একগুচ্ছ সুবিধা দিয়ে অর্থবিল পাস

রপ্তানি খাতের উৎসে কর হ্রাস, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক সুবিধার প্রসার, পোল্ট্রি খাতের পণ্যে রেয়াত সুবিধা, জীবন রক্ষাকারী ওষুধে শুল্ক প্রত্যাহারসহ বেশ কিছু সুবিধা দিয়ে পাস হলো অর্থবিল-২০১৬।

একই সঙ্গে অর্থবিলে ভোজ্য তেল, চিনি, ডাল ইত্যাদি পণ্যে বিদ্যমান শুল্ক অব্যাহতির রেয়াত আগামী বছরও কার্যকর রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

বুধবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উত্থাপিত বিল কণ্ঠভোটে পাস হয়।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তার বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তৃতায় বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি প্রস্তাব করেছেন। তার এই প্রস্তাবকে অনুশাসন মনে করে তার সব প্রস্তাবই গ্রহণ করা হলো।’

পরবর্তী সময়ে ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের উপস্থিতিতে অর্থ বিল পাস হয়।

অর্থমন্ত্রী সমাপনী বক্তৃতায় বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে রপ্তানি খাতের উৎসে করের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত ১.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.৭০ শতাংশ ধার্য করা হলো। অর্থ্যাৎ মাত্র ১০ পয়সা বাড়ল। আগে ছিল ০.৬০ শতাংশ। এ ছাড়া পাট ও পাটজাত পণ্য ও হিমায়িত দ্রব্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বিদ্যামান ০.৬ শতাংশ উৎসে কর ২০১৬ পর্যন্ত বহাল থাকবে।

অর্থমন্ত্রী বক্তৃতায় অন্যান্য খাতের বিষয়ে বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত বিভিন্ন কেমিক্যাল আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ কমিযে ১৫ শতাংশ ও স্পিনিং শিল্পের কাচাঁমাল ফ্লাস্ক ফাইবারের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক শিল্পের কাঁচামাল সিলিকন আমদানিতে শুল্ক হ্রাস করা হবে। ই-কমার্সের সঠিক সংজ্ঞা দেওয়া হবে। মেডিক্যাল ও সার্জারি পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হবে। জীবন বাঁচানো ওষুধের ক্ষেত্রে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করছি।

তিনি জানান, প্রস্তাবিত বাজেটে অনুচ্ছেদ ২০১৩ এর তথ্য-প্রযুক্তিতে নিয়োজিত স্থাপনা ভাড়ার ওপর ৫৪ শতাংশ ভ্যাট সম্পূর্ণরূপে অব্যাহতি দেওয়া হলো। শিল্প খাতে বিদ্যমান মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক অব্যাহত রেখে আরো কতিপয় শিল্পের ক্ষেত্রে এই সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে।

ভোজ্য তেল, চিনি, ডাল, চাল ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিদ্যমান শুল্ক অব্যাহতির রেয়াত আগামী বছরও কার্য্কর থাকবে। পর্য্টন শিল্পে সিপার ও যন্ত্রপাতিতে সীমিত রেয়াত সুবিধা অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া ওষুধ শিল্পের কতিপয় কাঁচামাল আমাদানিতে শুল্ক সুষম করা হবে।

সিগারেটের ক্ষেত্রে বিদ্যমান উৎসে কর অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, সিগারেটের ক্ষেত্রে বিদ্যমান উৎসে কর অব্যাহত থাকবে। এ ছাড়া বহুজাতিক কোম্পানির আয়ের হিসাব বর্তমানে সার্বজনীন কর বছর জুলাই-জুন তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। তারা তাদের হিসাব তাদের দেশের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে রাখতে পারবে।

তিনি আরো বলেন, প্রাকৃতিক রাবার তৈরিতে উৎপাদন পর্যায়ে বিদ্যমান মূল্য সংযোজন কর (মূসক) প্রত্যাহার করা হয়েছে। দেশে উৎপাদিত প্লাস্টিক পণ্যে ট্যারিফ মূল্য ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ টাকা, প্রণোদনা দেওয়ার লক্ষ্যে চা উৎপাদনে প্রতি কেজি চায়ের ট্যারিফ মূল্য ১.৬ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১ কেজি তাজা ফুলের ট্যারিফ মূল্য ১ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হলো।

নির্মাণ খাতের উপরণ, বিশেষ করে বাঁশ, রড ও অ্যালুমিনিয়ামসহ বিভিন্ন পণ্যে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করা হয়েছে। অন্যদিকে এর কাঁচামাল আয়কন ও ফ্যারোয়েল ইত্যাদির শুল্ক সুষমভাবে হ্রাস করা হবে।

গত ২ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের সঙ্গে এই অর্থবিল উত্থাপন করেছিলেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। বুধবার সকালে সেই বাজেটের ওপর সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী ও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ বক্তৃতা করেন। পরে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় কয়েকটি প্রস্তাবে সংশোধনী আনতে বলেন। অর্থমন্ত্রী তার সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশগুলো গ্রহণ করে অর্থবিল-২০১৬ সংসদে উত্থাপন করেন।

বৃহস্পতিবার পাস হবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেট। আগামী ১ জুলাই নতুন অর্থবছরের শুরুতে এই বাজেট কার্যকর হবে।



মন্তব্য চালু নেই