জীবিত থাকলে অনেক কষ্ট পেতেন বঙ্গবন্ধু!

মহান স্বাধীনতাসহ অনেক অমর কীর্তিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন পেয়েছেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীর উপাধি, তেমনি বাকশাল গঠনসহ অনেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে হয়েছেন কঠোর সমাচোলনার সম্মুখিন।

মৃত্যুর ৪০ বছর পর আজও চলছে তার কর্মের প্রশংসা আর আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়ে হাজারো বিতর্ক থাকলেও বঙ্গবন্ধুর অবদানকে বাঙালি জাতি যেমন কোনো দিন অস্বীকার করতে পারবে না, তেমনি তাঁকে কোনো দিন ভুলতেও পারবে না।

সেদিক থেকে বলা যায়, বঙ্গবন্ধুর সাথে আমাদের জাতিসত্তার সম্পর্কের ব্যাপ্তি অনেক গভীরে । তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে শেষ দিনটি পর্যন্ত তিনি যা কিছুই করেছেন তা বাঙালি জাতির মুক্তি ও সামগ্রিক কল্যাণের জন্যই হয়তো করার চেষ্টা করেছেন। তবে এই দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের কোনো কোনো সিদ্ধান্ত, পদক্ষেপ ও কৌশল সময়ের বিবেচনায় জনগণের পক্ষে যায়নি। ফলে আমাদের অনেকেরই তা মনঃপুত হয়নি। আমরা কেউ কেউ সেসবের বিরোধিতাও করছি। তার মানে এই নয় যে, তাকে অবজ্ঞা করা কিংবা তার সব মঙ্গলাকাঙ্ক্ষাকে অস্বীকার করা। তাঁর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ৪০তম বার্ষিকীতে আজ ২০১৫ সালে দাঁড়িয়ে আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি, তাদের কেউ কেউ যে কখনোই তাঁর কোনো অবস্থানের সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারবো না এমন চিন্তা্ও সঠিক নয়।

এমনটি যারা ভাবেন তারা সত্যিকার অর্থে বঙ্গবন্ধুর চেতনার পক্ষের লোক নন। কেননা, বঙ্গবন্ধু তার জীবদ্দশায় কেউ তাঁর ভুল ধরিয়ে দিলে খুশি হতেন। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো- ওই সময়টাতে (৭৪-৭৫) চাটুকর লোকেরা তাকে ঘিরে রেখেছিল। তাই আমাদের জাতিসত্তার অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি যেমন স্বতঃস্ফূর্ত, তেমনি তাঁর কোনো অবস্থানের সাথে দ্বিমত পোষণের অধিকার সংরক্ষিত থাকাও বাঞ্চনীয়। সেই অধিকারটুকু না থাকলে আমরা সবাই স্বার্থান্বেষী চাটুকারে পরিণত হই। তবে আমাদের সম্পর্কের অবস্থানটি হতে হবে মৌলিক, পারস্পরিক স্বীকৃতির ভিত্তিতে। সেই সংরক্ষিত অধিকার থেকেই আজ এখানে কিছু কথা তুলে ধরতে চাই।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেই সোনার বাংলাদেশ আজ অনেক দূর এগিয়েছে ঠিকই তবে অনেকক্ষেত্রে ৭৫ কেও যে হার মানিয়েছে এতেও কারো কোনো সন্দেহ থাকার কথা নয়। তাই আজ ২০১৫ সালে সেই বেদনাময় মাসের প্রথমার্ধে দাঁড়িয়ে কেন জানি মনে হচ্ছে- আজ যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবিত থাকতেন তবে নিজ কন্যার রাজনৈতিক সফলতা দেখে যেমন খুশিতে আত্মহারা হতেন, তেমনি কন্যার রাজনৈতিক দৈন্যতা দেখে অনেক কষ্ট পেতেন। কেন কষ্ট পেতেন? এরকম শত কারণ রয়েছে। এরমধ্যে দু-চারটি এখানে উল্লেখ করছি।

এক. আমরা জানি, ১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ১০৭ ডলার। এতে সহজেই বুঝা যায়, সে সময়কার আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার কতটা করুণ পরিস্থিতি ছিল। সেই যুদ্ধ বিধ্বস্ত হতদরিদ্র দেশের আজ অনেক উন্নয়ন হয়েছে। দরিদ্র দেশ থেকে আমরা হয়েছি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ। এখন আমরা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ উন্নত দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি। সত্যিই এটি আমাদের জাতির জন্য একটি আত্মস্লাগার সংবাদ। ফলে আজ যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবিত থাকতেন তবে দেশের এই অভুতপূর্ব সাফল্য আর নিজ কন্যার কারিশমা দেখে সত্যিই তিনি খুশিতে আত্মহারা হতেন।

