আইভী-সাখাওয়াত লড়াইয়ে জড়িত শামীম-তৈমুরের ভাগ্য
ভোট উৎসবের মাধ্যমে শুরু হয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের শেষ লড়াই। আর নির্বাচনী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান। তবে এই দুই প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের হিসাবের পাশাপাশি আরও দুই নেতার নামও চলে আসছে।
নির্বাচনের ওই দুই পার্শ্বচরিত্র হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান ও বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার। নির্বাচনে প্রার্থীদের জয়-পরাজয়ে তাদের ভাগ্যও জড়িয়ে পড়তে পারে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে শামীম ওসমানের পারিবারিক দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। আইভীর প্রার্থিতার ক্ষেত্রেও বাধা দিয়েছিলেন তিনি। আইভীকে মনোনয়ন দেওয়ার পর দুই পক্ষের মধ্যে সমন্বয় তৈরিতে তাদের গণভবনেও ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও দুই নেতাকে এক করার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও শামীম ওসমানের অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতাদের আইভীর সাথে দেখা যায়নি। এমনকি নির্বাচনে অপ্রীতিকর পরিস্থিত সৃষ্টির আশংকাও রয়েছে আইভী ঘনিষ্ঠদের মধ্যে, যাদের চোখ শামীম ওসমানের দিকেই। ফলে নির্বাচনে আইভীর পরাজয় হলে এর জন্য শামীম ওসমান যে দায়ী হবেন তা অনেকটাই অনুমেয়।
আওয়াম লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলেছ, নির্বাচনে আইভীর পরাজয় হলে কেন্দ্রে শামীম ওসমানের অবস্থানই নাজুক হবে।
তবে এ ধরনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছন শামীম ওসমান। তিনি আইভীর বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘আমি সাখাওয়াতের পক্ষে কাজ করলে আওয়ামী লীগের একটি লোকও মাঠে থাকতো না।’
তিনি বলেন, ‘অনেকেই আইভীর প্রতি ক্ষুব্ধ। কিন্তু আমি তাদের বলেছি যে, নৌকাকে ভোট দাও, শেখ হাসিনাকে ভোট দাও। আর দলের সবাইই নৌকা প্রতীকের পক্ষে কাজ করছেম এটা সবাই দেখছে।’
আইভী হারলে তার উপর দায় পড়বে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার উপর দায় আসবে কেন? আমি যা করেছি তা অন্য কেউ হলে করতো না। আর আমি কি করেছি তা আমার দল জানে।’
শামীম ওসমান দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, ‘নৌকা হারবে না। তবে যে বড় ব্যবধানে জেতার কথা ছিল সে ব্যবধানে জিতবে না।’
তবে আইভী জিতলেও তা সুখকর হবে না শামীম ওসমানের জন্য। টানা দুইবার আইভী মেয়র হলে ওসমান পরিবার আধিপত্য নারায়ণগঞ্জে অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমার প্রভাব কমবে কেন? ও তো আগেও মেয়র ছিল। তাতে কি হয়েছে?’
এদিকে সাংসদ হওয়ার কারণে শামীম ওসমানের দৃশ্যমান উপস্থিতি নিয়ে বিতর্ক না হলেও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর আলম খন্দকারের সামনে সে সুযোগও নেই। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ব্যাপক প্রচারণা চালালেও তৈমুরের অবস্থান ছিল নিস্ক্রিয়। তৈমুর ছাড়াও স্থানীয় বিএনপি সাখাওয়াতের পাশে দাঁড়ায়নি। এ নিয়ে দলটির কেন্দ্রেও ব্যাপক আলোচনা রয়েছে।
বিএনপির মেয়র প্রার্থীর সাথে তৈমুরকে তেমন দেখা না গেলেও তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী ভাই খোরশেদ আলমকে নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন।
দলীয় প্রার্থীর প্রতি স্থানীয় বিএনপির এমন অসহযোগিতার কারণে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তৈমরের প্রতি ক্ষুব্দ। ফলে সোমবার রাতে তৈমুরকে ডেকে নিয়ে সতর্ক করেছিলেন দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সাখাওয়াত হারলে এর দায় স্থানীয় বিএনপি এড়াতে পারবে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই তৈমুরের বিষয়ে প্রশ্ন ওঠবে। যার তার ভবিষ্যতের জন্য নেতিবাচক হবে।
মন্তব্য চালু নেই