আমলাতন্ত্রে আটকা মুক্তিযোদ্ধা চাকুরেদের অবসর বয়সসীমা

আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে মুক্তিযোদ্ধা সরকারি চাকুরেদের অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর নির্দেশনা। সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া পর্যবেক্ষণ-রায়ে দুই মাসের মধ্যে তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপনের নির্দেশনা ছিল। দেড় মাসের বেশি সময় পার হলেও এ-সংক্রিান্ত কোনো প্রস্তাব ওঠেনি মন্ত্রিসভায়। ৬০ দিন পূর্ণ হতে আর মাত্র পাঁচ দিন বাকি।

তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পাওয়া গেলে যেকোনো সময় এ-সংক্রান্ত প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে।

গত বছরের ১৬ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় উত্থাপনের পক্ষে মত দেন হাইকোর্ট। জামালউদ্দিন শিকদারের করা এক রিটের শুনানিতে আদালত উল্লেখ করেন, নির্বাহী বিভাগের কাজের ওপর আদালতের নির্দেশ দেয়া ঠিক নয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ২০০৬ সালের একটি আদেশের উদ্ধৃতি দিয়ে আদেশ পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপনের নির্দেশ দেন আদালত।

দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে এলেও চাকরির বয়সসীমা না বাড়ায় ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে সরকারি চাকরিরত এবং সম্প্রতি অবসরে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেই এটি হচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ চলছে। প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

কত বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, আদালতের নির্দেশনায় কত বছর বাড়াতে হবে তেমন কিছু উল্লেখ নেই। তবে বিষয়টি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করতে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।

হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিষয়টি একান্ত সরকারের নির্বাহী বিভাগের। তাই আদালত এখানে কোনো নির্দেশনা নয়, শুধু পর্যবেক্ষণ দিতে পারেন। আদালত বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কারণেই যেহেতু দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে, তাই তাদের জন্য ছাড় দেয়া যেতেই পারে। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের গর্ব। তাই তাদের চাকরির বয়সসীমার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ খুবই যুক্তিযুক্ত। সরকারও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক।

জামালউদ্দিন শিকদারের পক্ষের আইনজীবী আজহার উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স বাড়ানোর বিষয়টি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আদালতের আদেশ পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে তা পালন করতে হবে। না করলে অপরাধ বলে গণ্য হবে।”

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, এ-সংক্রান্ত মামলার রায়ের কপি এখনো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেনি। পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পর আদালতের আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কয়েক দিন আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর বিষয়ে সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সেটি ফেরত আসেনি। তবে সেখানে চাকরির প্রবেশের সময়সীমা কত হবে তারও প্রস্তাব করা হয়েছে।

মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের অবসরের বয়সসীমা ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ বছর করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের ১২ জুলাই এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মুক্তিযোদ্ধাদের চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের বয়স ৫৭ থেকে ৬৫ বছরে উন্নীত করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। পরে চাকরির বয়স ৫৭ থেকে ৫৯ বছরে উন্নীত করার আগে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতিরিক্ত দুই বছর চাকরি করার সুযোগ পান। বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে এ সুবিধা ৬০ বছরে উন্নীত করা হয়েছে।

২০১০ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি গণকর্মচারী অবসর আইন ১৯৭৪ সংশোধন করে মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়সসীমা ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়। পরবর্তীকালে ২০১২ সালে জামাল উদ্দিন শিকদার আদালতে রিট করেন; যার নম্বর ২৩৫/২০১২। আদালতের পর্যবেক্ষণমতে পুনরায় তা ৬০ বছর করা হয়, যা এখনো মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভোগ করছেন।-ঢাকাটাইমস



মন্তব্য চালু নেই