দুই. যতদূর জানি, তাতে ১৯৬৬ সালের ৬ দফার চেতনার ভিত্তিতেই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা তথা শোষণ-নিপীড়ন থেকে মুক্ত করতে সত্যিকারের একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান । আর সেই ভিত্তিতেই সদ্য স্বাধীন দেশ গড়ার প্রচেষ্টায় যখন মনোযোগ দেন তখনকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি বিশেষ শ্রেণী (ইনু-মেনন ভাইদের অগ্রজপ্রতীম বাম- সিরাজি শিকদার আর কর্নেল তাহেররা) তাকে বেশিদূর এগুতে দেয়নি। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই তাকে নাজেহাল করার চেষ্টা করে।তখনকার পরিস্থিতি মুজিবের জন্য এতটাই অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে, একপর্যায়ে রক্ত-মাংসে মানসপটে মিশে থাকা গণতন্ত্রের চেতনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় সব দল বিলুপ্ত করে দিয়ে তাকে বাকশালের মতো একটি এক দলীয় শাসনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছিল। বাধ্য করেছিল মুক্তিকামী জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতীক ক্যারিসম্যাটিক নেতা থেকে একনায়কতন্ত্রের নেতা সাজতে।এরপরও ওরদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পাননি তিনি।

সেই সময়কার কথা ওরা জীবিত মুজিবকে একদিন্ও শান্তিতে থাকতে দেয়নি। এমন কী মৃত মুজিবকেও নয়। ওই সময় তথা ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের খলনায়ক কারা ছিল, কাদের ষড়যন্ত্র আর কর্মকাণ্ডের ফসল ছিল ১৫ আগস্টের ইতিহাসের নির্মম এই ঘটনা, তা অবশ্য এদেশের ৫০ উধ্র্বের বয়সের প্রায় সব মানুষেরই জানা থাকার কথা। ফলে এ বিষয়ে এখানে আলোচনা করে পাঠকের বিরক্তি ঘটাতে চাই না।

তবে গ্রাম বাংলায় বহুল প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে- ‘পিতৃ হন্তাকে মানুষ ভুলতে পারে, কিন্তু সম্পদ আত্মসাৎকারীকে কোনো দিন ভুলতে পারে না। যেই গণতন্ত্রের চেতনায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন সেখানে আজ গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে চলছে ভাগাভাগির ভিত্তিতে ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতি। সেখানে যোগ দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর চরম শত্রুরা। যারা জীবিত এবং মৃত উভয় মুজিবকে অবর্ণনীয় কষ্ট দিয়েছেন। যার সাক্ষী আমাদের আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও।

কিন্তু ক্ষমতার স্বাদ যেন সবকিছু ভুলিয়ে দিয়েছে। হায়রে ক্ষমতা! তুমি এতো প্রিয়, এতো লোভনীয় শক্তিধর- তুমি আমাদের পিতৃ হন্তাকেও ভোলাতে পার! স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, মতিয়া চৌধুরীসহ আরো অনেক বাম নেতাদের কী ভূমিকা ছিল, জীবিত-মৃত বঙ্গবন্ধুর সাথে তাদের সম্পর্ক-মন্তব্যের কথা ইতোপূর্বে এক কলামে উল্লেখ করেছিলাম।ফলে এখানে আর পুনরোল্লেখ করতে চাই না।

তাই আজ বারবার মনে পড়ছে বঙ্গবন্ধু, তার পরিবারের সদস্য ও সহযোগীদের কথা, যারা বৈষম্য-শোষণহীন সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টায় জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। যারা স্বপ্ন দেখতেন একটি বৈষম্যহীন সমাজের। যারা জীবন উৎসর্গ করে গেছেন রাষ্ট্র-জনগণের সেবায়।সত্যিই বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহযোগীরা যদি আজ বেঁচে থাকতেন তবে- জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতক তথা নিজেদের শত্রুদের সাথে নিজ কন্যা-সন্তানদের এমন মধুর আঁতাতের রাজনীতি দেখে সত্যিই কষ্ট পেতেন।

