এবার টেস্ট জয়ের মিশন

ফতুল্লায় জয় দিয়ে প্রস্তুতি ম্যাচ শুরু হরেছিল মুমিনুল হকের বিসিবি একাদশ। সেই জয়টি যেন এবার বাংলাদেশের ক্রিকেট আর্শীবাদ হয়ে এসেছিল। তারই ধারবাহিকতায় কেটেছে ১৬ বছরের অপ্রাপ্তি। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার পর একমাত্র টি-২০ তে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দেয় স্বাগতিকরা। টাইগারদের লক্ষ্য এবার টেস্ট সিরিজ জয়।

মঙ্গলবার খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে শুরু হবে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটি। সকাল ১০টায় এ ভেন্যুতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। খুলনার এ ভেন্যুটি মুশফিক বাহিনীর জন্য লাকি গ্রাউন্ড হিসেবে বেশ খানিকটা পরিচিতিও পেয়েছে। এর আগে এ মাঠে দুটি ম্যাচ খেলেছিল টাইগাররা। তার একটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জয় আর অপরটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হারলেও পাঁচদিনে খেলা গড়িয়েছিল।

তাই তো বলা যায়, হোম অব ক্রিকেটে দুরন্ত ফর্মের পর খুলনায় বাঘের ডেরায় ফিরেছে ক্রিকেট। মুশফিক বাহিনীর সামনে এবার এসিড টেস্ট। ধারাবাহিকতার তুলিতে পুরো সিরিজটি রাঙ্গিয়ে নেওয়ার দুরন্ত এক সুযোগ।

অপরদিকে সমালোচনার দারুণ একটা জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত পাকিস্তানও। যদিও সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটের সিরিজ অনেকটা একতরফা-ভাবে শেষ হলেও টেস্ট সিরিজকেই আসল পরীক্ষার মঞ্চ হিসেবে আগেই উল্লেখ করেছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। টেস্ট র‌্যাংকিংয়ে পাকিস্তান (চতুর্থ) যোজন যোজন এগিয়ে থাকলেও দু’শিবিরেরই ধারণা, অন্যরকম এক চ্যালেজ্ঞ দেখতে পাবেন খুলনার ক্রিকেটপ্রেমীরা।

বিশেষ করে প্রতিটি সিরিজের আগে স্বাগতিক দলের লক্ষ্য থাকে জয়। ওয়ানডের পর এসেছে টি-২০ তে জয়। এবার মিশন টেস্ট সিরিজ। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দল এখনও সেভাবে প্রতিষ্ঠিত দলে পরিণত হতে পারেনি। তবে টাইগারদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স মুশফিক বাহিনীকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে।

তবে একটি জায়গাতে আছে ভয়ও আছে বাংলাদেশের। কারণ ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে ২০১ ‘র এপ্রিলের পর থেকে গত দুই বছরে বাংলাদেশ খেলেছে মাত্র ৯টি টেস্ট ম্যাচ। এ সময়ের চার প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ে। যেখানে কেবল জিম্বাবুয়ে ছাড়া আর কারো বিপক্ষেই জয়ের দেখা পায়নি মুশফিক বাহিনী।

তবে এই সময়ে পাকিস্তান খেলেছে ঠিক বাংলাদেশের দ্বিগুন ১৮টি টেস্ট। এছাড়া টেস্ট স্ট্যাটাসের ১৪ বছরে এ দুলের মুখোমুখিতে জয় তো নেই, এমনকি ড্রও করতে পারেনি বাংলাদেশ।

কিন্তু এমন পরিসংথ্যান ছিল ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজের আগেও। পাকিস্তানের বিপক্ষে চলতি সিরিজে যেন সব আক্ষেপ একবারেই পূরণ করে নেয়ার মিশনে নেমেছে স্বাগতিকরা। ওয়ানডে ও টি-২০ তে পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করার পর এবার টেস্ট সিরিজেও দুর্দান্ত কিছু করার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।

প্রথম টেস্টের আগে সোমবার সকাল ১০টায় খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে শেষ অনুশীলনে নামে স্বাগতিকরা। প্রায় আধা ঘণ্টা নেটে ঘাম ঝরিয়েছেন স্বাগতিক দলের খেলোয়াড়রা। বোলাররাও নিজেদের ঝালিয়ে নিলেন। ওয়ানডে ও টি-২০’র পর মাত্র তিনদিনের ব্যবধানে টেস্ট খেলার জন্য ফের মাঠে নামতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। ফলে ভিন্ন ফরম্যাটের সঙ্গে মানিয়ে নেয়াটাও বড় একটা চ্যালেঞ্জ মুশফিকের দলের জন্য।

পেশাদারিত্বের এ যুগে কাজটা কঠিন হলেও অসাধ্য নয়। সোমবার তাই দ্যর্থহীন-ভাবেই মুশফিকুর রহিম বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেট সহজ নয়। তার ওপর ওরা টেস্টের চার নাম্বার দল। সেদিক থেকে বলবো চ্যালেঞ্জ আমাদের জন্য অন্যরকম। ওদের টেস্ট স্কোয়াডে অভিজ্ঞ কিছু খেলোয়াড় অন্তর্ভূক্ত হয়েছে। অবশ্যই তাদের ব্যাটিং লাইনআপটা একটু শক্তিশালী। তবে এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে যতগুলো টেস্ট খেলেছি এতোটা ভাল মানসিক অবস্থা নিয়ে কখনোই মাঠে নামেনি বাংলাদেশ।’

পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-২০’র দুই ফরম্যাটে না থাকলেও চলমান সিরিজে টেস্ট দলে যোগ দিয়েছেন সাত সদস্য। ইমরুল কায়েস, শুভাগত হোম চৌধুরী, তাইজুল ইসলাম, জুবায়ের হোসেন লিখন, শাহাদাত হোসেন, মোহাম্মদ শহিদরা চলতি সিরিজে প্রথমবারের মতো যোগ দিয়েছেন দলের সঙ্গে। এছাড়া টেস্ট দলে অভিষেকের অপেক্ষায় রয়েছেন সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস ও মোহাম্দ শহিদ।

পক্ষান্তরে ওয়ানডে, টি-২০’র চেয়ে নিঃসন্দেহে অনেকটাই এগিয়ে পাকিস্তানের টেস্ট দল। মিসবাহ-উল-হকের নেতুত্বাধীন দলটি টেস্ট ফরম্যাটে হারিয়ে এসেছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, শ্রীলংকার মতো দলকে। টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে চার নাম্বারে থাকা দলটির নেতাও মনে করছেন খুলনা টেস্টের প্রথম দিন থেকেই ভিন্ন এক পাকিস্তানকেই দেখা যাবে।

এ বিষয়ে মিসবাহর ভাষ্য, ‘ওয়ানডে, টি-২ ০শেষ। এটা (টেস্ট) সম্পুর্ণ ভিন্ন বলের খেলা। যদিও বাংলাদেশে আমাদের সময়টা হয়ত ভালো কাটছে না। তবে আমি বিশ্বাস করি, সিরিজ জেতার ক্ষমতা রয়েছে আমাদের।’

সোমবার টেস্ট ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনের পর পরই মাঠের অনুীলনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে মিসবাহ বাহিনী। তবে এখন দেখার অপেক্ষা খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে কতটা নিজেদের মেলে ধরতে পারে হারের বৃত্তবন্দী সফরকারী পাকিস্তান।

টিম নিউজ:
বাংলাদেশ: বাংলাদেশের হয়ে সৌম্য সরকারের টেস্ট অভিষেক হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। ওয়ানডে সিরিজে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা সৌম্য টেস্ট্ অভিষেকের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। ওয়ানডে ও টি-২০ তে দলে না থাকা ইমরুল কায়েস তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেনিংয়ে যোগ দিবেন। নতুন পেসার মোহাম্মদ শহিদকে দলে নেয়া হলেও পেস অ্যাটাকিংয়ে শাহাদাত হোসেনকে বেছে নিতে পারেন নির্বাচকরা। ফলে অভিষেকের জন্য আরও অপেক্ষায় থাকতে হবে শহিদকে।

পাকিস্তান: ওপেনিংয়ে দলে জায়গা পাওয়ার জন্য সামি আসলাম ও বাবর আজমের মধ্যে লড়াই হতে পারে। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) নির্বাচকরা বেছে নিতে পারেন সামি আসলামকে। মিডল-অর্ডারে ইউনিস খান ও মিসবাহ-উল-হক ফিরে আসায় হারিস সোহেলকে বেঞ্চে বসে সময় কাটাতে হতে পারে। পেস বোলিংয়ে জুনায়েদ খানের সঙ্গে ওয়াহাব রিয়াজ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ইয়াসির শাহর অনুপিস্থিতিতে সাঈদ আজমলের সঙ্গে জুলফিকার বাবর থাকতে পারেন।

সম্ভাব্য একাদশ:
বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, তাইজুল ইসলাম, জুবায়ের হোসেন, রুবেল হোসেন, শাহাদাত হোসেন/ মোহাম্মদ শহিদ

পাকিস্তান: সামি আসলাম, মোহাম্মদ হাফিজ, আজহার আলী, ইউনিস খান, মিসবাহ-উল-হক (অধিনায়ক), আসাদ শফিক, সরফরাজ আহমেদ, ওয়াহাব রিয়াজ, জুনায়েদ খান, সাঈদ আজমল ও জুলফিকার বাবর।

পিচ এবং কন্ডিশন: খুলনার মাঠ স্পিন-বান্ধব পিচ হবে বলেই মনে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সাকিব, তাইজুল ও জুবায়েররা পাকিস্তানকে যেমন বিপদে ফেলতে পারেন, ঠিক তেমনি সাঈদ আজমলরা বিষিয়ে তুলতে পারেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জীবন। পেসাররা কিছুটা সহায়তা পেলেও পেতে পারেন পিচ থেকে। আবহাওয়া অফিসের রিপোর্ট মতে, টেস্টের প্রথম চারদিন বৃষ্টি বাগড়া দেয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।



মন্তব্য চালু নেই