নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপরে

উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

টানা বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, গাইবান্ধা, জামালপুর, সিলেট ও সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। কয়েকটি স্থানে বাঁধ ও নদীর তীর ভেঙে নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ২২, যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ছয় সেন্টিমিটার বেড়ে দুই, সারিয়াকান্দিতে ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে ১৪ এবং কংশ নদীর পানি জারিয়াজাঞ্জাইল পয়েন্টে আট সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার কমলেও বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় এক সেন্টিমিটার কমেছে।

আগামী ২৪ ঘন্টা পর ব্রহ্মপুত্র ও সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি কমা শুরু করলেও গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বাড়তে পারে।

এই সময়ে বগুড়া, সিলেট, জামালপুর ও গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে টাঙ্গাইলে, ১৫০ মিলিমিটার। এছাড়া সিলেটে ১১৭, কানাইঘাটে ১০২, মহাদেবপুরে ৭০, রাঙামাটিতে ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারি বৃষ্টির আভাস দিয়েছে।

বন্যার খবর

রংপুর ও লালমনিরহাটে তিস্তার তীরবর্তী এলাকায় পানি ঢুকে বিলীন হয়েছে অন্তত ৫০টি বসতবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাদী জমিসহ গাছপালা।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ফজলুল হক খন্দকার জানান, পানি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তার ৪৪টি স্লুইসগেটই খুলে রাখা হয়েছে।

তিস্তার ভাঙনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রংপুরের বেশ কয়েকটি গ্রাম। শনিবার বিকাল পর্যন্ত গঙ্গাচড়া উপজেলার নদী তীরবর্তী কোলকোন্দ ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি পরিবারের বাড়িঘর, জমিজমা, বিলীন হয়ে গেছে। অনেকে বসতভিটা সরিয়ে নিচ্ছেন। হুমকিতে পড়েছে মূল বাঁধ, পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ শতাধিক পরিবার।

লালমনিরহাটের জামিরবাড়ি চর, চরবৈরাতি, চরসিন্দুরনা, ডাউয়াবাড়িচর, শানিয়াজানচর হুমকির মুখে রয়েছে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান জানান, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকার খোঁজখবর নিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ইউএনওসহ জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে রোববার দুপুরে তিস্তার পানি কমলেও বিপদসীমার ওপরেই রয়েছে।

নদীর তীরবর্তী ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের ১৬টি চরগ্রামের অন্তত সহস্রাধিক মানুষ এখনও পানিবন্দি হয়ে আছেন।

নীলফামারী (কিশোরগঞ্জ) পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শহিদুর রহমান জানান, ভাঙন রোধে রোববার সকাল থেকে দুই হাজারের বেশি বালুর ব্যাগ নদীতে ফেলা হয়েছে।

কুড়িগ্রামে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। নিমজ্জিত হয়েছে তিস্তা,ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার তীরবর্তী তিন শতাধিক গ্রাম, চর ও দ্বীপচর। এতে প্রায় ৪০ হাজার পরিবারের সোয়া লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

রোববার দুধকুমার নদীর পানির তোড়ে সোনাহাট সেতুর পশ্চিম প্রান্তের সংযোগ সড়কের ৫০ মিটার ধসে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুরের ৪২টি ইউনিয়নের চলাঞ্চল ও নদ-নদী তীরবর্তি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কারণে এসব এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে গেছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

পাঁচদিন ধরে পানিবন্দী থাকায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। দেখা দিয়েছে জ্বালানি ও খাদ্য সংকট। পাশাপাশি গো-খাদ্যেরও সংকট দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন জয়নাল আবেদীন জিল্লুর জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নয়টি উপজেলার জন্য ৮৫টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এছাড়া কন্ট্রোল রুম খুলে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মোত্তালেব মোল্লা জানান, এখন পর্যন্ত উপজেলাগুলো থেকে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পাওয়া যায়নি। তালিকা পেলেই ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হবে।

“তবে ৮০ টন চাল ও সাড়ে চার লাখ টাকা মজুদ আছে। জরুরি ভিত্তিতে আরো ৫০০ টন চাল ও ৫ লাখ টাকা চেয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।”

যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় জেলার ইসলামপুর উপজেলার নোয়ারপাড়া, সাপধরি, চিনাডুলি, বেলগাছা, পাথশী ও কুলকান্দি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে।

ইসলামপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুমুর রহমান জানান, বন্যায় পাটসহ উঠতি ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া গুঠাইল ও সাপধরি এলাকায় নদীতে ভাঙনও চলছে।

শেরপুরে উন্নতি

শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার নিম্নাঞ্চলে সৃষ্ট বন্যার উন্নতি হয়েছে। মহারশি ও সোমেশ্বরী নদীর পানিও কমেছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা জানান, বন্যায় উপজেলার কালিনগর, দড়িকালিনগর, লঙ্গেশ্বর, সুরিহারা, দিঘীরপাড়, চতল, বালিয়াচন্ডি, জিগাতলা বনগাঁও, কাংশা, দুপুরিয়া, কারাগাও, রাঙামাটি, জুলগাঁও, হাসরিপাতিয়া, দাড়িয়ারপাড়, নয়াপাড়া, বাগেরভিটা, রামেরকুড়া ও মাঝা কান্দুলী গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

“এসব গ্রামের অনেক রাস্তাঘাট এখনও পানির নিচে রয়েছে। আবার কয়েকটি বক্স কালভার্ট ও কাঠের ব্রিজ ও রাস্তা ধসে যাওয়ায় যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ।”



মন্তব্য চালু নেই