উপবাসের ফলে নিজেই নিজেকে রিচার্জ করে মস্তিষ্ক

উপবাস করা আমাদের শরীরের জন্য উপকারী এটা আমরা সবাই জানি। রোজা রাখলে বা উপবাস করলে বিপাক ক্রিয়ার উন্নতি ঘটে, আয়ু বৃদ্ধি পায় এবং হৃদপিণ্ডের জন্যও উপকারী। কিন্তু সুস্থ জীবনধারার ওপর এটি কী ধরণের প্রভাব ফেলে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে এখনো। প্রারম্ভিক গবেষণায় এটাই দেখা গেছে যে, উপবাস মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। বিশেষ করে যাদের আলঝেইমার্স এবং পারকিনসন্স রোগের মত নিউরোডিজেনারেটিভ সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি আছে তাদের ক্ষেত্রে উপবাস উপকারী ভূমিকা রাখতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাক ইন্সটিটিউট ফর রিসার্চ অন এইজিং এর গবেষকেরা প্রথমবারের মত দেখিয়েছেন যে, কীভাবে রোজা/উপবাস স্নায়বিক স্তরে মস্তিষ্কের জন্য উপকারী হতে পারে।

উপবাসের বিভিন্ন ধরণের কৌশল আছে, তবে এর অনুশীলন মূলত খাদ্য থেকে বিরত থাকার সাথে জড়িত। এটি একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শেই করা ভালো। যদি আপনার কোন স্বাস্থ্যসমস্যা থাকে তাহলে একজন চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানেই করতে হবে উপবাস। উপবাস সংযমের সাথে করলেই তা শারীরিক ও স্নায়বিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে।

পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে, উপবাসের ফলে জ্ঞানীয় কাজের উন্নতি ঘটে, দ্রুত শিক্ষা এবং স্মৃতিশক্তিকে উদ্দীপিত করে। নতুন গবেষণায় যা প্রকাশিত হয় গত সপ্তাহে নিউরন নামক সাময়িকীতে, তাতে আলোকপাত করা হয় কীভাবে এর (উপবাসের) অনুশীলন মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীভাবে কাজ করে।

ফলের মাছির লার্ভার উপর তারা গবেষণাটি করেন। গবেষকেরা দেখতে পান যে, মস্তিষ্ক পুষ্টির প্রতি সাড়া দেয় (যা উপবাসের ফলে সৃষ্টি হয়) সিন্যাপটিক কার্যকলাপ কমানোর মাধ্যমে, যা হচ্ছে দুটি নিউরনের মধ্যে সংযোগ সৃষ্টিকারী একটি গঠন যার মাধ্যমে রাসায়নিক বার্তা প্রেরিত হয়। এটি মূলত মস্তিষ্কের শক্তি সংরক্ষণের একটি উপায় এবং নিজেই নিজেকে রিবুট হতে সাহায্য করে।

গবেষণার নেতৃত্বদানকারী লেখক এবং বাক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. পেজমুন হাজিজি এক বিবৃতিতে বলেন যে, “সম্ভবত পুষ্টি উপাদানের অপ্রাপ্যতা একটি ভালো জিনিস, জীব তার নিউরোট্রান্সমিটার মুক্ত হওয়ার পরিমাণ কমায় এবং এভাবে তার সামগ্রিক শক্তি ব্যয়ের একটি ভালো অনুপাত রক্ষা করে”।

কয়েক ঘন্টার খাদ্যের সীমাবদ্ধতা আণবিক পথে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে সিন্যাপটিক কার্যাবলীর মাধ্যমে বা নিউরোট্রান্সমিটার মুক্ত হওয়ার মাধ্যমে। মস্তিষ্কের সিন্যাপসিস থেকে নিউরোট্রান্সমিটার মুক্ত করার মাধ্যমে উপবাস স্নায়ুতন্ত্রকে একটি বিরতি দেয়।

নিউরোট্রান্সমিটার মুক্ত হওয়ার ঘটনাটি শক্তির দিক দিয়ে খুবই ব্যয়বহুল একটি প্রক্রিয়া। হাজিজি ইমেইলের মাধ্যমে হাফিংটন পোষ্টকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, “যেহেতু এতে উচ্চমাত্রার শক্তির প্রয়োজন হয় সেহেতু এটি প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন প্রজাতির বর্জ্য উৎপন্ন করে। ফলে নিউরনসহ কোষের মধ্যে অক্সিডেটিভ ক্ষতির সৃষ্টি করে। স্নায়ুতন্ত্রের অবাঞ্ছিত অক্সিডেটিভ ক্ষতিকে সীমাবদ্ধ করতে সাহায্য করতে পারে উপবাস”।

স্নায়ুবিজ্ঞানীগণ অতিসক্রিয় সিন্যাপটিক কার্যাবলীর সাথে নিউরোডিজেনারেটিভ রোগ যেমন- আলঝেইমার্স, হান্টিংটন এবং পারকিনসন্স রোগের সম্পর্ক আছে বলে জানিয়েছেন এবং উপবাস হতে পারে এর একটি কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থা।

সবশেষে বলা যায় যে, এটি করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। যখন সঠিকভাবে করা হয় তখন অনেক শারীরিক ও জ্ঞানীয় উপকারিতা দিতে পারে, তবে সামান্য বিরূপ প্রভাবের ঝুঁকিও থাকে।



মন্তব্য চালু নেই