‘অবরোধে ক্ষতি ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা’

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা ৫২ দিনের অবরোধে এখন পর্যন্ত দেশের প্রায় এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে সংসদকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা।

জাতীয় সংসদ ভবনে বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. মনিরুল ইসলামের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গত ৫ জানুয়ারি থেকে ৫২ দিন ধরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট হরতাল-অবরোধের নামে দেশে এক চরম নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছে। ক্ষমতার লিপ্সায় অন্ধ হয়ে তারা দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ, দেশের নিরপরাধ সাধারণ নারী-পুরুষ এমনকি নিষ্পাপ শিশুদেরও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। পেটের তাগিদে কাজ করতে বেরিয়ে বিগত ৫২ দিনে ১০১ জন মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। যাদের অধিকাংশ আগুনে পুড়ে মারা গেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পেট্রোলবোমাসহ নানা ধরনের নাশকতামূলক কাজে সহস্রাধিক ব্যক্তি মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। এক হাজার ১৭৩টি যানবাহন আগুনে পুড়ে গেছে ও ভাংচুর করা হয়েছে। ৬টি লঞ্চে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে, ২৫ দফায় ট্রেনে নাশকতা করা হয়েছে। এই ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবসা-বাণিজ্য, রফতানি ও অন্যান্যভাবে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশী আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট কেন এই নাশকতা করছে? তারা জানে ৫ জানুয়ারি ২০১৪ সালের নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ ৫ বছর কিন্তু তা সত্ত্বেও কেন এই নাশকতা? কেউ কেউ এই কার্যক্রমকে রাজনৈতিক কার্যক্রম বলতে চায়। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত পরস্পরের দোসর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে এ পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড, ২ জনকে আমৃত্যু কারাবাস, এক জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তদের মধ্যে মাত্র এক জনের রায় কার্যকর করা হয়েছে। বাদবাকিদের রায় আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কার্যকর করা হবে। এই রায়গুলোর বাস্তবায়ন বন্ধ করা তাদের অন্যতম উদ্দেশ্যে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ও তার পুত্রের দুর্নীতির ৯টি মামলা আদালতে বিচারাধীন। শুধুমাত্র জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের বিচার চলছে। এই মামলা বিলম্বিত করার জন্য নানা রকম কারণ দেখিয়ে মামলায় বার বার সময় নেওয়া হয়েছে। এই মামলার সাজা থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট নাশকতার কাজ করছে।’

চলমান নাশকতাকে প্রচলিত আইনে মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার উপযোগী অপরাধ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিএনপি নেত্রীকে বলতে চাই এ দেশের মানুষ অত্যন্ত বুদ্ধিমান। তারা আপনার ব্যক্তি স্বার্থের আন্দোলনে নেই। আপনার নেতা-কর্মীরা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। যদি নাশকতা ও হত্যা বন্ধ না হয় তবে সরকার সংশ্লিষ্ট সকলের বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। তাই আমার অনুরোধ বন্ধ করুন এই হত্যাকাণ্ড, বন্ধ করুন এই সন্ত্রাস।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘নিজের (খালেদা জিয়া) নাতি-নাতনি সন্তানের শিক্ষা ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সাধারণ নিষ্পাপ কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার এ প্রক্রিয়া আর চলতে দেওয়া যায় না। দেশের প্রায় ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীর ভাগ্য নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। শুধুমাত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে না দেওয়ার জন্য প্রতি কর্ম দিবসে হরতাল দেওয়া হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, গোষ্ঠি, অর্থায়নকারী বা পরিকল্পনাকারীদের কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত তথ্যাদি সংগ্রহের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে। প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এ ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণসহ গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে। এছাড়া সকল প্রকার জঙ্গি, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ওয়ারেন্টভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ নিয়মিত মামলার আসামি গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং মাদকদ্রব্যসহ সকল ধরণের অবৈধ মালামাল উদ্ধারের জন্য পুলিশের নিয়মিত অভিযান ও আইনানুগ অভিযান এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে।’



মন্তব্য চালু নেই