আজ রাণীনগর গণহত্যা দিবস

আজ ২৫ এপ্রিল। এই দিনটি নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার আতাইকুলা গ্রাম বাসির কাছে এক স্মরণীয় দিন। মুক্তিযোদ্ধের ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা একটি দিন। ২৫এপ্রিল রাণীনগরে যেমন শোকের ছায়া নেমে আসে তেমনি এই দিনটিকে নিয়ে এলাকাবাসি গর্ব বোধ করেন। এদিন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার আতাইকুলা গ্রামে গণহত্যা চালায়। নিরস্ত্র-নিরপরাধ গ্রামবাসীর উপর চালিয়ে ছিল বর্বর হামলা।

এদেশীয় রাজাকার আলবদরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে এসে যগেশ্বর পালের বাড়ির বৈঠক খানার সামনের আঙ্গিনায় যগেশ্বর ও তার পুত্র, ভাতিজা সহ ৫২ জন গ্রাম বাসীকে “জয় বাংলা বলতা হ্যায়, নৌকা মে ভোট দিতা হ্যায়” এই স্লোগান দিতে দিতে পাক-সেনারা মেশিনগান দিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। সে এক বীভৎস দৃশ্য। সে দৃশ্য মনে করে আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামবাসি আজও আতংকে কেঁপে উঠে। নওগাঁ জেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিঃমিঃ দক্ষিনে রাণীনগর উপজেলার ছোট যমুনা নদীর তীরে মিরাট ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী আতাইকুলা পালপাড়া গ্রাম। গ্রামবাসির অপরাধ ছিল তারা মুক্তিযোদ্ধকে সমর্থন করে অস্ত্র হাতে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধে ঝাঁপিয়ে পরেছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে এদেশকে রক্ষা করার জন্য।

১৯৭১ সালে ২৫ এপ্রিল হানাদার খানসেনা ২’শতাধিক নরপশুর একটি দল ওই দিন সকাল অনুমান ৯টার দিকে আতাইকুলা পালপাড়া গ্রামের পূর্বদিকে কুজাইল বাজারে উপস্থিত হয়ে পাকিস্তানের পতাকা হাতে নিয়ে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেয়। অবস্থা দেখে ওই গ্রামের কিছু লোক ওপাড় থেকে পালানোর চেষ্ঠা করলেও হানাদার বাহিনীর সহযোগীরা তাদেরকে বাঁধা দেয়। পাক-বাহিনিরা নদী পার হয়ে এসে পালপাড়া গ্রাম চার দিকে ঘিরে ফেলে। হতভাগ্য পালপাড়া গ্রামবাসি বুঝতে পারলো পরিবারের সবাইকে আজ মরতে হবে। ঘটে ছিলও তাই। সারা গ্রামের নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একত্রিত করলো তারা।

ওই গ্রামের ধনাঢ্য পরিবারবর্গের যগেশ্বর পালের বৈঠকখানার আঙ্গিনায়। এরপর শুরু হয় পাক-সেনাদের বর্বরতা নির্যাতন। সারাদিন ধরে চলে ঘরে ঘরে হত্যা, লুন্ঠন, ধর্ষন অগ্নিসংযোগসহ মর্মস্পর্শী নির্যাতন। সারা দিনের নিমর্ম অত্যাচারে গ্রামের বাতাস ভারি হয়ে আসে। নরপশুদের হাতে বন্দী নর-নারী শিশুরা পাথর হয়ে যায়। যার যা কিছূ টাকা-কড়ি, সোনা-দানা ছিল তুলে দিয়েছিল তাদের হাতে। কিন্তু তাতেও সেদিন বৈঠকখানার বন্দীদের ছাড়েনি ওরা।

বিকেল ৪টার দিকে তারা গ্রাম ত্যাগ করার আগে ওই বৈঠকখানার আঙ্গিনায় বন্দীদের ওপর চালালো উপর্যুপরি মেশিনগানের ব্রাশফায়ার। গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল নিরীহ গ্রামবাসিদের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল নিরীহ গ্রামবাসী শ্রী গবিন্দ্রনাথ চরন পাল (৩৫), জগেনন্দ্রনাথ(৪০), শুরেশ্বও পাল(৪১),তার পুত্র প্রকৌশলী প্রশান্ত কুমার পাল(২৫), শুনিল কুমার পালসহ শেষ হয়ে গেল ৫২টি তাজা প্রান।

ঘটনাক্রমে ওইদিন গুরত্বর আহত অবস্থায় প্রানে রক্ষাপায়, শ্রী সুনীল চন্দ্র পাল, সাধন চন্দ্র পাল, দেশ স্বাধীনের অনেক দিন পেরিয়ে গেলেও শহীদ পরিবারের খোঁজ-খবরসহ এখানকার গণকবরের উন্নয়নের কেউ ভ’মিকা রাখেনি। তাদের দাবি শেষ মূহূতে হলেও শহীদদের স্কীকৃতি ও গণকবরটি সংরক্ষন করা হোক।



মন্তব্য চালু নেই