ই-বুকের আধিপত্য বাড়লেও কমেনি ছাপা বইয়ের আবেদন
ইন্টারনেটের নানা সুবিধার কল্যাণে অনেক কিছুই যখন হাতের মুঠোয়, তখন ইচ্ছে করলেই পড়ার কাজটিও সেরে নেয়া যায় সহজেই। হাতে থাকা স্মার্টফোন, ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ কম্পিউটারে সাবলীলভাবে পড়া যায় ই-বুক। কিন্ডেলের মতো ই-বুক রিডার থাকলে তো আরো ভালো। আঙুলের ছোঁয়ায় ওল্টানো যায় পৃষ্ঠা। শুধু পড়াই নয়, চাইলে নিজেও তৈরি করা যায় ইলেকট্রনিক বই (ই-বুক)। কাগজে ছাপা বইয়ের বিকল্প ই-বুক নামিয়ে (ডাউনলোড) পড়ার কাজটিও করেন অনেকেই। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ই-বুকও প্রকাশিত হচ্ছে এখন।
এমন বাস্তবতায় কাগজে ছাপা মোটা একটা বইয়ের কদর কি আছে- গত কয়েক বছর ধরে এ প্রশ্নটি বারবার ফিরে ফিরে আসছে। সম্প্রতি ই-বুকের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রশ্নটির উত্তর পাওয়াও জরুরি হয়ে পড়েছে। উত্তরে জানা গেছে, মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু বইয়ের আবেদন এখনো ফুরায়নি। আর সেজন্যই অমর একুশে বইমেলায় সবাই ছুটে আসছেন প্রিয় বন্ধুর সান্নিধ্যে। এ বিষয়ে প্রকাশক ও মেলায় আগত পাঠক-দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বইয়ের আবেদন সব সময়ই অন্য রকম। যত কিছুই আবিষ্কার হোক না কেন বইয়ের স্থান কেউ নিতে পারবে না। তারা জানান, বই শুধু পড়ার জন্যই শ্রেষ্ঠ নয়, উপহারের ক্ষেত্রেও সেরা।
ছাপা বই ও ই-বুক- এই বিতর্কের প্রসঙ্গে বিজয় প্রকাশের স্বত্বাধিকারী তপন মাহমুদ বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশ অনেকাংশই পিছিয়ে থাকে। সেজন্য আমি মনে করি ই-বুক নিয়ে চিন্তিত হওয়ার সময় এখনো আসেনি।’ তিনি বলেন, ‘ছাপা বইয়ের কদর আলাদা। ছাপা বই খুললে যে সুভাস পাওয়া যায়, তা ই-বুকে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আমি মনে করি, ই-বুক আমাদের প্রকাশনা শিল্পে কোনো ধরনের ক্ষতি করতে পারবে না।’
অ্যাডর্ন পাবলিকেশনের প্রকাশক সৈয়দ জাকির হোসাইন বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তির নতুন কোনো প্রডাক্ট যখন বাজারে আসে, তা ভীতিকর হিসেবেই খ্যাতি পায়। পরে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। সে হিসেবে বলতে পারি, ই-বুক এখনো কোনো ধরনের ভীতির সঞ্চার করতে পারেনি।’ ই-বুক কখনোই ছাপা বইয়ের স্থান নিতে পারবে না বলে উল্লেখ করে এই প্রকাশক আরো বলেন, ‘ইতিমধ্যেই অনেক ই-বুক নির্মাতা আমার সঙ্গে প্রকাশনীর বইগুলোর জন্য যোগাযোগ করেছেন। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, ই-বুক ছাপা বইয়ের বিকল্প হতে পারে না।’
প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বিভাসের স্বত্বাধিকারী রামশংকর দেবনাথেরও একই মত। তিনি বলেন, ‘ছাপাই বইয়ের আর্কষণ কমছে, এটা আমি মানি না, কারণ প্রতিনিয়ত পাঠক বাড়ছে। হয়তো জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় কম, কিন্তু বাড়ছে তো। সেখানে ই-বুকের স্থান অনেকাংশই কম।’ আগামী অর্ধ শতাব্দীতেও ছাপা বইয়ের আর্কষণ কমবে না বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ছাপা বই আপনি শুয়ে-বসে যেভাবে খুশি পড়তে পারেন, কিন্তু ই-বুকের ক্ষেত্রে সেই সুযোগ নেই। আর কতজন পাঠকের কাছেই বা কম্পিউটার বা ই-বুক রিডার আছে?’
এদিকে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় গতকাল এসেছে ১০২টি নতুন বই এবং ২৯টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘সত্তর দশকের কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুজিবুল হক কবীর। আলোচনায় অংশ নেন ইকবাল হাসান ও খালেদ হোসাইন। সভাপতিত্ব করেন অসীম সাহা।
প্রাবন্ধিক বলেন, ‘অজস্র কবির ঋদ্ধ সত্তর দশক। সমকালীন অনুষঙ্গ, প্রসঙ্গ, সঙ্গ ও দর্শন সত্তরের কবিতাকে দিয়েছে নতুন মাত্রা, নতুন স্বাদ। যুগের অস্তিত্ব, সংকট, প্রগতি, স্ফুরণ, মনোজগৎ ও বহির্জগতের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া সত্তরের কবিতায় প্রবলভাবে উপস্থিত।’
সভাপতির বক্তব্যে কবি অসীম সাহা বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর আমাদের ভেতরে তীব্র আবেগ জেগে উঠেছিল; তারই প্রেরণায় কবিতাজগতেও বিপুল সাড়া জেগেছিল। কিন্তু এই আবেগের তীব্রতা বাস্তবের কশাঘাতে দ্রুতই স্তিমিত হয়ে আসে। তবে এ সময়ের কবিদের মধ্যে অনেকেই বিস্ময়কর সব পঙ্ক্তি রচনা করেছেন, যা আজও আমাদের প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে।’
মন্তব্য চালু নেই