ইন্টারনেট সেবায় লাইসেন্সে গোয়েন্দাগিরিতে বিটিআরসির না

প্রযুক্তিগত সন্ত্রাস ঠেকাতে ইন্টারনেট সেবার লাইসেন্সিংয়ে গোয়েন্দা সংস্থার অনাপত্তিপত্র বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কিন্তু বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ প্রক্রিয়ার বিরোধীতা করেছে। তারা বলছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক হওয়ায় লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়ায় জটিল হয়ে পড়েছে। লাইসেন্স প্রদানে বেশি সময় লাগছে। তাই এ শর্ত শিথিল করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে সম্প্রতি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইন্টারনেটভিত্তিক নানা সেবা ব্যবহার করে ও ফোনের মাধ্যমে দেশে সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে কঠোর হয়েছে সরকার। তথ্য প্রযুক্তির সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স প্রদান ও নবায়নে গোয়েন্দা সংস্থার অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক করতে গত ৩১ মার্চ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।

নির্দেশনায় বলা হয়, ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করে নাশকতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তাই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি), ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিফোন সার্ভিস প্রোভাইডার (আইপিটিএসপি), সাইবার ক্যাফসহ বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সেবার লাইসেন্স দেয়ার আগে আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের সার্বিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন নিতে হবে। এ নির্দেশনার পর অনেক প্রতিষ্ঠানের আবেদন বিটিআরসিতে ফেরত পাঠায় মন্ত্রণালয়। এসব লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে নির্দেশনা অনুযায়ী প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বিটিআরসিকে চিঠি দেয় মন্ত্রণালয়।

এ প্রক্রিয়ায় লাইসেন্স প্রদানে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিটিআরসি। তারা বলছে, টেলিযোগযোগ আইন ২০০১ অনুসারে এ ধরনের লাইসেন্সের জন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদন জরুরি নয়। এছাড়া একই আইনের ধারা ৩৬-এর উপধারা ৮ অনুযায়ী নতুন লাইসেন্সের আবেদন ১৮০ দিন নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিতে গেলে এ সময়সীমার মধ্যে লাইসেন্স প্রদান সম্ভব নাও হতে পারে। যাতে আইন লঙ্ঘনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, নিরাপত্তার স্বার্থে গোয়েন্দা প্রতিবেদন জরুরি হলে লাইসেন্স প্রদানের পরেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা যায়। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আপত্তি পাওয়া গেলে লাইসেন্স বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।

বিটিআরসি বলছে, ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রযুক্তি সেবা পৌঁছে দিতে কাজ করছে। লাইসেন্স প্রদান বাধাগ্রস্ত হলে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা হোঁচট খাবে।

স্যাটেলাইট ও রেডিওর সম্প্রচারের ক্ষেত্রে তরঙ্গ বরাদ্দ দিতেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন নিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে গোয়েন্দা প্রতিবেদন পেতে বিলম্ব হওয়ায় লাইসেন্স প্রদানে সময়ক্ষেপণ হয় বলে দাবি করেছে বিটিআরসি।

এ বিষয়ে নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের ও আইন শৃ্ঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বক্তব্য হলো, সাম্প্রতিককালে দেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সন্ত্রাস বেড়ে গেছে। এমনকি খোদ টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীকেও সম্প্রতি ফোনে হুমকি দেয়া হয়েছে। এ খাতের শৃঙ্খলা প্রয়োজন। যাচাই বাছাই ছাড়া লাইসেন্স দিলে টেলিযোগাযোগ খাতে অরজাকতার সৃষ্টি হবে।

টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিটিআরসির প্রস্তাব আমরা পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা হচ্ছে। দুটি বিষয় আমাদের সম্মুখে আছে, হয় বিটিআরসিকে বলতে হবে তারা গোয়েন্দা প্রতিবেদন ছাড়া কোনো লাইসেন্স আবেদন পাঠাবে না নতুবা আবেদনের জন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদন বাধ্যতামূলক রাখা হবে। ওই কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় সরকারের নীতি নির্ধারকদের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, উন্মুক্ত লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় দেয়া লাইসেন্সের জন্য আগ্রহী প্রতিষ্ঠান বিটিআরসিতে আবেদন করে। বিটিআরসি গঠিত কমিটি আবেদন বাছাই ও তথ্যের সত্যতা যাচাই করে দেখে। কমিটির দুজন সদস্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা পরিদর্শন করে সন্তোষজনক মতামত দিলে আবেদনটি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে লাইসেন্স ইস্যু করে কমিশন।

বর্তমানে বিভিন্ন ক্যাটগরির (জাতীয়, আঞ্চলিকসহ) লাইসেন্সধারী চার শতাধিক আইএসপি প্রতিষ্ঠান আছে। এর বাইরেও অনেক প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে। আইপিটিএসপি লাইসেন্সের সংখ্যা ৪২। চালু রয়েছে ২৩টি প্রতিষ্ঠান। দেশে তিন হাজরের অধিক সাইবার ক্যাফে থাকলেও লাইসেন্সধারী সাইবার ক্যাফে ২৫০ টির মতো।



মন্তব্য চালু নেই