তিন. বঙ্গবন্ধু অহিংস রাজনীতির স্লোগান নিয়ে যে দেশ স্বাধীন করেছিলেন আজ সেই বাংলাদেশের রাজনীতি হিংসতায় বিষাক্ত । বিষাক্ত রাজনীতির স্পর্শে সমাজে দুর্বৃত্তায়ন ঘটেছে। সারাদেশে অব্যাহত নৃশংস, নিষ্ঠুর, বর্বরোচিত হত্যা-খুন, বিশেষ করে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা যেন অতীতের সব রেকর্ডকেও হার মানিয়েছে । আজ সমাজে নাগরিকদের বিশেষ করে নারী ও শিশুর জীবনের নিরাপত্তা এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে গেছে যে, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে মায়ের গর্ভের শিশুরাও নিরাপদ নয়। আর গণতন্ত্রের নামে রাষ্ট্র কিংবা নিজ দলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যে নাটক মঞ্চস্থ করা হচ্ছে তা যদি বঙ্গবন্ধু আজ নিজ চোখে দেখতেন তাহলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস তিনি নিজের চোখের জল ধরে রাখতে পারতেন না।

চার. সদ্য প্রয়াত কাজ পাগল সজ্জন ব্যক্তিত্ব ভারতের রাষ্ট্রপতি এপিজে আব্দুল কালাম- এক সময় বক্তৃতা করতে গিয়ে বলেছিলেন, আমার ইন্তেকালের পর যেন রাষ্ট্রীয় শোক পালনের জন্য কোন ছুটি ঘোষণা করা না হয়, বরং তার বিপরীতে যেন একদিন অতিরিক্ত কাজ করা হয়। আমার যতদূর বোধগম্য হয়- বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনার এর বাইরে হবার কথা নয়।

এরপরও যেহেতু বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারকে নিষ্ঠুরতম কায়দায় হত্যা করা হয়েছে সেহেতু জাতীয়ভাবে একদিন শোকদিবস পালন যৌক্তিক সিদ্ধান্ত হতে পারে। এতে কারো কোনো প্রশ্ন থাকার কথা নয়। সেটা গেল কয়েক বছর থেকে পালন করেও আসছে জাতি। কিন্তু এবার শোকদিবসে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এবার আওয়ামী লীগ শোকদিবস উপলক্ষ্যে ৪০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বত্রই আ্ওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মিদের নামে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে।

জানি না, তা কতটুকু সত্য কিংবা মিথ্যা, তবে এ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া্ও দলীয় নেতাকর্মিদের কর্মকাণ্ডে এমন পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে যাতে শোকের মাসে আমরা শোকের আবহাওয়া অবলোকন করতে পারছি কদাচিত। বরং বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে অনেকেই সুবিধা লুটার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। সবেমিলেই বঙ্গবন্ধুকে আজ দলীয় গণ্ডিতে আবব্ধ করে ফেলা হয়েছে।

একজন মহান নেতাকে আমরা ব্যক্তি ও দলের স্বার্থে একটি নির্দিষ্ট গণ্ডিতে আবদ্ধ করে ফেলে তাকে খাটু করছি । এই শোক দিবস হতে পারতো সবার জন্য। কিন্তু জাতি আজ এ বিষয়েও বিভক্ত। এখানেই আমাদের জাতির দুর্ভাগ্য। এখানে একটি ঘটনা না উল্লেখ না করলেই নয়-

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি পড়ে সত্যিই হতচকিত হয়েছি।‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আগস্টের প্রথম দিনেই তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে অবিশ্বাস্য কাণ্ডের জন্ম দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও মন্ত্রীরা।শোকের মাসের প্রথম দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে রাজধানী ঢাকা থেকে যাওয়া-আসার পথে মোশাররফ করিম অভিনীত হাসির নাটক দেখে, পুরনো দিনের গান শুনে, খোশগল্প করে ও দন্তবিকশিত হাসির সেলফি তুলেছেন তারা।ওইসব সেলফি ফেসবুক স্ট্যাটাস আকারে পোস্টও করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে আওয়ামী লীগের শোকযাত্রায় অংশ নেয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার ফেসবুক পেইজে কয়েকটি সেলফি পোস্ট করেছেন। যাতে তিনি ও অপু উকিলসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের হাসতে দেখা গেছে।’ পত্রিকায় এমন প্রতিবেদন দেখে সত্যিই বিস্মিত হয়েছি। জানি না তা কতটুকু সত্য, ঘটনাটি যদি সত্য হয়ে থাকে, তবে বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মার সাথে এর চেয়ে বড় প্রতারণা আর কিছুই হতে পারে না।

পাঁচ. গেল ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১১:১৫ মিনিটে এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন- ‘জন্মদিন পালন করা কি বাধ্যতামূলক…? আজ ছিলো বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আমার শুভেচ্ছা রইলো।পাশাপাশি আমার একটি প্রশ্ন রইলো সবার কাছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন করা কি বাধ্যতামূলক করেছে সরকার?

