আইএসের হাত থেকে ফিরলেন হেলাল

লিবিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হাতে অপহরণের ৩০ দিন পর দেশে ফিরলেন জামালপুরের হেলাল উদ্দিন।

মঙ্গলবার সকালে মাদারগঞ্জের আদারভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ গজারিয়ায় নিজ গ্রামে পৌঁছেন হেলাল।

এর আগে সোমবার রাতে লিবিয়া থেকে একটি বিমানে রওনা হন। ভোরে শাহজালাল বিমান বন্দরে এসে পৌঁছান তিনি। এরপর সেখান থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন।

আইএস জঙ্গিদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে হেলাল উদ্দিন বাড়িতে ফিরে আসায় খুশি তার পরিবার। তাকে এক নজর দেখার জন্য আর তার মুখ থেকে জঙ্গিদের হাতে অপহরণ কাহিনী শুনতে হেলালের বাড়িতে এখন ভিড় জামিয়েছে এলাকাবাসী।

হেলাল উদ্দিন জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নের দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের মৃত আমাত শেখের ছেলে। অভাবের সংসারে একটু স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ২০০৯ সালে তিনি পাড়ি জমান লিবিয়ায়। সেখানে গিয়ে উপার্জিত টাকায় স্ত্রী আর দুই ছেলে, তিন মেয়ের সংসারে অভাব কিছুটা কমে আসে। বেশ স্বচ্ছলভাবেই চলছিল সংসার।

আজ থেকে প্রায় দশ মাসে আগে লিবিয়া থেকে পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দুই মাসের জন্য বাড়িতে এসেছিলেন হেলাল উদ্দিন। গত ৬ মার্চ লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সিরতে শহরের একটি তেলের খনি থেকে আইএস সদস্যরা হেলাল উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ খবর শোনার পর থেকে তার পরিবারের মধ্যে অজানা আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা বিরাজ করে আসছিল। গত ২৪ মার্চ অপহরণের ১৮ দিন পর হেলালকে মুক্তি দেয় আইএস জঙ্গিরা। মুক্তির পর হেলাল উদ্দিন লিবিয়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকেন। তার মুক্তির খবরে পরিবারের অজানা আতঙ্ক কেটে গেলেও দেশে কবে নাগাদ ফিরে আসবে তা নিয়ে ছিল উৎকণ্ঠা।

মঙ্গলবার সকালে হেলাল উদ্দিন লিবিয়া থেকে বাড়িতে ফিরে আসায় খুশি হেলালের পরিবার। অজানা আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার পরিবর্তে এখন বিরাজ করছে খুশির আমেজ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পাওয়ায় বর্তমান সরকার, সংশ্লিষ্ট দূতাবাস এবং মিডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছে হেলালের পরিবার।

এদিকে আইএস জঙ্গিদের হাতে অপহরণের পর মুক্তি পাওয়ায় হেলাল উদ্দিনকে দেখতে এবং অপহরণের পর কীভাবে দিন কেটেছে তা জানতে হেলালের বাড়িতে ভিড় করছে এলাকাবাসী।

হেলালের স্ত্রী আলেয়া বেগম জানান, ভাবছিলাম হয়তো আর স্বামীরে দেখবার পাব না। আল্লাহ সহায় সত্যিই সে সুস্থ হালতে বাড়িত ফিরে আইছে।

হেলালের বড় মেয়ে হেলেনা জানান, আমার বাবা যখন জঙ্গিদের হাতে আটক হয়, তহন মনে হইছিলো বাবারে জঙ্গিরা মাইরা ফালাবো। কিন্তু সরকারের চেষ্টা আর সাংবাদিকদের জন্যই আমার বাবা আমাদের কাছে ফিরে আইছে।

নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা হেলাল উদ্দিন বলেন, জীবিত অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরে আসতে পারব এটা কখনো ভেবে পাই নাই। ৬ মার্চ যখন মুখোশধারী জঙ্গিরা আমাদের অপহরণ করে গাড়ি দিয়ে মরুভূমির মধ্যে নিয়া যায়, তখন ভাবছিলাম গাড়ি থেকে নেমেই বুঝি শিরশ্ছেদ দিবো। পরে মরুভুমির মধ্যে একটা বরফ কলের ওখানে নিয়া আমাদের কয়েকজনকে আটকে রাখে জঙ্গিরা। খাবার হিসেবে সাতুর মতো কি একটা খাবার দিতো, তাও আবার এক বেলা।

হেলাল উদ্দিন আরো জানান, জঙ্গিদের হাতে আটকা অবস্থায় প্রতিটা সময় খালি নিজের কৃতকর্ম আর স্ত্রী সন্তানাদির কথা মনে পড়েছে। আর একটা করে রাত পার হলেই মনে হতো আজ বুঝি মেরে ফেলবে। ১৮ দিন পর যখন জঙ্গিরা ছেড়ে দিলো, মনে হয়েছিলো আমি বুঝি পৃথিবীর মধ্যে আরো একবার নতুন করে জন্ম নিলাম। তবে যেটুকু বুঝতে পেরেছি আমি মুসলমান বিধায় আমাকে ছেড়ে দিয়েছে।

হেলাল আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, এখন পরিবারের কাছে ফিরা আসতে পাইরা অনেক খুশি আর আনন্দ লাগতাছে। আমার মুক্তির জন্য সরকার, লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস আর সাংবাদিকদের প্রতি আমি চিতকৃতজ্ঞ থাকমু।



মন্তব্য চালু নেই