এডিপি কাটছাঁটে ৮৫ বিভাগের সঙ্গে বসছে কমিশন

চলতি ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) কাটছাঁটের প্রক্রিয়া শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশন। ঘোষিত এডিপি শতভাগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কমানো হবে বৈদেশিক সহায়তাসহ বরাদ্দের পরিমাণ। এ লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের অক্টোবর পর্যন্ত সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের ওপর ভিত্তি করে সংশোধিত এডিপিতে প্রকল্পভিত্তিক প্রকল্প-সাহায্যের বরাদ্দ নির্ধারণের জন্য সভা আগামীকাল শুরু হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামী ৩০ এবং ৩১ ডিসেম্বর সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে আলাদা আলাদা প্রকল্প পর্যালোচনা বৈঠকে বসবে কমিশন। বৈঠকে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি ও বৈদেশিক সহায়তা ব্যয় পর্যালোচনা করা হবে। এর ওপর ভিত্তি করে সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) প্রকল্পভিত্তিক প্রকল্প-সাহায্যের বরাদ্দ নির্ধারণ করা হবে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি-২ সম্মেলন কক্ষে দু’দিনের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। মোট তিনটি সেক্টরে আলাদা আলাদা ভাবে ১৫টি বিভাগে বিভক্ত করে সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

৩০ ডিসেম্বর সকালে আলাদা আলাদা ভাবে ৫টি বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে বসবে পরিকল্পনা কমিশন। সকালে ৪৩টি এবং বিকালে ৪২টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে পর্যালোচনা সভায় বসছে পরিকল্পনা কমিশন। সকালে ৭টি সেশন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রায় তিনশ’ কর্মকর্তা উপস্থিত থাকবেন। বিকেলে ৩টি সেশনে উপস্থিত থাকবেন প্রায় দু’শ কর্মকর্তা। সভায় সভাপতিত্ব করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন।

বুধবার প্রথমদিনের সভায় সকালে কৃষি; পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান; পানি সম্পদ; শিল্প এবং বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

বিকালে ৬টি সেক্টরের সঙ্গে বৈঠক হবে। এগুলো হলো তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ; পরিবহন; যোগাযোগ; ভৌত, পরিকল্পণা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন, শিক্ষা ও ধর্ম এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি বিভাগ।

আগামীকাল প্রথমদিনের সভায় যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক হবে সেগুলো হচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বিডব্লিউডিবি, এলজিইডি, খাদ্য অধিদপ্তর, পরিবেশ অধিদপ্তর, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বন অধিদপ্তর, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, সাধারণ বীমা করপোরেশন, আবহাওয়া অধিদপ্তর, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ডিপিএইচই এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

পল্লী উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠান খাতের এলজিইডি, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়। পানিসম্পদ খাতের বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, ডিএই, ডিপিএইচই, ভূমি মন্ত্রণালয়, বন অধিদপ্তর, পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা, পরিকল্পনা কমিশনের জিইডি।

শিল্প খাতের শিল্প মন্ত্রণালয়, বিএসটিআই, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বেপজা, বিসিআইসি, বিসিক, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ইজিসিবিএল, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি, ডেসকো, বিদ্যুৎ বিভাগ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ডিপিডিসি, এনডব্লিউপিজিসি এবং সিপিজিসি। তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর এবং বিপিসি।

এ ছাড়া আরও যেসব খাতসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করা হবে সেগুলো হলো পরিবহন, যোগাযোগ, ভৌত-পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাত, শিক্ষা ও ধর্ম এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতি।

কমিশন সূত্র জানিয়েছে, ৩১ ডিসেম্বর ৬টি সেক্টরের সঙ্গে বৈঠক হবে। এগুলো হলো স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ; গণসংযোগ; সমাজকল্যাণ, মহিলা ও যুব উন্নয়ণ; জনপ্রশাসন; বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান বিভাগ।

প্রসঙ্গত, গত ২০১৪-২০১৫ এডিপি বরাদ্দ থেকে অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তা অংশে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ছেঁটে ফেলা হয়। কমিশন সূত্র জানিয়েছে, এবার প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার কোটি টাকা বাদ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রাক্কলন সভার পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।

তিনি জানান, বাস্তবায়ন সম্ভাব্যতার ভিত্তিতে এডিপি কাটছাঁট করা হয়। তবে এর পরিমাণ নির্ভর করছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর প্রতিবেদন এবং কর্মকাণ্ডের ওপর।

উল্লেখ্য, গত অর্থবছরে ৮০ হাজার কোটি টাকা থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ৫০ হাজার ১০০ কোটি এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়।

মূল এডিপি থেকে বরাদ্দ কমে যায় ৫ হাজার ৩১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ৮০ হাজার ৩১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। মূল এডিপির সরকারি তহবিল থেকে কম ছিল ২ হাজার ১১৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে কম ছিল ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে মোট এক লাখ ৯৯৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে সরকারি প্রকল্পের জন্য ৯৭ হাজার কোটি টাকা এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের জন্য তিন হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সব মিলে চলতি অর্থবছর মোট ব্যয়ের লক্ষ্য ১ লাখ ৯৯৭ কোটি টাকা।

এর মধ্যে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত (অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে) খরচ হয়েছে ১৬ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা। যা মোট এডিপি’র ১৭ শতাংশ।



মন্তব্য চালু নেই