আষাঢ় মাসে চৈত্রের গরম : রাজধানীতে ৪৩ ভাগ কম বৃষ্টিপাত

সাত বছরের শিশু তানিম। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সিএনজি অটোরিকশাযোগে মা-বাবার সঙ্গে জুতা কিনতে রাজধানীর পলওয়েল মার্কেটে আসে। দেড় ঘণ্টার যানজট ঠেলে দুপুর দেড়টায় মার্কেটে পৌঁছে দু-তিনটা দোকান ঘোরার পর হঠাৎ বাসায় ফিরে যেতে বায়না ধরে তানিম। জুতা না কিনলে ঈদে কি পরবে- এ কথা বলতে কান্না জুড়ে দিয়ে বলে, ‘গরমে সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছি। ঘামে গেঞ্জি ভিজে গেছে, শরীর চুলকাচ্ছে। বাসায় ফিরে চলো।’

বাংলা মাস গণনা হিসেবে আজ ১৬ আষাঢ় হলেও বৃষ্টির দেখা নেই। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে কেনাকাটা করতে শপিং কমপ্লেক্সে ছুটে যাচ্ছে হাজারো মানুষ। একদিকে রাস্তাঘাটে যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকার কষ্ট, অপরদিকে চৈত্রের কাঠফাঁটা রোদের মতো গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত।

আবহাওয়া অধিদফতরের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, গত এক মাসে (১-২৯ জুন) রাজধানীসহ সারাদেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের চেয়ে শতকরা ২৯ ভাগ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। সাত বিভাগের মধ্যে ময়মনসিংহ ও খুলনা বিভাগ ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশালে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু কম সক্রিয় থাকায় বৃষ্টি কম হয় বলে জানান আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান। তবে জুলাই মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

জানা গেছে, বিভাগওয়ারী হিসাবে স্বাভাবিক মাত্রার বৃষ্টিপাতের চেয়ে ঢাকায় ৩৪৫ মিলিমিটার, ময়মনসিংহ ৩৯৪ মিলিমিটার, চট্টগ্রাম ৫৭৯ মিলিমিটার, সিলেট ৬১৩ মিলিমিটার, রাজশাহী ২৮৯ মিলিমিটার, রংপুর ৩৮৩ মিলিমিটার, খুলনা ২৮৮ মিলিমিটার ও বরিশালে ৪৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও ঢাকায় শতকরা ৪৩ দশমিক ১ ভাগ, চট্টগ্রামে ৩১ ভাগ, সিলেট ২০ দশমিক ২ ভাগ, রাজশাহী ৫৩ দশমিক ৯ ভাগ, রংপুর ২৮ দশমিক ৮ ভাগ ও বরিশাল ৩০ দশমিক ১ ভাগ কম বৃষ্টিপাত হয়।

হঠাৎ গরমে রাজধানীসহ সারাদেশে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুসারে বর্তমানে ১৩টি জেলা ডায়রিয়াপ্রবণ। জেলাগুলো হলো- নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা, রাঙ্গামাটি, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ, যশোর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, ঝিনাইদহ, নড়াইল ও সিলেট। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ৫২৬ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মহাখালীর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে (আইসিডিডিআর,বি) ৩৬২ জন চিকিৎসা নিচ্ছে।

রাজধানীর লালবাগের বাসিন্দা বেসরকারি চাকরিজীবী হাসান আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান, বর্তমানে বর্ষাকাল চলছে। বৃষ্টি হবে ভেবে মাসখানেক আগে ছাতি কেনেন। কিন্তু এখন বৃষ্টির দেখা নেই। অফিসে বাসে চেপে যেতে আসতে গরমে প্রাণ যায় যায়। রাতেও গরমে ঘুমাতে পারেন না। সেহরি খেয়ে ঘুমিয়ে অফিসে যেতে দেরি হওয়ায় বসের বকা খেতে হচ্ছে বলে জানান।জাগোনিউজ



মন্তব্য চালু নেই