এবার তিস্তায় ইলিশ!

দেখতে ঠিক ইলিশের মতো, ইলিশ নয়- তবে ইলিশ প্রজাতির। তিস্তায় এমন মাছ ভাসতে দেখে পাড়ের মানুষের আনন্দ আর ধরে না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট মৎস্য বিভাগের লোকজন জানিয়ে দিলেন- ওই মাছ ইলিশ নয় ‘টেনিওয়ালোসা’ গোত্রের ‘টোলি’ মাছ। তবে একই গোত্রভুক্ত ইলিশ।

না, বাংলাদেশের তিস্তায় নয় ওপারের তিস্তায় দেখা গেছে মাছ এই ইলিশের মতো মাছ। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ি দুই নম্বর স্পারের কাছে তিস্তা নদীতে দুটি বড় মাপের টোলি মাছ ভেসে থাকতে দেখে স্থানীয় মৎস্যজীবীরা মৎস্য দফতরে খবর দেন। মাছ দুটি পরীক্ষার জন্য জল থেকে তুলে বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা হয়। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা পার্থসারথি দাস বলেন, ‘ইলিশ গোষ্ঠীভুক্ত মাছ টোলি। অনেকে এটাকে ইলিশ বলে ভুল করেন। রূপে ও স্বাদে এই মাছ ইলিশের মতো। ডিম ছাড়ার জন্য মিষ্টি জলে আসে। হলদিবাড়ি সংলগ্ন বেলতলির কাছে ওই মাছ পাওয়া যায়। উত্তরবঙ্গের নদীতে টোলি প্রজাতির ইলিশ রয়েছে। কোচবিহার জেলার বলরামপুরে তোর্সা নদীতে ওই ইলিশ পাওয়া যায়। এটা নিজেও দেখেছি।’

তবে মৎস্য দফতরের বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সমুদ্রের মাছ হলেও টোলি কী করে তিস্তায় এসে পড়ল তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রধান মৎস্য বিশেষজ্ঞ সুদীপ বরাট বলেন, ‘তিস্তার জলে টেনিওয়ালোসা গোত্রের টোলি প্রজাতির ইলিশের সন্ধান মেলা মোটেও আশ্চর্যের নয়। আমরা অনুসন্ধান চালিয়ে কোচবিহারের কালজানি নদীতে ওই মাছের খোঁজ পেয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘এখন জল বাড়ছে। আত্রেয়ীর মাধ্যমে তিস্তায় তাই এই মাছ চলে আসতে পারে।’

দুই নম্বর স্পার এলাকার স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, মঙ্গলবার সকালে মাছ ধরতে গিয়ে ইলিশের মতো দেখতে প্রায় এক কেজি ওজনের টোলি মাছ ভাসতে দেখা যায়।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গৌতম সাহা জানান, বর্ষার মৌসুমে ইলিশের মতো টোলি প্রজাতির মাছ ডিম ছাড়তে মিষ্টি জলের খোঁজে তিস্তা নদীর উপরের দিকে উঠে আসে। কিন্তু জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া এলাকায় এই প্রথম মিলেছে।

শুধু টোলি নয়। কাজলি, চাপিলা, বাছারের মতো বাংলাদেশের নদীর মাছ তিস্তার পানিতে মিলছে বলে জানান দুই প্রবীণ মৎস্যজীবী। তাদের মতে, ১৯৬৮ সালের বন্যার আগে তিস্তার পানিতে মাঝে মধ্যে ইলিশ উঠত। বন্যার পরে আর দেখা মেলেনি। তবে ইদানিং চাপিলা, কাজলি, বাছার মাছ মিলছে। ওই মাছ সাধারণত বাংলাদেশের নদীতে পাওয়া যায়।

এখানকার জেলা মৎস্য দফতর জানায়, করতোয়া নদীর মাধ্যমে গঙ্গার সঙ্গে যুক্ত ছিল তিস্তা। ১৭৮৭ সালে বিধ্বংসী বন্যায় তিস্তা গতিপথ পাল্টে বাংলাদেশের লালমণির হাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম হয়ে চিলামারি নদী বন্দরের কাছে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলেছে। গতিপথ পরিবর্তনের ফলে সিকিমের ৭ হাজার দুশো মিটার উঁচু হ্রদে উৎপন্ন ৩১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীর বাস্তুতন্ত্রের বিরাট পরিবর্তন হয়েছে। আগে গঙ্গা হয়ে ইলিশ তিস্তার মিঠা পানিতে ঢুকে পড়ত। গঙ্গা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় তিস্তায় এখন ওই মাছ বিরল।



মন্তব্য চালু নেই