এক সহকারী জজের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় সঙ্গীত শিল্পি চৈতালী মুখার্জীর জিডি

সাতক্ষীরা জজশীপের সাবেক সহকারী জজ (বর্তমান রাজশাহী জজশীপের সহকারী জজ) সুব্রত কুমার মল্লিকের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরী হয়েছে। গত ১৯ অক্টোবর সোমবার সুব্রত কুমার মল্লিকের স্ত্রী পরিচয় দানকারী সঙ্গীত শিল্পি চৈতালী মুখার্জী বাদী হয়ে সাধারণ ডায়েরীটি করেন। বাদী তার লিখিত অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, তার মেয়ে ও তাকে (চৈতালী মুখার্জীকে) তার স্বামী সুব্রত কুমার মল্লিক জীবন নাশের হুমকিসহ অপহরণের হুমকি দিচ্ছেন। তিনি এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বেউলা গ্রামের কার্তিক চন্দ্র মুখার্জীর মেয়ে, সঙ্গীত শিল্পি চৈতালী মুখার্জী গত ১৯ অক্টোবর সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন। যার নং ৮২৩।

লিখিত ওই জিডিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার পাঁচবাড়িয়া গ্রামের লক্ষীকান্ত মল্লিকের ছেলে সুব্রত কুমার মল্লিকের সাথে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর হিন্দু ধর্মমতে আমার বিয়ে হয়। গত প্রায় ৩ মাস যাবৎ আমার স্বামী আমাকে বিভিন্ন অজুহাতে মানষিক ভাবে চাপ সৃষ্টি করত: আমার থেকে দূরে সরে যেতে চাইছে। আমি তার এহেন কর্মকান্ডের সম্মতি না দিলে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। গত ১২ অক্টোবর দুপুর আনুমানিক ১২ টার পরে ০১৭১৯-২৬৮৬৪১ মোবাইল নম্বর হতে আমার স্বামীর রেজিষ্ট্রেশনকৃত আমার ব্যবহ্নত ০১৭১৪-৩৮১৬৪৭ নম্বরে ফোন করে আমার স্বামী সুব্রত মল্লিকের মামা পরিচয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি আমাকে বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ জীবন নাশের হুমকি প্রদান করত: আমার মেয়ে পুস্পিতা চক্রবর্তী অর্পাকে অপহরণ করে হত্যা করবে মর্মে হুমকি প্রদান করেন। এছাড়া আমার স্বামী তার ব্যবহ্নত ০১৭১৪-৯৭১৬১২ নম্বর হতে আমাকে ফোন করে বলে, তুমি যদি আমার জীবন থেকে সরে না যাও তাহলে তোমাকে এবং তোমার মেয়েকে খুন করব।

ওই জিডিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৮ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলা জজ আদালতের দ্বিতীয় তলায় কনফারেন্স রুমে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হয়। সেখানে আমি আমার স্বামীর বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেই। তদন্তকালে বাগেরহাটের বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: জিয়া হায়দার এবং সাতক্ষীরার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আকরাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন। তদন্তকালীন সময় আমার সাথে নানা ভাবে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরন করে এবং তার পরিবারের লোকেরাসহ ভাড়াটিয়া লোকজন আমাকে জীবন নাশের হুমকি সহ অপহরণের হুমকি দিয়ে আসছে। এ ব্যাপারে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন।

তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা গেছে, সাতক্ষীরা জজকোর্টের অ্যাডভোকেট সৈয়দ একলেছার আলী বাচ্চু গত ২০ জানুয়ারী তৎকালীন সাতক্ষীরার দেবহাটা সহকারী জজ আদালতের বিচারক সুব্রত কুমার মল্লিকের অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন ও বিচার মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, সাতক্ষীরা জজশীপের বিচারক (বর্তমানে রাজশাহী জজশীপের সহকারী জজ) সুব্রত কুমার মল্লিক একজন বিবাহিত ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও সম্প্রতি সঙ্গীত শিল্পি (এক সন্তানের মা ) চৈতালি মুখার্জীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে প্রায়শ: রাত্রিযাপন করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৯ জানুয়ারী রাত পৌনে ১১ টার দিকে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ রোডের ভাই ভাই মেসের সামনের একটি বাসা বাড়িতে সদর থানার একজন এস,আই এর নেতৃত্বে পুলিশের একটি বিশেষ দল সেখানে হানা দিলে সুব্রত মল্লিক সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে যায়। বিষয়টি ওই সময় এলাকায়, আদালত পাড়ায় এবং সমগ্র সাতক্ষীরায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। স্থানীয় একটি পত্রিকায় ঘটনার পরের দিন ২০ জানুয়ারী এনিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই বিচারক বিভিন্ন পাবলিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগদান করেন এবং তিনি মদ পান করেন বলে জনশ্রুতি আছে।
অভিযোগকারী বিচার বিভাগের ভাবমৃর্তি সমুন্নত রাখার স্বার্থে উপযুক্ত তদন্তের মাধ্যমে বিচারক সুব্রত কুমার মল্লিকের বিরুদ্ধে বিহীত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।

অ্যাডভোকেট সৈয়দ একলেছার আলীর ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক সুব্রত কুমার মল্লিকের বিরুদ্ধে একটি বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। যার মামলা নং ০১/২০১৫। গত ১৮ অক্টোবর বিভাগীয় ওই মামলা তদন্তের জন্য বাগেরহাটের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: জিয়া হায়দার উদ্ধর্তন মহলের নির্দেশে সাতক্ষীরায় এসে ঘটনা তদন্ত করেন।

এ ব্যাপারে রাজশাহী জজশীপের সহকারী জজ সুব্রত কুমার মল্লিক মুঠো ফোনে জানান, তিনি পরিস্থিতির শিকার। জোর পূর্বক তাকে ফাঁদে ফেলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয়, মিথ্যা ও বানোয়াট। তিনি বলেন, আমার মামা একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সম্প্রতি চৈতালীর সাথে যে ঝামেলার সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনের জন্য তার মামা চৈতালিকে ফোন করেছিল। তাকে হুমকী দেয়ার জন্য নয়।

তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগের কারণে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ওই দতন্ত রিপোর্টে আসল সত্য বেরিয়ে আসবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চৈতালীর সাথে আমার ঘনিষ্টতা হয় সাতক্ষীরা জজশীপের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনকে কেন্দ্র করে। কারণ চৈতালী একজন সঙ্গীত শিল্পি। তবে চৈতালির সাথে আমার বিয়ে হয়নি। সে আমার স্ত্রী নয়। আমার বিবাহিত স্ত্রী রয়েছে। তিনি বলেন, আমার মতো অসংখ্য মানুষকে ফাঁদে ফেলে তাদেরকে নানা ভাবে ক্ষতি করেছে চৈতালি। আমি তার সর্বশেষ প্রতারণার শিকার।



মন্তব্য চালু নেই