আমূল পরিবর্তন আসছে বিসিএস পরীক্ষায়

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষা পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আসছে। পাল্টে যাচ্ছে বর্তমান পরীক্ষা পদ্ধতি। পরীক্ষার প্রক্রিয়া ও মানবণ্টনে আসছে নানা পরিবর্তন। দীর্ঘদিন পর বাড়বে আবেদন ফরমের মূল্যও। বর্তমান পদ্ধতি পরিবর্তন করে নতুন পদ্ধতিতে ৩৫তম বিসিএস পরীক্ষা নেয়া হবে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, নতুন পরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হবে ৩০০ নম্বরে। সময় দেয়া হবে তিন ঘণ্টা। বর্তমানে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সময় দেয়া হয় এক ঘণ্টা। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণরা বিষয়ভিত্তিক লিখিত পরীক্ষায় এসে বর্তমানে প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রতে আলাদা আলাদাভাবে ১০০ নম্বরের পরীক্ষার মুখোমুখি হন। যেখানে উভয় পত্রতেই চাকরিপ্রার্থীরা সময় পান তিন ঘণ্টা করে। নতুন বিষয় কার্যকর হলেই লিখিত পরীক্ষায় সব বিষয়ের প্রথম পত্রের পরীক্ষা হবে ২০০ নম্বরে, যার সময় হবে তিন ঘণ্টা। আর দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা ১০০ নম্বরে, যার সময় থাকবে তিন ঘণ্টা। মৌখিক পরীক্ষায় পাসের সর্বনিম্ন নম্বর হচ্ছে ৫০ শতাংশ। আসছে আরও কিছু পরিবর্তন।

আরও জানা যায়, সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও পাবলিক সার্ভিস কমিশন উভয়েই বহু বছরের পুরো পরীক্ষার এ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার পক্ষে। সম্প্রতি নতুন নিয়মের প্রস্তাবনা ও সুপারিশসহ একটি চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে পিএসসি। এছাড়া ‘বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশন ২০১৩ খসড়া নীতিমালা’ ও ‘বিসিএস পরীক্ষা আইন ২০১৩’ বাংলায় প্রণয়ন করা হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। কর্ম কমিশনের পাঠানো প্রস্তবটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। আগামী ৩৫তম বিসিএস থেকেই নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হবে এমন চিন্তা মাথায় রেখেই কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আর নতুন প্রস্তবটি চূড়ান্ত হয়ে গেলেই ৩৫তম বিসিএসের বিজ্ঞাপন দেয়া হবে।

প্রস্তাবিত সুপারিশ অনুযায়ী, আগামীতে সকল বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পূর্ণমান হবে ৩০০ এবং তিন ঘণ্টায় এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান নিয়মে ১০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এক ঘণ্টায় অনুষ্ঠিত হয়। আর এ পরীক্ষার ফি ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৭০০ টাকা এবং আদিবাসীদের জন্য ৫০ টাকার পরিবর্তে ২৫০ টাকা ফি নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জানা গেছে, প্রস্তাবিত পদ্ধতি বাস্তবায়িত হলে বিসিএসের বিষয়ভিত্তিক লিখিত পরীক্ষায় ২০০ নম্বরের প্রথম পত্রের পরীক্ষা তিন ঘণ্টায় এবং ১০০ নম্বরের দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা তিন ঘণ্টায় অনুষ্ঠিত হবে। বতর্মানে উভয় পত্রের পরীক্ষারই পূর্ণমান ১০০ এবং তিন ঘণ্টায় প্রতি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমান নিয়মে ১০০ পূর্ণমানের পরীক্ষায় ২৫ নম্বরের নিচে ‘নো নম্বর’ হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু নতুন নিয়মে ৩০ নম্বরের নিচে এ মান নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মৌখিক পরীক্ষায় পাসের জন্য সর্বনিম্ন ৫০ শতাংশ নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে এই নম্বর হচ্ছে ৪০ শতাংশ। যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষায় পরিবর্তন আনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন প্রস্তাবটি চূড়ান্ত হয়ে গেলেই ৩৫তম বিসিএসের বিজ্ঞাপন দেয়া হবে। এক হাজার ৭৮৯ জন কর্মকর্তা নিয়োগের লক্ষ্যে সরকারী কর্ম কমিশন ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। কর্ম কমিশনের পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তন আনয়ন করলেও কোটাপদ্ধতির পরিবর্তনের বিষয়ে কোন সুপারিশ করেনি। ফলে বর্তমান কোটাপদ্ধতি নতুন ব্যবস্থায়ও বহাল থাকবে।

অন্যদিকে কোটাপদ্ধতির পরিবর্তন বা সংস্কারের কথা না বললেও পিএসসি নিখুঁতভাবে উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়নের স্বার্থে সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে প্রচলিত কোটা প্রয়োগ পদ্ধতির সরলীকরণের সুপারিশ করেছে। পিএসসির অভিমত, প্রচলিত কোটাসংক্রান্ত নীতিমালার প্রয়োগ অত্যন্ত জটিল, দুরূহ এবং সময়সাপেক্ষ। প্রচলিত পদ্ধতির জটিলতার কারণে উপযুক্ত প্রার্থী নির্বাচন শতভাগ নিখুঁতভাবে করা প্রায় অসম্ভব। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে তাই পিএসসি সরকারের কাছে প্রচলিত কোটা প্রয়োগ পদ্ধতির সরলীকরণের সুপারিশ করছে। পিএসসি একই সঙ্গে বলেছে, মুক্তিযোদ্ধা, নারী ও আদিবাসীসহ প্রাধিকার কোটা জেলাভিত্তিক না করে মেধার ভিত্তিতে সারাদেশের জন্য করা হোক। সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে এই সুপারিশ তুলে ধরেছে সরকারী কর্ম কমিশন।

সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ



মন্তব্য চালু নেই