‘উপমহাদেশের গত একশ বছরের ইতিহাসে নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড’

খুলনার পায়ু পথে হাওয়া দিয়ে শিশু রাকিব (১২) হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ‘উপমহাদেশের গত একশ বছরের ইতিহাসে নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ড’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার পূর্ব নির্ধারিত দিন অনুসারে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মামলার রায় ঘোষণাকালীন সময়ে এ মন্তব্য করেন।

আদালতে আসামিপক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল ও এসএম মোবিন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম ও বিলকিস ফাতেমা।

আদালত বলেন, ‘পায়ু পথে হাওয়া দেওয়ার পর শিশু রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়ে। এরপর আসামিরা তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। কিন্তু ঘটনাটি অদ্ভুত হওয়ার কারণে ডাক্তাররা এর চিকিৎসা দিতে ব্যর্থ হন।’

আদালত আরো বলেন, ‘আসামিদের আগে কোনো ক্রিমিনাল স্টোরি নেই। তাছাড়া রাকিবকে হত্যার কোনো উদ্দেশ্যও তাদের ছিল না। রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। তাই তাদের সাজা কমিয়ে রায় দেওয়া হয়েছে।’

রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘রাকিবকে হত্যার কোনো উদ্দেশ্যও তাদের ছিল না। রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা আর্গুমেন্টের মাধ্যমে বিষয়টি প্রমাণ করেছি তাই আদালত সন্তুষ্ট হয়ে তাদের সাজা কমিয়েছে। তবু তাদের খালাশ চেয়ে আমরা আপিল করব।’

হাইকোর্টের রায়ে রাকিব হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো. শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টুকে নিম্ন আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশ কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন।

আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল ও এসএম মোবিন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আতিকুল হক সেলিম ও বিলকিস ফাতেমা।

গত ১০ জানুয়ারি পেপারবুকের ওপর শুনানি শুরু করেন হাইকোর্ট। তারপর মোট ১১ দিন আসামির পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি খণ্ডন শেষে মামলার রায়ের জন্য এ দিন নির্ধারণের আদেশ দেন।

এর আগে ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর রাকিব হত্যা মামলার রায়ের ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পাঠানো হয়। সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে হাইকোর্টের অনুমতির প্রয়োজন হয়। ডেথ রেফারেন্সের পাশাপাশি বিচারিক আদালতের ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা হাইকোর্টে আপিল দায়ের করেন।

পরে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর শিশু রাকিব (১২) হত্যার দায়ে প্রধান আসামি মো. শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টুকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা এ রায় ঘোষণা করেন। মামলায় অভিযুক্ত অপর আসামি শরীফের মা বিউটি বেগমকে খালাস দেন।

২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বিকেলে খুলনার টুটপাড়ায় শরীফ মোটরস নামে একটি মোটরসাইকেলের গ্যারেজে পায়ুপথে পেটে হাওয়া ঢুকিয়ে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করে রাকিবকে হত্যা করা হয়। পরদিন রাকিবের বাবা মো. নুরুল আলম বাদী হয়ে শরীফ, শরীফের সহযোগী মিন্টু খান ও মা বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। বহুল আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে মামলা হওয়ার ৯৬ দিন পর এ রায় ঘোষণা করা হয়।



মন্তব্য চালু নেই