উত্তরাঞ্চলে নারী শ্রমিক মজুরি বৈষম্যের শিকার

পাবনার চাটমোহরসহ উত্তরাঞ্চলে প্রায় ৩ লাখ নারী শ্রমিক মজুরি বৈষম্যের শিকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রায় পুরুষের সমান কাজ করেও মজুরি পাচ্ছে অর্ধেকের মতো। এসব ভাগ্যাহত নারী শ্রমিকদের দেখার কেউ নেই।

বাংলাদেশে ন্যূনতম মজুরি আইন না থাকায় নারী শ্রমিদের কোনো স্বীকৃতি নেই। আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ‘নারীর ক্ষমতায়ন, মানবতার উন্নয়ন’ এই প্রতিবাদ্য বিষয় নিয়ে নানা কর্মসূচীর মধ্যে দিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করে। এদিন নারীদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়ে ওঠে। মিছিল-মিটিং-সেমিনারে বক্তারা কথার ফুলঝুরি তোলেন। তারপর নিশ্চুপ। এক বছর আর কোন খোঁজখবর নেই। কয়েক যুগ ধরে চলছে এই ধারা।

কিন্তু নারী শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হয়নি। এনজিও প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ পুরুষ শ্রমিক অভিবাসী। এরা জীবিকার তাগিদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে। পুরুষ শ্রমিকরা বাড়ির বাইরে অবস্থান করায় এ অঞ্চলে প্রতি বছরই নারী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। নারীরা এখন ক্ষেতে কাজ করছে। নারী শ্রমিকরা ক্ষেতে বীজতলা লাগানো, ক্ষেত পরির্চযা, ফসল ঘরে তোলাসহ সব ধরনের কাজ করছে। কিন্তু মজুরির বেলা পুরুষ শ্রমিকদের চেয়ে অনেক কম পাচ্ছে।

সড়ক, মহাসড়কের পাশে দাঁড়ালেই দেখা যাবে শতশত নারী শ্রমিক ক্ষেতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। তারা রসুন, আলুসহ নারী শ্রমিকরা এখন পুরুষ শ্রমিকদের সাথে পাল্লা দিয়ে বোরো ক্ষেত পরির্চযা করছে।

সরজমিনে দেখা যায়, চাটমোহর হান্ডিয়াল, তাড়াশ, বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুরসহ আশের পাশের উপজেলার গ্রাম গুলোতে পুরুষ শ্রমিকের মত মহিলাও মাঠে কৃষিকাজ করছেন। তারা রসুন, বোরো ধান পরিচর্চায় ব্যস্ত রয়েছেন।

চাটমোহর উপজেলা জালেশ্বর গ্রামের নারী শ্রমিক মমতা খাতুন বলেন, স্বামী পঙ্গু পরিশ্রম করতে পারে না। সংসারে তার ২ ছেলে মেয়ে। মেয়েটি বিয়ে দিয়েছেন। প্রতিদিন ভোর হলে কাজের সন্ধানে বের হতে হয়।

নারী কৃষি শ্রমিকরা জানান, তারা সকাল থেকে সন্ধ্যা পযন্ত জমিতে কাজ করছেন। তাদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকা। অপরদিকে পুরুষ শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে আড়াই’শ থেকে তিন’শ টাকা। তারা আরোও জানান, ঘর সংসার ঠিক রাখতে তারা কৃষি জমিতে শ্রম দিচ্ছেন। কিন্তু তাদের যে পারিশ্রমিক দেওয়া হয় তা অমানবিক।

তারা ক্ষোভের সাথে জানান, নারী-পুরুষের সমঅধিকারের কথা বলা হলেও তারা এভাবে মজুরি বৈষ্যমের শিকার হচ্ছেন। বেশ কজন কৃষককের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নারী শ্রমিক অল্প পারিশ্রমিকে সন্তুষ্ট, কাজে পুরুষদের চেয়ে বেশি মনোযোগী, কাজের সময় অযথা আড্ডা না দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এ অঞ্চলে নারী শ্রমিকদের চাহিদা বেড়েছে।

নারী শ্রমিক রহিমা বেগম ও লাইলী আক্তার জানান, অভাবে পড়ে তারা বাধ্য হয়ে অন্যের জমিতে কাজ করছেন। কিন্তু জমির মালিকরা তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছেন।

নারী কৃষি শ্রমিদের অভিযোগ, এলাকার অনেক পুরুষ শ্রমিক কাজের জন্য বিভিন্ন স্থানে চলে যাওয়ায় এ অঞ্চলের নারী শ্রমিকরাই এখন কৃষিকাজ করছে। তারা পুরুষদের চেয়ে বেশি কাজ করেও পারিশ্রমিক পাচ্ছে অনেক কম।

তারা জানান, ৮ মার্চ নারী দিবস এলে তাদের নিয়ে মিছিল মিটিং হলেও কেউ তাদের ন্যায্য পাওনা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। বাংলাদেশে কৃষি নারী শ্রমিকদের এখনো স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ন্যূনতম মজুরি আইনও নেই। তারা অবিলম্বে কৃষি শ্রমিকদের স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন।



মন্তব্য চালু নেই