বিবিসির সাক্ষাতকারে যা বললেন ইলিয়াস কাঞ্চন

দেশে চলমান অবরোধে প্রতিদিনই ঘটছে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপসহ নানান সহিংস ঘটনা। এ অবস্থায় পেট্রোলবোমা হামলাকারীসহ নাশকতা সৃষ্টিকারীদেরকে ধরিয়ে দিতে ১ লক্ষ টাকা করে পুরস্কার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। টানা অবরোধ, হরতাল, সহিংসতার প্রভাব শিল্প-সংস্কৃতির জগতে কিভাবে পড়েছে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে কি ভাবছে শিল্পীসমাজ এসব বিষয়ে বিবিসির পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বিবিসিকে বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি দেশের কোন মানুষেরই কাম্য নয়। যদিও যারা রাজনীতি করছে তাদের জন্য এটা কাম্য কিন্তু রাজনীতি ছাড়া যে সমস্ত মানুষ আছে তারা যে অঙ্গনেরই হোক না কেন তাদের কাছে কিন্তু এটা কাম্য না। আমরা অত্যন্ত কষ্ট পাচ্ছি, সাধারন মানুষ ঠিকমত চলাফেরা করতে পারছেনা। বিশেষ করে যখন দেখি যে দেশের সাধারন মানুষ পুড়ে মারা যাচ্ছে। কখন কে ঝলসে যাবে এমন একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটছে। আমরা শিল্পীরা অনেক স্পর্শকাতর হয়ে থাকি, আর এজন্য অন্যান্যদের তুলনায় এ বিষয়গুলো আমাদের খুব বেশি স্পর্শ করে।

শিল্পীসমাজের কাজে দেশের চলমান পরিস্থিতির প্রভাব কতটা পড়ছে ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদি মানুষ বাইরে বের হতে না পারে তাহলে সিনেমা হলে যাবে কি করে। এর মাঝে যদি আমার শ্যুটিং থাকে আমি কিভাবে যাব। এখন শ্যুটিংয়ে যদি গানের সিক্যুয়েল থাকে তবে সেখানে আমাদের গান গাইতে হবে, নাচতে হবে।

তখন এক পক্ষ বলতে পারে আমরা মারা যাচ্ছি আর আপনারা নাচ গান করছেন। অর্থাৎ, আমরা দুপক্ষ থেকেই চাপে থাকছি। এর সাথে আমাদের মতামতের স্বাধীনতা নেই। গ্রাম বাংলায় একটা কথা আছে ‘উচিৎ কথায় কুটুম বেজাড়’। দেশে উচিৎ কথায় যে কুটুম এতোটা বেজাড় হয় তা আমার আগে জানা ছিল না।

এ থেকে উত্তরনের রাস্তা খুব একটা দেখেননা এই অভিনেতা। তিনি বলেন, আমি ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর আন্দোলন করছি। এর দাবিগুলো ২২ বছর যাবত অপূর্নই রয়ে গেছে। আমিও ভয় পেয়ে যাই এটা ভেবে, যে দেশে কি ভাল মানুষের জন্য রাজনীতির দ্বার খোলা আছে ?

বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে শিল্পীসমাজ কি ভাবছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন যে পরিস্থিতি চলছে আমি এটাকে যুদ্ধ বলব, কারণ একদল বলছে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার কথা আর এক দল বলছে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য তারা এ কাজগুলো করছে। এটাকে গণতন্ত্র বলেনা। গণতন্ত্রের অনেকগুলো ধাপ আছে, শাখা আছে। সে জায়গাগুলো যদি ঠিক না হয় তাহলে গণতন্ত্র আর গণতন্ত্র থাকে না।

দেশের মালিক জনগণ। সকল ক্ষমতার অধিকারী জনগণ। কিন্তু আমাদের কি ক্ষমতা আছে ? ন্যায় বিচার যদি প্রতিষ্ঠিত হত, রাজনৈতিক নেতারা যদি জনগণের সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করত তাহলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না। আজকে রাজনীতি নিয়ে এত সহিংসতা কেন ? এর কারণ হল রাজনীতিতে যখন ক্ষমতায় থাকা যায় তখন যে ভোগ, ক্ষমতা, শক্তি অর্জন, অর্থ উপার্জন হয় এই লোভ কেউ ছাড়তে রাজি নয়।

আর এই দুটি রাজনৈতিক দলই কিন্তু এসব পরপর ভোগ করেছে। আর ভোগ করেছে বলেই তারা এর মজাটা জানে। আর এই ক্ষমতার মজার জন্যই তারা কেউ ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নয়, ক্ষমতার বাইরে থাকতে কেউ রাজি নয়। বিবিসি



মন্তব্য চালু নেই