ছাত্র আন্দোলনের চাপের কাছে সরকারের ‘নতি’ স্বীকার : সরছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

চাপের কাছে শেষমেশ নতি স্বীকার সরকার ও উপাচার্যর। পদত্যাগ করছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিত্‍ চক্রবর্তী। অনশনকারীদের মাঝে এসে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এসএমএস করে শিক্ষামন্ত্রীকে পদত্যাগের কথা জানিয়ে দিয়েছেন অভিজিত্‍ চক্রবর্তী। বিরোধীদের কটাক্ষ, শেষমেশ দলীয় রাজনীতিহীন ছাত্র আন্দোলনের কাছে মাথা নত করতেই হল সরকারকে।

শ্লীলতাহানিকাণ্ডের পর কেটে গিয়েছে চারমাস।হোক করলব। মিটিং, মিছিল। অনশন। জারি ছিল লাগাতার আন্দোলন। পড়ুয়াদের আন্দোলনকে প্রথমদিকে খাটো করে দেখেছে সরকার, শাসক দল। উড়ে এসেছে নাদা বিদ্রূপ। বারবার সরকার পাশে দাঁড়িয়েছে উপাচার্যর। শেষমেশ সেই সরকারই মাথা নত করল ছাত্রদের কাছে।

সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন শিক্ষামন্ত্রী। কথা বলেন অনশনকারীদের সঙ্গে। খানিক পরেই আচমকা উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রী। ক্যাম্পাসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢুকতেই হোক কলরব স্লোগান ওঠে অনশন মঞ্চ থেকে। দাবি, উপাচার্যর পদত্যাগ চাই।

অনশনমঞ্চ পেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ঢোকেন ভেতরে। কথা বলেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। সূত্রের খবর, ভেতর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ফোন করেন উপাচার্যকে। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয় অভিজিত্‍ চক্রবর্তীর। তারপরই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মোবাইলে এসএমএস আসে উপাচার্যর। বাইরে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, সরছেন অভিজিত্।

মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় উল্লাসে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারী ও উপস্থিত পড়ুয়ারা।

বিরোধীদের কটাক্ষ, শেষমেশ দলীয় রাজনীতিহীন ছাত্র আন্দোলনের কাছে মাথা নত করতেই হল সরকার এবং তাঁর অনুগত উপাচার্যকে। তাদের প্রশ্ন, উপাচার্যর নিয়োগ কর্তা যেখানে আচার্য, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বশাসিত সংস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর এই হস্তক্ষেপ কেন?

কৃষ্ণেন্দু অধিকারী ও পার্থপ্রতিম ঘোষ, এবিপি আনন্দ

চাপে সরছেন অভিজিৎ

শেষপর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের সামনে মাথা নত করল রাজ্য সরকার। পড়ুয়াদের পুলিশ দিয়ে মার খাওয়ানোর পর থেকে লাগাতার যাদবপুরের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর পাশে সরকার দাঁড়ালেও শেষপর্যন্ত আন্দোলনের সামনে হার মানল তারা।

গত বছর ১৬ সেপ্টেম্বর যাদবপুরের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তীর ক্যাম্পাসে পুলিশ ডাকার সিদ্ধান্তের মধ্যে দিয়ে যাবতীয় গণ্ডগোলের সূত্রপাত। কিন্তু, শাসক দল এবং রাজ্য সরকার সবসময় উপাচার্যের পাশেই দাঁড়িয়েছে। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে ছাত্র-ছাত্রীদের হোক কলরব মিছিলের পাল্টা মিছিল করেছে তৃণমূল।

নাম না করে যাদবপুরের ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনের সঙ্গে মদ-গাঁজা জড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টাও চোখে পড়েছে।

ছাত্র-ছাত্রীরা যখন উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সরব তখন পদে পদে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ছাত্র-ছাত্রীরা চাইলেই উপাচার্যকে সরানো যায় না।

আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীরা কালো পতাকা দেখানোয় তাঁদের উদ্দেশে চ্যালেঞ্জও ছুঁড়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।বলেছেন, কালো পতাকা দেখিয়ে থামানো যাবে না আমাকে।কয়েক দিন আগে পর্যন্ত উপাচার্যের পাশে থাকার বার্তাই দিয়ে গিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।বলেছেন, সূর্য-বিমান চিঠি দিলেই কি উপাচার্যকে সরাতে হবে!

শুধু মন্ত্রী নন, উপাচার্যের দাবিকে সঠিক আখ্যা দিতে আসরে নামানো হয়েছে পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থকেও যিনি প্রকাশ্ে বলেছিলেন, উপাচার্যের প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা ছিল।

শিক্ষা মহলের একাংশের বক্তব্য, সরকার এবং শাসক দল যেভাবে প্রথম থেকে আন্দোলরত পড়ুয়াদের কার্যত প্রতিপক্ষ ধরে নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে উপাচার্যের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাতে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। হোক কলরবের পাল্টা রাজনৈতিক মিছিলে সমস্যা আরও বেড়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূলের অনুগত বলেই কি উপাচার্যের পাশে এভাবে দাঁড়াচ্ছে সরকার? কেন অভিজিৎ চক্রবর্তীর ভূমিকা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হওয়ার পরও সেই তাঁকেই স্থায়ী উপাচার্য পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে? কিন্তু শাসকের অনড় মনোভাবের মুখেও পড়ুয়ারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায়, শেষপর্যন্ত বাধ্য হয়েই সরকার উপাচার্যকে সরানোর পথে হাঁটল বলে মত রাজনৈতিক মহলের একাংশের।



মন্তব্য চালু নেই