ভুল তদন্তে প্রসিকিউটরকে বিচারপতিদের ভৎসনা

একই অভিযোগে পূর্বে সাজা হলেও নতুন করে তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের মুখোমুখি করায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইয়েদুর রহমানকে বিভিন্নভাবে ভৎসনা করেছেন ট্রাইব্যুনাল বিচারপতিরা। একইসঙ্গে এমন ভুল আগে (অন্য মামলায়) কখনো ঘটেছে কি না তা নিয়েও তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

মঙ্গলবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুর পক্ষে তদন্ত কর্মকর্তা আলতাফ হোসেনের জেরা চলাকালে চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ এ মন্তব্য করেন।

এ সময় উপস্থিত থেকে তদন্ত কর্মকর্তা আলতাফ হোসেনকে জেরা করছিলেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর সাইয়েদুর রহমান।

জেরা চলাকালে আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার বলেন, ‘আসামি মাহিদুর রহমান ও আফসার হোসেন চুটুসহ আরো কয়েকজন মুক্তিযুদ্ধকালীন সংগঠিত অপরাধের মামলায় ১৯৭২ সালে সাজাপ্রাপ্ত হয়। কলাবেরটরস স্পোশাল ট্রাইব্যুনাল অর্ডার ১৯৭২ এর অধীনে তাদের বিরুদ্ধে ১১(ক) ধারায় বিচার করা হয়। এছাড়াও দণ্ডবিধির ৩৬৪/৩০২/১০৯ ধারা মোতাবেক তাদেরকে শাস্তি প্রদান করা হয়। আদালতের রায়ে মাহিদুর রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বাকিদেরকে বেকসুর খালাশ প্রদান করা হয়। পরে মাহিদুর রহমান তার সাজার বিরুদ্ধে এবং সরকারপক্ষের আইনজীবীরা বাকিদের সাজা চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক দুটি আপিল করেন। হাইকোর্ট আপিল দুটি একসঙ্গে শুনে আসামি মাহিদুর রহমানের যাবজ্জীবন সাজা বহাল রাখেন এবং সরকারপক্ষের আপিল বাতিল ঘোষণা করেন। পরে একই অভিযোগে তদন্ত কর্মকর্তা এবং প্রসিকিউটররা আসামি মাহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে।’

এসময় চেয়ারম্যান বিচারপতি প্রসিকিউটর সাইয়েদুর রহমানের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা এটা কি তদন্ত করে এনেছেন? বিচারকে (আসামিদেরকে) কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে কেন সকল সুবিধা দেবেন না? আমাদের মনে রিজনেবল ডাউট (যুক্তিযুক্ত সন্দেহ) হচ্ছে এর আগে অন্য মামলায় এমন ভুল হয়েছে কি না? আপনাদের (প্রসিকিউটরদের) কনডাক্ট (আচরণ) প্রমাণ করে তদন্ত অসম্পূর্ণ।’

পরে ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতিসহ অন্য বিচারপতিরা (বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান এবং বিচারপতি শাহিনুর রহমান) বলেন, এমন অভিযোগে আসামিদের মৃত্যুদণ্ড সাজা হতে পারে। আপনারা (প্রসিকিউটররা) কেন আগে আমাদেরকে এসব জানাননি?

এসময় বিচারপতিদের এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে প্রসিকিউটর সাইয়েদুল ইসলাম তাদেরকে বিষয়টি বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যার্থ হন।

পরে আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তার জেরা সম্পন্নের জন্য আগামী ৫ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করেন।

উল্লেখ্য, একই মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামিদেরকে পুনরায় বিচারের কোনো বিধান আইনে নেই। তবে পূর্বে সাজা পাওয়া এ আসামিদেরকে এমন অভিযোগে ট্রাইব্যুনালের বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে, যার জন্য প্রসিকিউশন কোনো সাক্ষীও ট্রাইব্যুনালে হাজির করেনি। তাই আসামিপক্ষ সেই সাক্ষীকে জেরা করা থেকে বঞ্চিত হয়। অথচ আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত এমন অভিযোগের কারণে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই