‘আমার তনু কি বাংলাদেশের না? তনু কি বিচার পাবে না?’

‘আমার তনু কি বাংলাদেশের না? তনু কি বিচার পাবে না?’ চোখে জল নিয়ে মা আনোয়ারা বেগমের এই জিজ্ঞাসার জবাব পেতে মুখিয়ে গোটা দেশ।

কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ছয় মাসেও বিচারের অগ্রগতি হয়নি। আর এর প্রতিবাদে কুমিল্লায় পূবালী চত্বরে বাউল পদযাত্রা ও প্রতিবাদী সমাবেশে তনুর মায়ের কান্নাভেজা কণ্ঠে দেয়া বক্তব্য ছুঁয়ে যায় সবাইকে। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে হত্যা করে উল্টো আমাদের উপর চাপ প্রয়োগ করছে সিআইডি।’

সমাবেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক কর্মীসহ বিভিন্ন সামাজিক ও নাগরিক সংগঠন গণজাগরণ মঞ্চ, অচিন পাখি, বাউল শিল্পীরা একসাথে জমায়েত হয়। গানে গানে তুলে ধরে তনু হারানোর বেদনা।

চলতি বছরের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে ময়নাতদন্ত করা হয়। পরে আদালতের নির্দেশে ৩০ মার্চ দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত হয়। দুই দফায় তদন্ত কর্মকর্তা ও সংস্থা পরিবর্তন শেষে ৩১ মার্চ মামলাটি সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়।

গত ৪ এপ্রিলে তনুর প্রথম ও ১২ জুন দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দেয়া তার মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করতে পারেনি কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের ডাক্তাররা। প্রথম প্রতিবেদনে ধর্ষণের আলামত পাওয়া না গেলেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ‘সেক্সুয়াল ইন্টারকোর্স’ উল্লেখ করায় দেশজুঁড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

বিচারের দাবিতে দেশব্যাপী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ এবং সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বিচারের আশ্বাস দেয়া হলেও তদন্ত সংস্থা সিআইডি এখনো মামলার রহস্যের জট খুলতে পারেনি। তবে সিআইডির শেষ ভরসা তনুর ডিএনএ প্রতিবেদন।

সিআইডির ফরেনিক ল্যাবে তনুর ডিএনএ প্রতিবেদনে তিন পুরুষের শুক্রানু পাওয়া গেলেও তা শনাক্ত করতে এখনো সন্দেহভাজনদের ডিএনএ সংগ্রহ করতে আদালতের অনুমতি নেয়া হয়নি। এতে তনু হত্যার রহস্য উদঘাটন ক্রমেই অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে তনুর পরিবারের আশঙ্কা।

এই তরুণী হত্যার বিচার দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তনুর মা বলেন, ‘মেয়ে মরল আমার, অথচ কেবল আমাদের চাপ দেয় হত্যার ঘটনা নিয়ে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলছি না। বিচার পেলে মনটা সান্তনা পেত। দেশবাসীও খুশি হতো। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে আছে, তিনি আমার দরদ বুঝবেন। আমি তার কাছে বিচার চাই।’

তনুর মা বলেন, ‘তনুর মামলা তদন্ত যে করতেন, এখন তাকে বাদ দিয়ে নতুন করে জালাল উদ্দীন নামে একজনকে দিয়েছে তদন্ত করতে। তিনি এ পর্যন্ত আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ করেনি । শুধু একবার সেনানিবাসে গিয়েছে তনুকে ফেলে রাখার জায়গা দেখতে।’

গত ১ এপ্রিল মামলাটি সিআইডিতে স্থানান্তরিত হওয়ার পর মামলার তদারকি করছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার নাজমুল করিম খান এবং তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম। এর মধ্যে নাজমুল করিম খানকে গত ১১ জুলাই রাজশাহীতে বদলি করা হয়। এরপর তদন্তের গতি আরও বন্ধ হয়ে যায় বলে অভিযোগ করছে তনুর পরিবার। আগস্টে গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম অসুস্থতার কথা বলে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। এরপর গত ২৪ আগস্ট নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান সিআইডির এএসপি জালাল উদ্দীন আহমেদ।

কুমিল্লায় গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, ‘তনুর মা কয়েকজন সন্দেহভাজনের নাম সিআইডি ও গণমাধ্যমকে বলেছেন। আজ পর্যন্ত কোনো সন্দেহভাজনের সঙ্গে তনুর পোশাকে পাওয়া ডিএনএ নমুনা মেলানো হয়নি। সিআইডির তদন্তের এই দশা আমাদের সবাইকে ক্ষুব্ধ ও হতাশ করেছে।’



মন্তব্য চালু নেই