অসমাপ্ত বক্তব্য দিতে সময় পেলেন খালেদা

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে খালেদা জিয়া তার অসমাপ্ত বক্তব্য দেয়ার জন্য প্রায় এক সপ্তাহ সময় পেয়েছেন। খালেদার অসমাপ্ত বক্তব্য দেয়ার জন্য ১৫ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদ্দার পুনঃবিবেচনার আবেদনটি মঞ্জুর করে এ দিন ধার্য করেন।

আজ বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে আদালতে উপস্থিত হন খালেদা। এদিন বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা অসমাপ্ত বক্তব্য মুলতবি রাখার জন্য সময়ের আবেদন জানান। আদালত প্রথমবার সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে। পুনরায় আবার পুনঃবিবেচনার আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে। ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে আদালত থেকে বের হন খালেদা।

সময়ের আবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) চ্যারিটেবল মামলার রাষ্ট্রপক্ষের ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য বাতিল করে পুনরায় নেয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। কিন্তু শুনানি শেষে আবেদনটি খারিজ করে দেয়া হয় । এই খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার খালেদা জিয়া হাইকোর্টে একটি রিভিশন আবেদন করেন। তা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। তাই আমরা খালেদা জিয়ার পক্ষে মামলাটির আত্মপক্ষের সমর্থনের অসমাপ্ত বক্তব্য মুলতবি রাখার জন্য সময়ের আবেদন দাখিল করেছি।

এর আগে, ১ ডিসেম্বর ঢাকার বকশীবাজারের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদ্দারের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত হন। এসময় বিচারক তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ও ৩২ সাক্ষীর জবানবন্দি পড়ে শোনান।

বিচারক বেগম খালেদা জিয়াকে সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি (খালেদা) নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন।

বিচারক তখন খালেদা জিয়ার কাছে মামলায় সাফাই সাক্ষীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলায় সাফাই সাক্ষী দেয়া হবে। পরে বিচারক আরও বলেন, আপনি (খালেদা) কী এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য দেবেন?

উত্তরে খালেদা জিয়া বলেন, হ্যাঁ, আমি বক্তব্য দেব। পরে বেগম খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে বলেন, দেশকে আজ কারাগার বানানো হয়েছে। সবখানে চলছে অস্থিরতা। মিথ্যা ও সাজানো মামলায় বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী এ মুহূর্তে কারাগারে বন্দি। বিএনপির প্রায় ৭৫ হাজার নেতাকর্মী বিভিন্ন মেয়াদে কারা ভোগ করছেন। দলের চার লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২৫ হাজারের মত মামলা করা হয়েছে।

নির্যাতন, হয়রানি ও গ্রেফতারের ভয়ে বহু নেতাকর্মী ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গুম, খুন, অপহরণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বিরোধী দলের অসংখ্য নেতাকর্মী।

এখন সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বড় বেশি বলা হয়। কিন্তু কোথায় আজ সাংবিধানিক শাসন। সংবিধান নাগরিকদের যে অধিকার দিয়েছে কোথায় আজ সে অধিকার। কোথায় আজ সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার।

বক্তব্যের পর বেগম খালেদা জিয়া বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলেন, আজ আর বক্তব্য দিতে চাই না। আত্মপক্ষ সমর্থনের কপিটা চাই। তখন বিচারক খালেদা জিয়ার আবেদন মঞ্জুর করে পরবর্তী বক্তব্যের জন্য ৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। মামলায় বিভিন্ন সময়ে ৩২ জন সাক্ষ্য দেন।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে তিন কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলা তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হারুন অর রশিদ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।

মামলার অপর আসামিরা হলেন, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী (পলাতক), হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।



মন্তব্য চালু নেই