“আমি মাসরুফ হোসেন, একজন পুলিশ অফিসার : আমি যেভাবে কাজ করি”

বাংলাদেশের পুলিশ সরকারের অন্য অনেক সংস্থার মত নানা কারনে আলোচিত সমালোচিত। তবে পুলিশকে জনগনের সঙ্গে সবাসরি সম্পৃক্ত থাকতে হয় বলে সমালোচনার পাল্লাটা ভারী। বৃটিশ আমল থেকে চলে আসা আমলাতান্ত্রিক সংস্কৃতি যেমন শত বছর ধরে তৈরি হয়েছে সেটা ভেঙ্গে দেয়া এক দুই বছরে সম্ভব না। তবে যে কয়জন মানুষ সেই সংস্কৃতি ভেঙ্গে দিয়ে পুলিশকে মানুষের বন্ধু করার প্রত্যয় নিয়েছেন তাদের একজন হলেন সহকারী পুলিশ সুপার জনাব মাসরুফ হোসেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশ পুলিশ একদিন বিশ্বের সেরা পুলিশ বাহীনি হবে।

ফেসবুকের জনপ্রিয় নেটওয়ার্কিং ব্যবহার করে প্রযুক্তি ও মেধার সমন্বয়ে তিনি প্রথম চালু করেন উত্তরা পুলিশ পেট্রোলের একটি ফেসবুক পেজ। পেজটি জনসাধারনের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। মানুষ সরাসরি তাদের অভিযোগ, পরামর্শ পুলিশের উর্দ্ধতন অফিসারদের জানাতে পেরে নিজেদের প্রকৃত নাগরিক ভাবতে শুরু করে। উত্তরায় থাকাকালীন সেখানকার সবচেয়ে অপরাধপ্রবন এলাকাগুলোকে পরিবর্তন করে ‘ডিজিটাল সেইফ জোন’ করার ক্ষেত্রে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।

বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে সরকারী চাকুরীজীবীরা ‘স্যার’ সম্বোধন শুনে অভ্যস্থ। তিনি এই সংস্কৃতির বাইরে গিয়ে করদাতা জনগনকে ‘স্যার’ সম্বোধন করেন। পরবর্তীতে তিনি উত্তরা থেকে চলে আসেন গুলশান সার্কেলে। আপোষহীন ভূমিকা রাখেন তিনি ফরমালিন বিরোধী অভিযানে। মানুষের পাশে ছুটে গেছেন তিনি একটি ফোন পেয়েই। তার অফিসে লেবু চায়ের দাওয়াত ছিল সবার জন্য।

এরপর তাকে বদলী করা হয় খাগড়াছড়ি এপিবিএন এ। এই বদলিকে সাধারন মানুষ ভালভাবে নেয়নি। সবাই ধারনা করেছিলেন তার ভাল কাজে ক্ষমতাধর কেউ ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে তাকে এই বদলি করেছে, যেটা ফেসবুকে তার ফলোয়াররা জানিয়েছিলেন তাদের মন্তব্যের মাধ্যমে। বর্তমানে তিনি উচ্চশিক্ষার্থে জাপান অবস্থান করছেন। আবু রায়হান মিকাঈল-এর সম্পাদনায় আজ আমরা আওয়ার নিউজ বিডি’র পাঠকদের জন্য কিছু প্রশ্নাত্তোরের মাধ্যমে সেই মহান ব্যক্তির মহান হয়ে উঠার গল্প শোনাব।

নাম ও পেশাঃ আমি মাসরুফ হোসেন, একজন পুলিশ অফিসার।

কোন বিষয়গুলো আপনাকে পুলিশ পেশাতে আসতে অনুপ্রানিত করেছে?

কেভিন কস্টনার আর রবার্ট ডি নীরো অভিনীত একটি মুভি- দা আনটাচেবলস। শিকাগো শহরের মাফিয়া ডন আল কাপোনকে অফিসার এলিয়ট নেস আর তার দল কিভাবে গুঁড়িয়ে দেয়- এটি দেখেই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম!

আপনাকে সবাই “ডিজিটাল পুলিশ” হিসেবেও চেনেন। আপনি ডিজিটাল পুলিশ হিসেবে কিভাবে জনগণকে সহায়তা করে থাকেন?

সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে আইনী পরামর্শ ও পুলিশি সহায়তা দিয়ে থাকি। এখন দেশের বাইরে থাকায় সরাসরি সহায়তা করতে না পারলেও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করি।

6

আপনি কিভাবে আপনার কাজে ফোকাসড থাকেন, বিশেষ করে যখন পেট্রোলিং এর দায়িত্বে থাকেন? একই সাথে কিভাবে সম্ভাব্য অপরাধ প্রতিরোধ এবং সঙ্ঘটিত হওয়ার পর অপরাধীকে খুজে বের করার পেছনে নজর দেন?

