আইনস্টাইন ভুল ছিলেন! একটি বস্তু একই সময়ে দুই স্থানে থাকা সম্ভব!

তত্ত্বীয় বিজ্ঞানে সর্বাধিক আলোচিত ও পরীক্ষিত বিষয় কোয়ান্টাম বলবিদ্যা। আর হাতে গোনা যে কয়েক জন বিজ্ঞানী আইনস্টাইনকে ভুল প্রমাণের দাবি করেছেন তাদের ভিত্তি এই বিজ্ঞান।

গত সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটি এবং জাপানের ইউনিভার্সিটি অব টোকিওর বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, বস্তুকণার পরিমাপ এর অবস্থানকেও প্রভাবিত করে- কোয়ান্টাম বলবিদ্যার এই ধারণা সঠিক।

অথচ ১৯৩০ এর দশকে আইনস্টাইন এই ধারণা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি। তিনি একে বলেছিলেন, ‘দূরে অবস্থিত বস্তুর অদ্ভূত আচরণ’। একটা কণার একই সময়ে দুই স্থানে অবস্থানের ধারণা তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননি। এর পেছনে যুক্তিটা ছিল- আলোর গতির চেয়ে বেশি গতিতে তথ্য ভ্রমণ সম্ভব নয়। ফলে কণার এমন আচরণও অসম্ভব।

মূল সমস্যাটা ছিল আসলে ‘লোকালিটি’ (স্থানিকতা) নিয়ে। আইনস্টাইন ভেবেছিলেন বাস্তবতা স্থানিক। এটা কারো পর্যবেক্ষণের ওপর নির্ভর করে না। কিন্তু নিলস বোরের কোপেনহেগেনীয় ইন্টারপ্রিটেশন ঠিক এর বিপরীত। তারা এটি ব্যাখ্যা করেন পর্যবেক্ষণ মুহূর্তে ‘ওয়েভ ফাংশন কলাপ্স’ দিয়ে। এই ধারণার সমর্থনেই হাইজেনবার্গ দেখান, একটি কণার অবস্থান এবং বেগ যুগপৎ নির্ণয় করা অসম্ভব। আইনস্টাইন কখনোই এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হননি। দুটো কণার নন-লোকাল (অস্থানিক) যোগাযোগকে অস্বীকার করতেন। তিনি একে বলতেন, ‘স্পুকি কানেকশন অ্যাট অ্যা ডিসটেন্স’।

তবে আইরিশ পদার্থবিজ্ঞানী জন বেল এবং আশির দশকে অ্যালেইন অ্যাস্পেক্ট দেখান- আইনস্টাইনই ভুল ছিলেন। কণাদের মধ্যে ‘স্পুকি কানেকশন’ আছে এবং এটি অস্থানিক।

কিন্তু আধুনিক পরীক্ষা নিরীক্ষায় আপেক্ষিকতা তত্ত্বের অন্যতম ভিত্তিকেই ভেঙে দিচ্ছে, যেখানে আলোর গতিকে ধ্রুব ধরা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে এটাই বস্তুর গতির সর্বোচ্চ সীমা। এই সীমার চেয়ে বেশি গতিতে তথ্য আদান-প্রদান অসম্ভব। আইনস্টাইন মনে করতেন, বস্তুকণার উপরিপাতন (সুপারপজিশন) বা একটি কণার একই সময়ে দুই স্থানে অবস্থান বলতে কিছু নেই। বরং এটা একটা বাস্তব স্থানিক পরিমাপ আছে এবং মানুষ সেটা পর্যবেক্ষণ করতে পারে না।

অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের গবেষকরা একটি ফোটন ব্যবহার করে দেখিয়েছেন, এক স্থানে একটি কোয়ান্টাম পার্টিকেলের পরিমাপ অন্য স্থানে একে পর্যবেক্ষণকে প্রভাবিক করে। এটা প্রমাণ করে, উপরিপাতন এবং ওয়েভ ফাংশন কলাপ্স ধারণাটি সত্য।

১১এই পরীক্ষাটি যেভাবে করা হয়
একটি আলোকরশ্মিকে (যা একটি ফোটনে গঠিত) দুই ভাগে বিভক্ত করে ক ও খ নামে দু’জনের কাছে পাঠানো হলো। ক বললো সে একটি ফোটন শনাক্ত করেছে এবং সে এর দশা মাপলো।

ফোটন রশ্মিকে একটি স্প্লিটারের মধ্যে দিয়ে পাঠানো হয়। ফলে এর অর্ধেক অংশ ভেদ করে যায়, অর্ধেক প্রতিফলিত হয়। ভেদ করা অংশ যায় ক ল্যাবে আর প্রতিফলিত অংশ যায় খ ল্যাবে।

যেহেতু রশ্মিটি একটি ফোটনে সেহেতু একটি সমান দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এই ফোটন পরিমাপের আগে পর্যন্ত উপরিপাতন অবস্থায় থাকে।

ক ল্যাব ফোটনের দশা পরিমাপের জন্য একটি লেজার রশ্মিকে রেফারেন্স হিসেবে নেয়। যদি এই আলোকরশ্মিকে একটি পৌনপনিক সাইন তরঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, অর্থাৎ নির্দিষ্ট কোণে শূন্য থেকে ১৮০ ডিগ্রির মধ্যে দশা পরিমাপ করা হয়। ক যখন তার লেজারের কোণ পরিবর্তন করে তখন সে ফোটনের আলাদা পরিমাপ পায়। ফোটনটি নির্দিষ্ট দশায় থাকুক বা একদমই অনুপস্থিত থাকুক তাতে এখানে ম্যাটার করে না।

এবার খ ল্যাবে পর্যবেক্ষণে একদম উল্টো সম্পর্ক ব্যাপার পরিলক্ষিত হলো। তার মানে ক দেখলে খ দেখে না এবং খ দেখলে ক দেখে না। খ এর পর্যবেক্ষণকৃত ফোটনের অবস্থা নির্ভর করে খ কোন অবস্থায় সেটাকে দেখলো তার উপর।

কিন্তু পদার্থবিদ্যা বলে, এমনটি হওয়ার কথা নয়। এখানে বিভক্ত দুটি কণা স্বাধীন আচরণ করার কথা। কিন্তু ফোটনটি ক্ষেত্রে তা ঘটেনি।



মন্তব্য চালু নেই