যদি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন করা বাধ্যতামূলক করে থাকে, তাহলে আমি অপরাধী কারণ এটা আমার জানা উচিৎ ছিলো! আর যদি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন করা বাধ্যতামূলক না করে তাকে সরকার, তাহলে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে আজকের এই ছুটিতে আমি যদি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ না রাখি এটা কি আমার অপরাধ?’

‘প্রসঙ্গত গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী আরামবাগ ফকিরাপুল এসে বলে আগামীকাল মানে আজ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে প্রেস সহ সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। যাদের কাজের প্রেশার কম তারা বঙ্গবন্ধুর সম্মানে হউক আর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হুমকির কারনে হউক তারা বন্ধ রেখেছে। আর আমার মত যাদের কাজের অতিরিক্ত প্রেশার তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হুমকি মাথায় রেখে আজ প্রেস সহ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রেখেছে।’

‘সবকিছুই ঠিকঠাক ছিলো, কিন্তু দুপুরের পর হঠাৎ কিছু ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এসে কয়েকটা প্রেস ভাঙচুর ও প্রেস মালিককে মারধর করে। তাইতো স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে মন চায়- বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালন করা কি বাধ্যতামূলক…?

ওই ব্যক্তির এমন আকুতি দেখে আজ মনে পড়ে গেল- কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম এবং স্বাধীন বাংলা ছাত্রলীগ সমন্বয় পরিষদ নেতা ও ‘প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশন’ নামক নতুন সংগঠনের আহ্বায়ক নূর-ই আলম সিদ্দিকীর কথা। সম্প্রতি নূর-ই আলম এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘দেশের রাজনীতি এখন ক্ষমতা ও সম্পদের ভাগবাটোয়ারার দর্শনকে কেন্দ্র করে এগিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে ভাগবাটোয়ারার এ রাজনীতি দেখে লজ্জা পেতেন। তিনি বলেন, নব্য আওয়ামী লীগাররা ছাত্রলীগের মধ্যে কৌশলে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটিয়ে সংগঠনটিকে ধ্বংস করে দেয়ার অপতৎরতায় মেতে উঠেছে। ছাত্রলীগকে আদর্শশূন্য করার জন্যই তারা এ তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে ‘ইনু ও মতিয়ার মত লোকগুলো যারা বঙ্গবন্ধুকে গালাগালি করে সকাল শুরু করেছে, সেই ইনু-মতিয়ারা আজ আমার বোন হাসিনার সবচেয়ে বড় চামচা। জননেত্রী হাসিনার আর যাই হোক এটা সবচেয়ে বড় সাফল্য, যে পিতার এতবড় বিরোধীতাকারীদের আজ তিনি সবচেয়ে বড় চামচায় পরিণত করতে পেরেছেন। এজন্য জননেত্রীকে নোবেল কমিটির পক্ষ থেকে নোবেল পদক দেওয়া উচিত।’

তাই সরকারের নীতিনির্ধারক ও আওয়ামী লীগের হর্তাকর্তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ রেখে বলবো- দয়া করে বঙ্গবন্ধুকে দলীয় সম্পদ মনে না করে দলীয় গণ্ডির বাইরে রাখার চেষ্টা করুন। সত্যিকার অর্থেই যদি আপনারা বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসেন তবে তাঁর সেই গণতান্ত্রিক চেতনা-আদর্শকে বাস্তবায়নে নিজেদের প্রমাণ করুন। যাদের ষড়যন্ত্রে ৭৫ এ গণতন্ত্র নির্বাসনে গিয়েছিল, যাদের সহযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা এমন একটি নৃশংস ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল, যারা বঙ্গবন্ধুর চিরশত্রু ছিলেন, তাদের সাথে আঁতাতের রাজনীতি কখনো বঙ্গবন্ধুর চেতনা হতে পারে না। প্লিজ, বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মাকে আর কষ্ট দিবেন না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এবিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতানেত্রীদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। সবশেষে, এই শোকের মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা-ভালবাসা জানিয়ে এবং তাঁর বিদেহী আত্মার সর্বোচ্চ মর্যাদা-শান্তি কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি।

লেখক:

ড. সরদার এম. আনিছুর রহমান

গবেষক ও কলাম লেখক



মন্তব্য চালু নেই