সজনের ডাঁটা বাংলার ঐতিহ্যবাহী পুষ্টি ও ঔষধি গুনসমৃদ্ধ

রাণীনগরে সজনে ডাঁটা বিক্রি করে কৃষকের বাড়তি আয়

বসতবাড়ির আশেপাশে অনাদরে অবহেলায় বেড়ে ওঠা সজনে এখন আর ফেলনা নয়। সজনের ডাঁটা বাংলার ঐতিহ্যবাহী পুষ্টি ও ঔষধি গুনসমৃদ্ধ। কিন্তু আসলে এটা একটা ফল। এই শজনের ফুল-পাতা-ডাঁটা সবটাই খাওয়া যায়। সবকিছুতেই রয়েছে সমান পুষ্টিকর। মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদার রয়েছে সজনেতে। গ্রীষ্মকালে রুদ্র প্রকৃতিতে দেখা দেয় নানা রোগ। জলবসস্ত,ডায়রিয়া,লিভার জনিত রোগ প্রতিরোধ করে সজনে। সজনেতে ব্যাপক চাহিদা থাকায় রাণীনগরের কৃষকরা এখন পতিত জমিতে পরিকল্পিতভাবে সজনের চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ৩-৫টি করে সজনের গাছ রয়েছে। সজনের ডাঁটা বিক্রি করে প্রতিবছর বাড়তি আয় করে থাকেন এলাকার কৃষকরা। অধিক মুনাফা লাভের আশায় অনেকেই আবার সজনে বাণিজ্যিক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন মর্মে খবর মিলছে।

জানা গেছে, আগে কৃষকরা বসতবাড়ির আশপাশে নিজেদের খাওয়ার জন্য সজনে গাছ রোপণ করতেন। অযতœ অবহেলায় বেড়ে উঠত। নিজেদের চাহিদা মিটালেই তা যথেষ্ট মনে করা হতো। কিন্তু এখন অবস্থা ভিন্ন। সজনে এখন দামি ভেষজ সবজির স্থান লাভ করেছে। মৌসুমের শুরুতেই সজনের ডাঁটা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় ।

কৃষকরা জানান, গত কয়েক বছর সজনের ব্যাপক চাহিদা থাকায় তারা বসতবাড়ির আশপাশে ও ক্ষেতের আইলে সজনে গাছ রোপন করছেন। অন্য সবজি বিক্রি করতে বাজারে গিয়ে বসে থাকতে হলেও ব্যাপারিরা বাড়িতে এসে চড়া দামে শজনে কিনে নিয়ে যায়। পরে সেগুলো ব্যাপারিরা ঢাকাসহ বরিশাল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা, নড়াইল, ঝিনাইদাহ, যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় চালান করেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগে সজনে সম্পর্কিত কোন তথ্য নেই। র্সশ্লিষ্ট দফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা (তথ্য) মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, তার মতে উপজেলার বিভিন্ন সড়ক, বাগান ও বাড়িতে নাগানো মোট সজনে গাছের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এস,এম গোলাম সারোয়ার জানান, একটি গাছে ২০ কেজি পর্যন্ত শজনে ধরে থাকে। সজনে গাছ একাধারে ২০ বছর ফল দেয়। তার মতে প্রতি গাছে গড়ে ৩০ কেজি ফলন ধরা যেতে পারে। সে হিসাবে এ বছর উপজেলায় প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার কেজি শজনে উৎপাদন হবে। ৩০ টাকা কেজি হিসাব করলে ১কোটি ৩৫ হাজার টাকার সজনে বিক্রি হবে। সবজি হিসাবে অত্যন্ত পুষ্টিকর এসব শজনে ডাঁটা গ্রামের লোকজন তাদের খাবার চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় হাট-হাটবাজারগুলোয় বিক্রি করে বাড়তি আয় করছে।

তাছাড়াও বসন্তের শুরুতে সজনে গাছ ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। ফাল্গুনের শেষ ও চৈত্রের শুরুতেই কঁচি সজনের ডাঁটা খাওয়ার উপযোগী হয়ে পড়ে। সাধারণ শাখা কেটে রোপন করার মাধ্যমেই সজনের বংশবিস্তার করা হয়। রোপনের এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গাছ থেকে সজনে সংগ্রহ করা যায়। সজনের ডাঁটার পাশাপাশি ফুল ও পাতাও সবজি হিসেবে উপাদেয় এবং জনপ্রিয়। সজনে সবজি হিসেবে যেমন উপাদেয়, এর ভেষজগুন ও তেমন অসাধারণ। মওসুমি নানা রোগব্যাধির নিরাময় ও শরীরে এসব রোগের প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধিতে অত্যন্ত কার্যকর। বিশেষ করে বসন্ত, জন্ডিস, মুত্রসংক্রান্ত সমস্যায় প্রাচীনকাল থেকে সজনে নানা অংশে ব্যবহার করে আসছেন ইউনানি ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা।



মন্তব্য চালু নেই