবক পড়ে গেলে ফের পুলিশকে আক্রমণ করেন ওই তরুণী। পুলিশের পায়ে কামড় বসিয়ে দেন সঙ্গী যুবকও। পরে ওই যুবককে কোনওক্রমে নিরস্ত করা গেলেও মহিলা পুলিশকর্মীর অভাবে তরুণীকে প্রথমে নিরস্ত করতে পারেননি ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশকর্মীরা। থানা থেকে মোটরবাইক করে দুই পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছন। তাঁদের সঙ্গে আসেন আরও দুই মহিলা পুলিশকর্মী। তাঁদের সাহায্যে তরুণীকে নিরস্ত করা হয়। আটক করা হয় তাঁর সঙ্গীকেও। ততক্ষণে জখম হয়েছেন পানশালার দুই নিরাপত্তারক্ষী-সহ চার পুলিশকর্মী। যাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। কর্তৃপক্ষের তরফে মৈনাক বাগচী থানায় অভিযোগ দায়ের করলে রবিবার রাতেই তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার শিয়ালদহ আদালতে হাজির করা হলে ওই দু’জনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজত দেন বিচারক।
পুলিশের দাবি, জগদ্দলের পশ্চিম ঘোষপাড়ার বাসিন্দা ঋতুপর্ণা জানিয়েছেন, রবিবার মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। অন্য দিকে, অশোক পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর বাড়িও জগদ্দলের ওই পাড়াতেই।
ওই যুবক এবং তরুণী রবিবার বিকেলে কাদাপাড়ার কাছে ওই পানশালায় যান।
পানশালার কর্মীরা পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, ঘণ্টা দেড়েক সেখানে ছিলেন দু’জনে। কিছুক্ষণ পরেই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ওই তরুণী এবং তাঁর সঙ্গী পানশালায় গোলমাল শুরু করেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, বছর খানেক আগে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে মত্ত এক মহিলাকে নিরস্ত করতে গিয়ে নাজেহাল হতে হয়েছিল পুলিশকর্মীদের। থানায় মহিলা পুলিশ না থাকায় শেষে ফুটপাথবাসী দুই মহিলার সাহায্যে নিতে হয়। তার ঠিক মাস খানেক আগে বৌবাজার থানায় গভীর রাতে চড়াও হয়েছিলেন এক মহিলা। কর্তব্যরত অফিসারের গায়ে চিলি চিকেনের ঝোল ঢেলে দিয়েছিলেন তিনি। পুলিশ সূত্রের খবর, তখনও মহিলা পুলিশের অভাবে তাঁকে আটকাতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের একাংশের অভিযোগ, কলকাতা পুলিশ বাহিনীতে মহিলা কর্মীর অভাব কতটা, রবিবারের ঘটনা ফের তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, রাতে লালবাজার কন্ট্রোলে মহিলা পুলিশের একটি দল থাকে। সেই সঙ্গে প্রতিটি ডিভিশনের একটি এবং দু’টি থানায় মহিলা পুলিশকর্মী রাখা হয়। যাতে প্রয়োজন মতো তাঁদের ঘটনাস্থলে পাঠানো যায়। কিন্তু নিচুতলার পুলিশকর্মীদের অভিযোগ, রাতে বিভিন্ন থানাতেই মহিলা কর্মী থাকেন না। এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলছেন, “বাহিনীতে মহিলা কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু রবিবার মহিলা পুলিশকর্মী ঠিক সময়ে ঘটনাস্থলে যান।”
ঠিক কী হয়েছিল রবিবার রাতে? পুলিশ জানায়, ওই পুলিশকর্মীরা প্রথম পানশালার বাইরে নিয়ে যান ওই যুগলকে। কিন্তু তাঁরা উল্টে পুলিশকর্মীদেরই মারধর করেন এবং কামড়ে দেন। সেই সময়ে মহিলা পুলিশ না থাকায় কার্যত ত্রস্ত অবস্থা হয়েছিল ওই পুলিশকর্মীদের। পরে থানা থেকে মহিলা পুলিশ-সহ অন্য পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থলে গেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন তাঁরা। আটক করে তাঁদের ফুলবাগান থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানার পুলিশকর্মীদের দাবি, অনেক রাত পর্যন্ত হাজতের ভিতরেও চিৎকার-চেঁচামেচি করে থানা মাতিয়ে রেখেছিলেন অশোক ও ঋতুপর্ণা।
মন্তব্য চালু নেই