একাকীত্বে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি

ধূমপান, বায়ু দূষণ, স্থূলতার মতো বেশ কিছু বিষয় আছে যেগুলোকে মানুষের অকাল মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ বলে মনে করা হয়। নতুন একটি গবেষণায় বিজ্ঞানীরা বলছেন, একজন মানুষের সামাজিক জীবনও এ তালিকায় যোগ করা উচিৎ। কারণ গবেষণায় তারা খুঁজে পেয়েছেন, একাকীত্ব এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন জীবন যেকোন বয়সী মানুষের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিগহ্যাম ইয়াং ইউনিভিার্সিটির মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, অপেক্ষাকৃত বয়স্কদের মধ্যে একাকীত্বের সমস্যায় ভোগার সম্ভাবনা এবং তার কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি থাকে। তারপরও যাদের বয়স ৬৫ বছরের নীচে একাকীত্ব এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপনের কারণে তারাও অকাল মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকতে পারেন।

গবেষণাপত্রের মূল লেখক জুলিয়ান হল্ট-লুনস্ট্যাড বলছেন, সাধারণত স্থূলতাকে মানুষ খুব সিরিয়াসলি নেয়। একাকীত্বের এই বিষয়টাকেও স্থূলতার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। সামাজিক সম্পর্কগুলোর বিষয়ে আমাদের আরো মনোযোগী হতে হবে।

এরআগের একটি গবেষণায় এমন একটি পূর্বাভাস পাওয়া গিয়েছিল যাতে বলা হয়েছিল- একজন মানুষের সামাজিক যোগাযোগ তার শারীরিক, মানসিক এবং আবেগ-সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে একাকীত্ব বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সঙ্গে মৃত্যুর সম্পর্ককে কেন্দ্র করে আগে কোনো গবেষণা চালানো হয়নি।

একাকীত্ব এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা- বিষয় দুটি অনেকের কাছে একই মনে হলেও এ দুটি আসলে অনেকটা আলাদা। অনেক মানুষের পাশে থেকেও কেউ নিজেকে একাকী ভাবতে পারেন আবার কেউ কেউ সত্যিকারই একা থাকতে পছন্দ করেন।

একাকীত্ব এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার মধ্যে এমন পার্থক্য থাকলেও গবেষণায় দেখা গেছে এ দুটির প্রভাব একই রকম।

একাকীত্বের মহামারী ঘটতে পারে
এই গবেষণাটির জন্য গবেষকরা ১৯৮০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত করা ৭০টি গবেষণার তথ্য ঘেঁটেছেন। এ সমস্ত গবেষণায় মোট ৩০ লাখ মানুষের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের একাকীত্ব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং একা থাকার তথ্য রয়েছে গবেষণায়।

বয়স, লিঙ্গ, আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং স্বাস্থ্যের বিষয় মাথায় রেখে চালানো গবেষণায় গবেষকরা দেখেছেন সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সঙ্গে অকাল মৃত্যর ঝুঁকির সম্পর্ক রয়েছে। একইসঙ্গে এ-ও দেখা গেছে যে, স্বাস্থ্যের ওপর সামাজিক সুসম্পর্কের ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।

গবেষকরা একাকীত্বের সঙ্গে অকাল মৃত্যুর সম্ভাবনার একটা সম্পর্ক দাঁড় করালেও এ গবেষণায় নমুনা হিসেবে যাদের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে তাদের বয়সসীমা বেশ সীমিত। ব্যবহৃত তথ্যের বেশিরভাগই এসেছে অপেক্ষাকৃত বয়স্কদের কাছ থেকে। জুলিয়ান হল্ট-লুনস্ট্যাড নিজেই স্বীকার করেছেন, ব্যবহৃত তথ্যের এক-চতুর্থাংশেরও কম এসেছে এমন মানুষদের থেকে যাদের বয়স গড়ে ৫৯ বছর বা তার কম। মাত্র ৯ শতাংশ তথ্য রয়েছে ৫০ বছরের কম বয়সী মানুষের।

গবেষকরা বলছেন, একাকীত্ব এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণে মানুষের শরীরের ওপর যে প্রভাব পড়ে তার সঙ্গে স্থূলতার ক্ষতিকর প্রভাবের একটা তুলনা করা যায়। এমনকি তারা এ কথাও বলছেন, স্থূলতার চেয়ে একাকীত্বের কারণে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।

তাদের ভাষ্যে, একাকীত্ব এবং সামজিক বিচ্ছিন্নতার ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে বর্তমানে যে গবেষণা করা হচ্ছে তা তিন দশক আগে স্থূলতার ক্ষতির প্রভাব নিয়ে করা গবেষণার মতো। গবেষকরা এখন এটি জানেন যে, ভবিষ্যতে এ দুটি ঝুঁকিই আরো বাড়বে।

প্রযুক্তির উৎকর্ষে এবং ইন্টারনেটের ক্রমবিকাশে এমন মনে হতে পারে যে, মানুষ অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে এখনই অন্যের সবচেয়ে বেশি কাছে আসতে পারছে। তবে বাস্তবতা হলো, একাকী অনুভব করছেন বা একাকীত্বে ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই।

গবেষণাপত্রের আরেক লেখক টিম স্মিথ বলছেন, ‘একা হয়ে যাওয়ার হিসাবে আমরা শুধু শতাব্দীরই শীর্ষে না, মানবজাতির ইতিহাসেই আমরা এখন সবচেয়ে বেশি একা। আর একাকীত্বের ক্রমবর্ধমান হারের কারণে আমরা আশঙ্কা করছি ভবিষ্যতে একাকীত্ব মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে।’

এই গবেষণার নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও গবেষকরা বিশ্বাস করছেন, সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ক্রমবর্ধমান হারের হিসেবে তাদের গবেষণাটি একটি উল্লেখযোগ্য সতর্কতা।

গেল বছর মেডিকেল নিউজ টুডে একটি গবেষণায় পেয়েছিল অতিরিক্ত একাকীত্ববোধ বৃদ্ধদের মৃত্যুঝুঁকি ১৪ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।



মন্তব্য চালু নেই