‘অধিকার হরণ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না’

বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। বৈশ্বিক এই জোটের মতে, বাংলাদেশের উন্নয়নের পথ সুগম করতে ‘এখনই সহিংসতা’ বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার হরণ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না। মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে হবে। রাজনৈতিক সঙ্কট দুর করতে হবে। বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য প্রকাশ করে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ক্রিস্টিয়ান ডেন প্রেদার নেতৃত্বে গত ১৬ ডিসেম্বর পাঁচ সদস্যের একটি দল বাংলাদেশ সফরে আসে।

গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় ক্রিস্টিয়ান ডেন প্রেদা বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা মানবাধিকার পরিস্থিতি দেখতে এসেছি। বাংলাদেশকে আমরা আমাদের শক্তিশালী বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই। বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে বাংলাদেশকে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে হবে।’

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় বলা হয়, প্রতিনিধি দলটি সরকার, বিরোধী দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা সবাই বলেছে, এখনই সহিংসতা বন্ধ করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের নাগরিক সমাজসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সকলেই বলছে, রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান করতে হবে।

বিচার বহির্ভূত হত্যা সম্পর্কে বার্তায় বলা হয়, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নেওয়া পদক্ষেপ অনুযায়ী, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের প্রতি আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনার পর, সফরকারী দলটি বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার হরণ করে কখনোই শান্তি এবং স্থিতিশীলতা আসবে না। বহুদলীয় ও গতিশীল গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত হচ্ছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা।

সরকারের ফরেন ডোনেশন এ্যাক্ট সংশোধন প্রসঙ্গে বার্তায় বলা হয়, প্রতিনিধি দল বিশ্বাস করে, পিছিয়ে পড়া জনগণ, গণতন্ত্র এবং সমাজের উন্নয়নে যে নাগরিক সমাজ কাজ করে, সরকারের প্রস্তাবিত আইন সংশোধনে তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। এই আইন সংশোধনের মাধ্যমে উন্নয়নকর্মীরা তাদের কাজ চালিয়ে নেওয়ার মতো পরিবেশ পাবে, এমনটিই চায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।

নারী, শিশু, পাহাড়ি ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অধিকারের বিষয়ে বার্তায় বলা হয়, প্রতিনিধি দল নারী ও শিশু অধিকারের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলাপ করেছেন। প্রতিনিধি দল বিশ্বাস করে, সরকার চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়ন করবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে কাজ করবে। সরকারের সঙ্গে বৈঠকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা বলেছে, তারা যে কোনো ধরনের মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী।

এদিকে চলমান সহিংসতা কবে এবং কীভাবে শেষ হবে, বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিরা গত বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি জানতে চায়। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ‘তারা (ইউরোপীয় পার্লামেন্ট) জানতে চেয়েছেন, বর্তমান সহিংসতা কবে শেষ হবে। কীভাবে শেষ হবে।’

জানা গেছে, সফররত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের একাধিক মন্ত্রী, জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, দেশী-বিদেশী উন্নয়ন কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

ক্রিস্টিয়ান ডেন প্রেদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফররত প্রতিনিধি দলের বাকি দুই সদস্য হচ্ছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ক্যারোল কারস্কী ও জোসেফ ওয়াইডেনজার।



মন্তব্য চালু নেই