উড়ন্ত হোয়াইট হাউস!

মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে আকাশে ওড়ে এয়ারফোর্স ওয়ান। কী নেই এতে? ৩ তলা বিমানটিতে রয়েছে প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট, অফিস, বাথরুম, কনফারেন্স রুম। ১০০ জন মানুষের উপযোগী রান্নাঘর, অত্যাধুনিক হাসপাতাল, সিক্রেট সার্ভিসের নিরাপত্তা দল। বিমানটি চাইলে ঠেকিয়ে দিতে পারবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। একবার তেল ভরে এটি উড়ে আসতে পারবে অর্ধেক পৃথিবী। প্রতি ঘণ্টায় এর পরিচালনা ব্যয় প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা! উড়ন্ত এই হোয়াইট হাউস নিয়ে লিখেছেন— তানভীর আহমেদ

বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্রনেতাকে আকাশে ভাসায় এয়ারফোর্স ওয়ান। এয়ারফোর্স ওয়ান আসলে একটি বিশেষায়িত বোয়িং বিমান। এটিতে চড়েন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি আর নিরাপত্তার বিবেচনায় এয়ারফোর্স ওয়ান সব সময়ই সাধারণ মানুষের কৌতূহলের কেন্দ্রে রয়েছে। এয়ারফোর্স ওয়ানের বিশেষ দুটি মডেলেই চড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। দুটি বোয়িং ৭৪৭-২০০বি সিরিজের বিমান রয়েছে। এ বহরে রয়েছে দুটি বিশেষায়িত বিমান। এ দুটিকে পরিবর্তন পরিবর্ধন করে অত্যাধুনিক করা হয়েছে। বোয়িং দুটির লেজে লেখা থাকে দুটি বিশেষ কোড। এগুলো হচ্ছে ২৮০০০ ও ২৯০০০। এয়ারফোর্স ওয়ানের বেশ কয়েকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য যে কাউকে চমকে দেবে।

যেমন— এটি উড্ডয়নকালে আকাশেই জ্বালানি গ্রহণ করতে পারে। ৩ তলা বিমানটিতে রয়েছে ৪ হাজার স্কোয়ার ফিটের ফ্লোর স্পেস। প্রেসিডেন্টের জন্য বিশাল একটি স্যুট। সঙ্গে রয়েছে তার অফিস, বাথরুম এবং কনফারেন্স রুম। চাইলে যে কোনো

মুহূর্তে বিমানটি প্রেসিডেন্টের অফিসে পরিণত করা যাবে। রয়েছে অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা সংবলিত যন্ত্রপাতি, যা ব্যবহার করে বিমানটিকে মুহূর্তেই একটি কমান্ড সেন্টারে পরিণত করে প্রেসিডেন্ট তার কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন। রয়েছে অপারেশন থিয়েটারসহ মেডিকেল স্যুট। একসঙ্গে ১০০ জনের রান্না করতে সক্ষম এমন দুটি রান্নাঘরও রয়েছে এতে। আপনি কি জানেন, এ বিমানবহর পরিচালনায় ব্যয় কত? যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর ৮৯তম এয়ারলিফট উইং এ বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, এয়ারফোর্স ওয়ান পরিচালনায় প্রতি ঘণ্টায় ব্যয় হয় ১ লাখ ৮১ হাজার ডলার!

যা আছে এয়ারফোর্স ওয়ানে

♦ ১৯৫৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিমানের পথে একটি বাণিজ্যিক বিমান প্রবেশ করে। এ ঘটনার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী বিশেষ বিমানের সাংকেতিক নাম হয় ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’।

♦ এই বিমানটি একটি কার্যালয়ের মতো করে সাজানো। নিজস্ব টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। মোট ৮৭টি টেলিফোন ও ১৯টি টেলিভিশন আছে।

♦ এয়ারফোর্স ওয়ানের মতোই দেখতে আরও দুটি বোয়িং উড়োজাহাজ আছে। এগুলো ফাঁদ হিসেবে ব্যবহূত হয়। এ ছাড়া আছে একটি চার্টার্ড জেট বিমান। এতে প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ও নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা থাকেন।

♦ এটা একবার ২৩০,০০০ লিটার তেল নিয়ে প্রায় অর্ধেক দুনিয়া ঘুরে আসতে পারে।

♦ অপারেশন টেবিল, জরুরি চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও ওষুধসমৃদ্ধ একটি চিকিৎসাকেন্দ্র।

♦ এতে আছে বিশেষ টেলিযোগাযোগ কেন্দ্র। পারমাণবিক বোমার কারণে সৃষ্ট তেজস্ক্রিয়ার মধ্যেও এই যোগাযোগব্যবস্থা কাজ করবে। পুরো বিমানে ৩৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ তার ছড়ানো।

♦ বিমানে সব সময়ই একজন চিকিৎসক ও নার্স থাকেন। প্রেসিডেন্ট চাইলে বিমান থেকেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন।

♦ এটার ভিতরে ৪০০০ বর্গফুটের বিশাল বিলাসবহুল তিনতলা থাকা খাওয়ার জায়গা আছে, যেখানে ৭০ জন যাত্রী আর ২৬ জন ক্রু আরামে থাকতে পারেন।

♦ এটাতে আছে ৫ তারকা হোটেলের মানের রান্নাঘর যেখানে ১০০ জনের রান্না একবারে হতে পারে। আর এটা ১০০ জনের ৬ দিনের কাঁচা খাবার মানে মাংস, মাছ, সবজি ইত্যাদি যা রান্না করে খাওয়া হবে তা সর্বদা বহন করে।

♦ এয়ারফোর্স ওয়ানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যে কাউকে চমকে দেবে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে বিমানকে রক্ষায় আছে অত্যাধুনিক নিরাপত্তাব্যবস্থা সংযুক্ত করা আছে। বিশেষ ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা রশ্মির মাধ্যমে হামলাকারী ক্ষেপণাস্ত্রের গতিপথ পরিবর্তন করে দিতে পারে।

♦ এয়ারফোর্স ওয়ান পরিচালনায় প্রতি ঘণ্টায় ব্যয় হয় ১ লাখ ৮১ হাজার ডলার।

এক নজরে

ধরন : বোয়িং ৭৪৭-২০০বি

বিমানের কর্মচারী : দুজন পাইলটসহ ২৬ জন

ধারণক্ষমতা : ৭৮ জন

বিমানের দৈর্ঘ্য : ৭০ দশমিক ৬ মিটার

দুই পাখার দৈর্ঘ্য : ৫৯ দশমিক ৮ মিটার

উচ্চতা : ১৯ দশমিক ৩ মিটার

সর্বোচ্চ ওজন : তিন লাখ ৭৫ হাজার কিলোগ্রাম

উড়ন্ত অবস্থায় গতি : ঘণ্টায় ৯২৫ কিলোমিটার।

উড্ডয়ন ক্ষমতা : ১৩ হাজার কিলোমিটার-কালের কণ্ঠ



মন্তব্য চালু নেই