‘এই গোপালগঞ্জের পুলিশ, মালাউনের বাচ্চা!’

বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টু ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় এক পুলিশ কর্মকর্তাকে ‘মালাউনের বাচ্চা, শুয়োরের বাচ্চা’ বলে গালি দিয়েছেন।

বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পিন্টু তার সঙ্গে সাক্ষাৎপ্রার্থীদের বাধাদান দেয়ায় পুলিশ কর্মকর্তাকে এভাবে গালি দেন।

বৃহস্পতিবার ত্রাণের টিন আত্মসাতের একটি মামলায় ঢাকার ১ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে হাজির করানোর জন্য নারায়ণগঞ্জের কারাগার থেকে মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় নিয়ে আসা হয় পিন্টুকে।

হাজতখানায় থাকার সময় আদালতের পূর্ব অনুমতি ছাড়াই এক আইনজীবী ও কয়েকজন সমর্থক পিন্টুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। এসময় বাধা দেন কোতয়ালী থানার এসআই দেবব্রত। আর তখনই ক্ষেপে ওঠেন পিন্টু। তিনি রাগত স্বরে বলেন, ‘এই গোপালগঞ্জের পুলিশ, মালাউনের বাচ্চা, শুয়োরের বাচ্চা, তোর চাকরি থাকবে না।’

শুধু গালি দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি, ওই পুলিশকে মারতেও উদ্যত হন। ওই সময় কয়েকজন সাংবাদিক ও আইনজীবীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।

এসময় পিন্টুর আইনজীবী আসলাম উদ্দিন ও তৌহিদুল ইসলাম তাদের মক্কেলকে (নাসির উদ্দিন পিন্টু) নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। ওই দুই আইনজীবী বিষয়টি নিয়ে আর যাতে বাড়াবাড়ি না হয় সেজন্য মীমাংসা করার অনুরোধ করেন একজন সাংবাদিককে।

পরে পিন্টুর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আসলাম ঘটনার দায়ভার পুলিশের ওপর চাপিয়ে বলেন, ‘এমনিতেই পিন্টুর মন খারাপ। এতদিন ধরে কারাগারে। এ অবস্থায় তার সঙ্গে একটু রয়ে সয়ে সাবধানে পুলিশের আচরণ ও ব্যবহার করা উচিৎ ছিল।’

এ ঘটনার জেনে ছুটে আসেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. বোরহানউদ্দিন এবং আইনজীবী সমিতির কার্যকরী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন জসীম।

ঘটনার বিষয়ে মো. বোরহান উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘পিন্টুকে মেন্টাল (পাগল) বলায় ক্ষেপে গিয়ে তিনি একজন পুলিশ কর্তাকে গালি দেন।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত কোর্ট ইন্সপেক্টর ফরমান আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওই কর্মকর্তাকে একটি সাম্প্রদায়িক গালি দিয়েছেন পিন্টু।’

ঘটনার ‍শিকার কোতোয়ালি থানার এসআই দেবব্রত বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া হাজতে আইনজীবীসহ তার সমর্থকরা ঢুকতে গেলে আমি বাধা দিয়েছি। আমি কেবল আমার উপর অর্পিত দায়িত্বই পালন করেছি। কিন্তু পিন্টু আমাকে সাম্প্রদায়িকভাবে আক্রমণ করে গালি দিয়েছেন, আমাকে মারতে উদ্যত হয়েছেন।’

এদিকে পিন্টুর হয়ে পুলিশ, সাংবাদিক ও উপস্থিত আইনজীবীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন জসীম। তিনি দণ্ডিত পিন্টুর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছেন।

উল্লেখ্য, ত্রাণের টিন আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার লালবাগে বিএনপির সাবেক সাংসদ পিন্টুর বিরুদ্ধে হাজারীবাগ থানায় মামলা হয়। ওই বছরের ৮ অক্টোবর চার্জশিট দাখিলের পর বিচারের জন্য মামলাটি ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে বদলি করা হয়।

এ পর্যন্ত মামলাটিতে আট জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও কোনো সাক্ষী না আসায় বিচারক দলিল উদ্দিন আগামী ২৯ জানুয়ারি পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন।



মন্তব্য চালু নেই