বিমানবন্দরে তিন মাসে ৩৮টি আটক

আমদানি নীতিতে নেই, তারপরও আসছে ড্রোন

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত তিন মাসে ৩৮টি চালকবিহীন ছোট উড়ন্ত যান বা ড্রোন আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বিমানবন্দরের কার্গো গুদাম থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় একটি এবং ৩ নভেম্বর নয়টি ড্রোন আটক করা হয়। বিমানবন্দর শুল্ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

আমদানি নীতিমালায় ড্রোন আমদানির সুযোগ না থাকায় এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (সদস্য শুল্কনীতি) কোনো নির্দেশনা নেই। তবু ড্রোন আমদানি হচ্ছে। এ অবস্থায় আমদানি এবং আমদানির ক্ষেত্রে বিমানবাহিনী বা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ অথবা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে কি না, সে বিষয়ে নির্দেশনা চেয়েছে শুল্ক কর্তৃপক্ষ।

৩ নভেম্বর আটক নয়টি ড্রোন খেলনা হিসেবে ঘোষণা দিয়ে আমদানি করেছে ডেইজ ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে সাতটি ড্রোন চীন থেকে আমদানি করা হয়েছে। এগুলো বনানীর জনৈক গোলাম মাশকুর রহমান নামে এসেছে। চীনের ডিজেআই বাইওয়াং টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান এগুলো পাঠিয়েছে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে ড্রোন আনার কারণ জানতে চাইলে মাশকুর রহমান কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।

ঢাকা কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, গত তিন মাসে আটক ড্রোনগুলো নিতে ঢাকা কাস্টম হাউসের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। কোনো আবেদনও করা হয়নি। সর্বশেষ আটক ড্রোনগুলো চীনের তৈরি। শুল্ক গোয়েন্দারা গত সেপ্টেম্বর মাসে গার্মেন্টসের আমদানি করা কাপড়ের ভেতরে লুকিয়ে আনা পাঁচটি ড্রোন উদ্ধার করেছিলেন। বিমানবন্দরে কুরিয়ার গেট দিয়ে খালাসের সময় এগুলো জব্দ করা হয়। ওই কাপড় ও ড্রোন কারা এনেছে, তা জানাতে পারেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ড্রোনগুলো রিমোট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত। এসব ড্রোন ৪০০ ফুট বা ৪০ তলা ভবনের সমান উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। ওড়ার সময় কোনো শব্দ হয় না। পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে এ ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

কাস্টমস ও গোয়েন্দা সূত্রগুলো জানায়, আটক ড্রোনের বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একাধিক গোয়েন্দা সদস্য গত বুধবার কাস্টম হাউসে সংশ্লিষ্ট শুল্ক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব ড্রোন কী কাজে ব্যবহারের জন্য আনা হচ্ছে, তা খুঁজে দেখার বিষয়ে কর্মকর্তারা আলোচনা করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শুল্ক কর্মকর্তা বলেন, তিন মাসে ৩৮টি ড্রোন ধরা পড়া এবং যে প্রক্রিয়ায় এগুলো আসছে, তাতে মনে হচ্ছে আরও ড্রোন বিমানবন্দর দিয়ে বাইরে চলে যেতে পারে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতি ২০১২-১৫ তে ড্রোন আমদানির বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। তারপরও দেশে ড্রোন আমদানি হচ্ছে।

দেশে পদ্মা সেতুর কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ ড্রোন ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে। আর তথ্য সংগ্রহের জন্য কৃষি খেতে ড্রোন ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো কাজে ড্রোন ব্যবহারের তথ্য জানা যায়নি।

তবে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ড্রোন দিয়ে নাশকতা ঘটানো সম্ভব বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। গ্রেপ্তার তানজিল হোসেন ও গোলাম মওলা ড্রোন নিয়ে গবেষণা করছেন জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, তাঁদের তৈরি ড্রোন ভারী বোমা নিয়ে ২০-৩০ তলা পর্যন্ত উঁচুতে উঠতে পারে।

দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন ধরনের ড্রোন তৈরি করছেন। গত বছরের ২৯ জানুয়ারি সিলেটে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রোন উড়িয়েছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরদিন ৩০ জানুয়ারি আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল, ‘ড্রোন বা রিমোট কন্ট্রোল চালিত বিমান বা হেলিকপ্টার উড্ডয়ন সক্ষমতা নিরীক্ষণের লক্ষ্যে কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই পরীক্ষামূলকভাবে উড্ডয়ন করা হচ্ছে, যা উড্ডয়ন নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকিস্বরূপ।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নির্ধারিত আকাশপথগুলো ছাড়া অন্যান্য স্থানে যেকোনো ধরনের বিমান (বেসামরিক, সামরিক ড্রোন, রিমোট কন্ট্রোল-চালিত হালকা বিমান/হেলিকপ্টার) উড্ডয়নের জন্য বিমানবাহিনী কর্তৃক মতামত ও পূর্ব অনুমোদন প্রয়োজন।’

আইএসপিআরের এই বিজ্ঞপ্তির বিষয়টি উল্লেখ করে ড্রোন আমদানির ক্ষেত্রে নির্দেশনা চেয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (সদস্য শুল্ক নীতি) চিঠি দিয়েছে ঢাকা কাস্টম হাউস। কমিশনার লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে ড্রোন আমদানি করার ক্ষেত্রে বিমানবাহিনী বা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ অথবা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাগবে কি না, সে বিষয়ে বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করা হয়।

ঢাকা কাস্টম হাউসের কমিশনার লুৎফর রহমান গতকাল বলেন, রাজস্ব আদায়ের চেয়ে দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। ড্রোন নিয়ে যদি খারাপ কিছু ঘটে, তার দায়দায়িত্ব কে নেবে? সবকিছু বিবেচনা করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে চিঠি পাঠানো হয়েছে।প্রথমআলো

চালকবিহীন আকাশযান বা ড্রোন
 ড্রোনগুলো রিমোট কন্ট্রোল নিয়ন্ত্রিত। ওড়ার সময় কোনো শব্দ হয় না

 ৪০০ ফুট বা ৪০ তলা ভবনের সমান উচ্চতায় উড়তে সক্ষম। পাঁচ কিলোমিটার দূর থেকে এ ড্রোন নিয়ন্ত্রণ করা যায়

 পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে এবং তথ্য সংগ্রহের জন্য কৃষি খেতে ড্রোন ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে ড্রোন দিয়ে নাশকতা ঘটানোর আশঙ্কাও রয়েছে



মন্তব্য চালু নেই