এবার পরিবহন শ্রমিকদের হামলার শিকার সমকালের প্রতিবেদক

৭১ টেলিভিশনের প্রযোজক আতিক রহমানের ওপর হামলার কয়েক ঘণ্টা পর এবার পরিবহন শ্রমিকদের হামলার শিকার হয়েছেন দৈনিক সমকালের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইন্দ্রজিৎ সরকার।

হামলার পর পাশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেছেন ইন্দ্রজিৎ। তবে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) ম্যাজিস্ট্রেট হওয়ায় এ বিচার করা তার ‘এখতিয়ারভুক্ত নয়’ বলে দাবি করেন ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুস সালাম। সোমবার দুপুরে রাজধানীর আসাদগেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ইন্দ্রজিৎ সরকার বলেন, নিউ ভিশন পরিবহনের বাসে দুপুরে ফার্মগেট থেকে মিরপুর-১ নম্বরে যাচ্ছিলাম। সামান্য পথ না যেতেই বাসটি থামালেন ভ্রাম্যমাণ আদালত সংশ্লিষ্টরা। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগছিল। তাই ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করে বাস থেকে নেমে অন্য বাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কন্ডাক্টরকে ভাড়ার টাকা ফিরিয়ে দিতে বললে জবাবে জানায়, ম্যাজিস্ট্রেট তাদের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। আমি বললাম, ‘সেজন্য তো আমি দায়ী নই। আমার টাকা ফেরত দিন।’ তখনই আরেক পরিবহনকর্মী এসে আমার ওপর আক্রমণ করে বসল।

ইন্দ্রজিৎ বলেন, আমি যখন বললাম ‘আপনাদের পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা নাকি পাঁচ লাখ টাকা সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। আমি আপনাদের বাসে যাব না, তাই ভাড়া ফেরত চেয়েছি।’ এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশে ভিড় করে থাকা পরিবহন খাতের নেতাকর্মীরা এসে আমাকে ঘিরে ধরেন, অকথ্য ভাষায় কথা বলেন এবং টেনেহিঁচড়ে একপাশে নিয়ে যান। আমি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলে আমাকে কিল-ঘুষি মারে।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের সঙ্গে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে উদ্ধার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যান। ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘আমি যখন ম্যাজিস্ট্রেটকে বললাম, আপনার সামনেই যে আমাকে মারধর করা হলো, সে ব্যাপারে তো কিছু বলবেন?’ জবাবে ম্যাজিস্ট্রেট উত্তর দিলেন, এটা তার বিষয় নয়। তিনি শুধু পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো দেখছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুস সালাম বলেন, আমি যেখানে বসে ছিলাম তার ৯-১০ হাত দূরে ঘটনাটি ঘটেছে। আমি দূর থেকে ভিড় দেখতে পাই। আমি বিআরটিএ’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ ধরনের ঘটনায় সাজা দেয়ার এখতিয়ার এবং ক্ষমতা আমাকে দেয়া হয়নি। তিনি (ইন্দ্রজিৎ) যখন আমার কাছে এসে অভিযোগ দেন তখন আমি তাকে সুনির্দিষ্টভাবে হামলা ও মারধরকারীকে শনাক্ত করতে বলি। তবে তিনি কাউকে শনাক্ত করতে পারেননি। কাউকে শনাক্ত করতে পারলে এবং এ বিষয়ে আমাকে লিখিতভাবে অভিযোগ করলে আমি তাকে থানায় এনডোর্স করতে পারতাম।

ম্যাজিস্ট্রেটের বক্তব্যের বিষয়ে ইন্দ্রজিৎ বলেন, ‘সেখানে পরিবহন খাতের অর্ধশত নেতাকর্মী ছিলেন। তাদের বেশিরভাগই আমাকে টেনেহিঁচড়ে এবং মারধরের ঘটনায় অংশ নেন। ম্যাজিস্ট্রেট জানতে চাইলে আমি তাদের দেখিয়ে দিয়েছি। হামলাকারী তো একজন ছিল না যে তাকে আলাদাভাবে শনাক্ত করব বা নাম বলব। আর ম্যাজিস্ট্রেটের আইনি সীমাবদ্ধতার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তিনি একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবেও সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেননি বরং নগ্নভাবে হামলাকারী পরিবহনকর্মীদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন।’



মন্তব্য চালু নেই