আমি স্মার্টফোনের মাধ্যমে মাল্টিটাস্কিং করি। অপারেশনে যাবার পথে সময়টুকু কাজে লাগাই স্মার্টফোনের মাধ্যমে।

আপনার থেকে পদমর্যাদায় বড় কোনও অফিসারকে অন্যায় কিছু করতে দেখলে আপনি কি করেন? (প্রশ্নটি করেছেনঃ আল আমিন আহমদ)

এখনো এধরণের পরিস্থিতির সম্মুক্ষীন হইনি। তবে যদি হতে হয়, চেষ্টা করব আমার সাধ্যমত প্রতিবাদ করতে।

4

পুলিশ হিসেবে আপনি কি কি স্বভাব লক্ষ করেন কোন নতুন মানুষকে বিবেচনা করার সময়? (প্রশ্নটি করেছেনঃ সামসু নাহার লিপি)

সে যা বলছে তার সাথে কমন সেন্স এর বিবেচনায় মিল আছে কিনা। যেমনঃ একজন ছাত্র যদি বলে সে মাসে পাঁচ লাখ টাকা আয় করছে, সেটা হবে অস্বাভাবিক, তখন তার কথার সাথে আয়ের উৎস মিলিয়ে দেখা হবে।

পুলিশিং ইজ অল এবাউট কমন সেন্স, সাধারণ বুদ্ধি বিবেচনা দিয়েই সমস্যা সমাধান করা যায় বেশিরভাগ সময়ে।

জনগণকে সহায়তা করার জন্য আপনারা মোবাইল অ্যাপস বানিয়েছেন। কিভাবে অ্যাপের আইডিয়াটি আসল? আর অ্যাপটি সম্পর্কে একটু বলুন।

এই এ্যাপটি মূলতঃ বুয়েটের দুজন তরুন ইঞ্জিনিয়ার এবং প্রাক্তন ক্যাডেটের মাথায় আসে। আমি নিজেও এক্স ক্যাডেট হওয়ায় ওরা আমার সাথে যোগাযোগ করে, আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টা জানালে তাঁদের সার্বিক পৃষ্ঠপোষকতায় এটি আলোর মুখ দেখে।

যে ডিভাইসগুলো দিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করেন এবং কেন?

স্যামসং গ্যালাক্সি নোট থ্রি আমার ওয়ার্কিং মোবাইল ফোন। এটি দিয়ে আমি ক্রাইম সীনের ছবি তুলি, সন্দেহভাজন এলাকার ভিডিও করি এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করি।

তিনটি অ্যাপ/সফটওয়ার/টুলস যেটি ছাড়া আপনার একদিনও চলা সম্ভব না?

প্রোডাক্টিভিটি এ্যাপ পমোটুডু (pomotodo)

আপনার কাজের স্থানটা কেমন?

অগোছানো, প্রচুর বইপত্র থাকে।

1

যখন কাজ করেন তখন কি ধরনের গান শোনেন?

বাছাই করা কিছু গান, হিন্দি বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে।

আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় কৌশল কি?

বার বার হেরে গিয়েও আমি উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করি – কখনো হাল ছাড়িনা।

প্রতিদিনের টু-ডু লিস্ট তৈরি করার জন্য কোন সফটওয়্যার/পন্থাটি আপনার কাছে সেরা মনে হয়?

পমোডরো টেকনিক, গুগল করলে জানতে পারবেন। পঁচিশ মিনিট কাজ করার পর পাঁচ মিনিট ব্রেক- এরকম একটি পদ্ধতি।

আপনার মোবাইল এবং কম্পিউটার ছাড়া এমন কি ডিভাইস ব্যাবহার করেন যেটা ছাড়া আপনি থাকতে পারবেন না?

সাদামাটা বই।

একজন বাংলাদেশি হিসেবে যানজট আমাদের নিত্য দিনের সঙ্গী। আপনি যখন যানজটে অলস বসে থাকেন তখন কি করেন ?

বই পড়ি।

আপনি কোন সময়টাতে কাজ করতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন ?

রাতে।

আপনার ঘুমানোর রুটিন কি রকম?

সারাদিনের যে কোন সময়ে চার ঘন্টা ঘুমিয়ে নেই।

আপনার কোন দিকটা অন্যদের চেয়ে ভাল?

আমি প্রচুর বই পড়ি, এটা আমাকে এগিয়ে দেয়।

3

আপনার জীবনে আপনি সবচেয়ে ভাল উপদেশ কি পেয়েছেন?

“It’s not the mountain we conquer but ourselves”- Sir Edmund Hillary

একজন মানুষের কোন তিনটি বই বা সিনেমা অবশ্যই পড়া বা দেখা উচিৎ?

বই- আর্ট অফ ওয়ার এবং দি আলকেমিস্ট। সিনেমা- শশাংক রিডেম্পশন

যেকোনো জটিল পরিস্থিতিতে নিজের কাজ করার মানসিকতা ঠিক রাখার জন্য আপনি কি করেন ?

অভিজ্ঞদের পরামর্শ নিই।

যারা ভবিষ্যতে পুলিশ হতে যাচ্ছে তাদেরকে আরও উৎসাহিত করতে আপনার উপদেশ কি হবে?

শত সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তবে এর মধ্যেও যেটুকু সম্ভব নাগরিকদের সেবা প্রদান করুন। সূত্র: howiwork

আরো পড়ুনঃ

ফোনে হুমকি পেলে কি করবেন? শুনুন বাংলাদেশের সাহসী একজন পুলিশ অফিসারের মুখে



মন্তব্য চালু নেই